Volodymyr Zelenskyy

Russia Ukraine war: চতুর্থ দফায় শান্তি বৈঠক মস্কো-কিভের

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ আজ জানিয়েছেন, বড় শহরগুলোতে এখনই ব্যাপক ভাবে আঘাত হানতে নিষেধ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কিভ শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২২ ০৬:৫৪
Share:

রণক্ষেত্রে: প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ‘পজ়িশন’ নিয়েছেন এক ইউক্রেনীয় সেনা। সোমবার ওডেসায়। ছবি রয়টার্স।

বাড়ির সামনের রাস্তাটায় দাঁড়িয়ে বিহ্বল চোখে চারপাশটা দেখছিলেন লোকটি। আশপাশের বাড়ির বেসমেন্ট থেকেও বেরিয়ে এসেছেন অনেকে। পোড়া গন্ধ। ঝলসে যাওয়া দেওয়াল। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ইট-কাঠ-পাথর-কাচের টুকরো... ধ্বংসের চিহ্ন। আর দূরের আকাশে অনেকগুলো ধোঁয়ার বলয়। জানান দিচ্ছে, আজ সেন্ট্রাল কিভের আরও কাছে এগিয়ে এসেছে ‘শত্রুপক্ষের’ বাহিনী।

Advertisement

এখনও দেশের মাটি আঁকড়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। লড়াই চালাচ্ছে দেশও। কিন্তু সেই সঙ্গে গ্রাস করছে হতাশাও। কিভবাসী প্রহর গুনছেন রুশ বাহিনীর আসার অপেক্ষায়। জ়েলেনস্কি গত পরশুই জানিয়েছেন, তিনি সমঝোতা করতে প্রস্তুত। ইজ়রায়েলকে মধ্যস্থ করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু এর কোনও উত্তর মেলেনি রাশিয়ার তরফে। আজ চতুর্থ পর্যায়ের শান্তি বৈঠক শুরু হয়েছে। তবে এ বারে আর বেলারুসে নয়। কিভ থেকেই ভার্চুয়ালি আলোচনা শুরু হয়েছে। জ়েলেনস্কি অবশ্য জানিয়েছেন, এই আলোচনা ‘সহজ নয়’। একটি ভিডিয়ো বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘জটিল পরিস্থিতি। সবাই সুখবরের আশায়। বৈঠকের ফলাফল কী হয়, পরে জানাব।’’ বৈঠকে ইউক্রেনের হয়ে মধ্যস্থতা করছেন মিখাইলো পোডোলিয়াক। বৈঠকের একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করে তিনি লিখেছন, ‘‘দু’পক্ষ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে। তবে খুব কঠিন পরিস্থিতি। তার মধ্যেই কথা চলছে। এই অবস্থায় মূল সমস্যা হচ্ছে, দু’দেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো একেবার ভিন্ন। ইউক্রেনে মানুষের স্বাধীন ভাবে নিজের মতামত প্রকাশের অধিকার আছে। রাশিয়া নিজের সমাজকেই মুখ খুলতে দেয় না, চেপে রেখে দেয়।’’ আজ সকালে ইউরোপীয় কাউন্সিলের সঙ্গেও বৈঠকের কথা ছিল কিভের। তা হয়নি।

একটু একটু করে কিভের দিকে এগোচ্ছে রুশ বাহিনী। পথে গুঁড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক এলাকা। কিভের শহরতলিতে ওবোলন এলাকায় একটি আবাসনে বোমা ফেলেছে রুশরা। ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়। বহুতলটির একটি জানলার কাচও আস্ত নেই। মাঝে একটি তলা ধসে পড়ে গিয়েছে। কিভের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু যুদ্ধের মধ্যেও বাড়ি ছাড়তে নারাজ কিছু একরোখা মানুষ। তাই এখনও রয়েছেন নিজেদের ঠিকানায়। ওই বাড়ির ন’তলার ফ্ল্যাটে ছিলেন এমনই এক বৃদ্ধ দম্পতি। বিস্ফোরণে আগুন লেগে যায় বাড়িটিতে। আটকে পড়েন তাঁরা। শেষে কোনও মতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে প্রাণে বাঁচেন। ৮২ বছর বয়সি এক প্রবীণকে ছাদের রাস্তা দিয়ে উদ্ধার করে দমকল বাহিনী।

Advertisement

কিভের মেয়র ভিটালি ক্লিৎসকো বলেন, ‘‘শত্রুরা হামলা করা শুরু করেছে। এক-একটা বাড়ির সামনের অংশ, বারান্দা, জানলা, ধসে পড়ে গিয়েছে।’’ দূরে কালো ধোঁয়ার স্তম্ভ দেখা যাচ্ছে সেন্ট্রাল কিভ থেকেও। প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সক্রিয় রয়েছে, তাই একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হানা আটকানো গিয়েছে। না হলে আরও ভয়ানক হত।

আজ দক্ষিণ ইউক্রেনের মারিয়ুপোল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অনেককে। লাগাতার রুশ হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই বন্দর-শহর। মানব করিডর করে সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের জন্য একাধিক বার আবেদন হয়েছে মস্কোর কাছে। সাড়া মেলেনি। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেও হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। আজ কিছুটা ব্যতিক্রমী ছিল এ শহরের ছবি। মেয়রের অফিস থেকে জানানো হয়, অবশেষে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হয়েছে। মারিয়ুপোল থেকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী জ়াপুরিজিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সকলকে। এই শহরটি এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে। মারিয়ুপোলের এক সরকারি আধিকারিক জানান, দুপুর ১টা নাগাদ যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করে ঘোষণা করা হয়। ওই সময়ে ৫০টি গাড়ি করে কিছু
সংখ্যক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। ৪ লক্ষ মানুষের বাস মারিয়ুপোলে। কত জন এখনও শহরে আটকে পড়ে, জানা নেই। অন্তত ২৫০০ জন ইতিমধ্যেই এ শহরে নিহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ওই সরকারি কর্তা বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারছি না, উদ্ধারের রাস্তা নিরাপদ হবে কি না। কিন্তু আর তো কোনও উপায়ও নেই।’’

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ আজ জানিয়েছেন, বড় শহরগুলোতে এখনই ব্যাপক ভাবে আঘাত হানতে নিষেধ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যদিও তার পরেই তিনি বলেন, ‘‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রক অবশ্য সেই সম্ভাবনা এখনই খারিজ করে দেয়নি। তা ছাড়া বড় শহরগুলোকে প্রায় চারদিক থেকেই ঘিরে ফেলেছে রুশ সেনা। অর্থাৎ কি না প্রায় আমাদেরই নিয়ন্ত্রণে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন