কাঁটাতার পেরিয়ে রোহিঙ্গাদের ইদ

মায়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বয়ে গিয়েছে ন্যাফ নদী। শেষ সম্বলটুকু নিয়ে এই পথেও বাংলাদেশে ঢুকছেন শরণার্থীরা। নদীর পাড়ে তাঁবু খাঁটিয়ে থাকছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরে আশ্রয় নিচ্ছেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইয়াঙ্গন ও ঢাকা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪১
Share:

এক দিন আগেও জানা ছিল না, ইদের প্রার্থনাটা আর করা হবে কি না। কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে এসে নমাজ পড়লেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম। রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবি, সংখ্যাটা হাজার দশেকেরও বেশি। কেউ কাঠের নৌকা জোগাড় করে, তো কেউ স্রেফ পায়ে হেঁটেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বন্দুকের নল উপেক্ষা করে ঢুকে পড়েছেন বাংলাদেশে। উৎসবের দিনে কান্নাভেজা গলায় তাঁদেরই মধ্যে এক শরণার্থী বললেন, ‘‘এগোলেও মৃত্যু, পিছলেও। এগনোই ভাল।’’

Advertisement

এই শরণার্থীরাই জানাচ্ছেন, গত ক’দিনে পরিস্থিতি ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। সংঘর্ষের আগুনে পুড়ে খাক মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের গ্রামকে গ্রাম। নিহত কমপক্ষে ৪০০ জন। সেনার বক্তব্য, নিহতরা সকলেই জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত ছিল। মায়ানমার সরকারও বলছে, ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা) নামে জঙ্গি গোষ্ঠীই সাধারণ মানুষের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। যদিও শরণার্থীদের মুখে শোনা যাচ্ছে অন্য কাহিনি। তাঁরা বলছে, মায়ানমার থেকে তাঁদের তাড়াতে সেনাবাহিনীই এ সব করছে।

‘‘ও দেশে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে এসেছি। কী করব...,’’ আকুল আর্তনাদ এক শরণার্থীর। নাম জিজ্ঞাসা করায় ভয়ে ভয়ে জানালেন ‘করিম’। আরও জানালেন, উপকূলীয় শহর মংদওয়ের কাছে তাঁদের কুন্নাপারা গ্রাম। মায়ানমার সেনা গ্রামের ১১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। আর অপেক্ষা করেননি করিম। ১২ হাজার বাংলাদেশি টাকার বিনিময়ে একটা কাঠের নৌকা জোগাড় করে পালিয়ে এসেছেন। ‘‘পরিবারে রয়েছে আট দিনের সদ্যোজাত শিশু, আবার ১০৫ বছরের বৃদ্ধাও... কী ভাবে যে পালিয়েছি! সেনারা ধরে-ধরে মারছে, আর বাড়িঘর-দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে টেক্সাসের, দাবি গভর্নরের

৩৯ বছরের মকবুল হোসেনের কথায়, ‘‘এ বার আর ইদ! উৎসব পালন করব কী ভাবে? বাড়ি-জমি-সম্পত্তি সব ছিল দেশে। আর এখন কপর্দকশূন্য উদ্বাস্তু।’’ বছর ষাটের দিন মহম্মদের আক্ষেপ, ‘‘কত জাঁকজমক করে ইদ পালন করতাম। আর এ বছর ভিটেমাটি-হারা।’’ বৃষ্টিভেজা কক্সবাজারে ইদ উপলক্ষে স্কুল-কলেজ বন্ধ। সেই বন্ধ স্কুলগুলোই এখন আশ্রয়-শিবির। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানাচ্ছে, কমপক্ষে আটান্ন হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। আরও বিশ হাজার মানুষ আটকে রয়েছে সীমান্তের ‘নো-ম্যানস ল্যান্ড’-এ।

মায়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বয়ে গিয়েছে ন্যাফ নদী। শেষ সম্বলটুকু নিয়ে এই পথেও বাংলাদেশে ঢুকছেন শরণার্থীরা। নদীর পাড়ে তাঁবু খাঁটিয়ে থাকছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরে আশ্রয় নিচ্ছেন। ‘‘এখনই তাঁবুগুলো ভরে গিয়েছে। এ দিকে শরণার্থীদের সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। আর ক’দিনের মধ্যেই স্থান সঙ্কুলান হয়ে পড়বে,’’ আশঙ্কা রাষ্ট্রপুঞ্জের মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যানের।

কিন্তু দেশে ফেরার উপায়ও যে নেই। বৃদ্ধ জালাল আহমেদ শুক্রবার তিন হাজারের একটি শরণার্থী দলের সঙ্গে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন। বললেন, ‘‘এক দিন প্রায় দু’শো লোক নিয়ে সেনাবাহিনী হামলা করল গ্রামে। তার পর শুরু হল গুলি করা... আমাদের গ্রামের সব বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে ওরা। ফিরে গেলে ওরা গুলি করে মেরে ফেলবে। রোহিঙ্গাদের ওরা দেশছাড়া করবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন