Pakistan General Election 2024

পেশা চিকিৎসা, নেশা রাজনীতি! পাকিস্তানের ভোটে লড়ে ইতিহাস তৈরির পথে হিন্দু কন্যা সাবিরা

সাবিরা প্রকাশ। পেশায় চিকিৎসক। বাবার নাম ওম প্রকাশ। অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক তিনি। আবার রাজনীতিকও। গত ৩৫ বছর ধরে বেনজির-বিলাবল ভুট্টোর দল পিপিপি-র সক্রিয় কর্মী ওম প্রকাশ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪১
Share:

সাবিরা প্রকাশ। —ফাইল চিত্র।

সাবিরা এত দিনে নিশ্চয়ই জানেন, তাঁর নাম ইতিহাসে লেখা হতে পারে। কারণ, সব ঠিক থাকলে তিনিই হবেন পাকিস্তানের প্রথম মহিলা, যিনি রক্ষণশীল এলাকা বলে পরিচিত খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের জেলা থেকে ভোটে লড়বেন। নির্বাচিত বা মনোনীত হলে নজির গড়ে পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্যও হবেন এই হিন্দু তরুণী।

Advertisement

সাবিরা প্রকাশ। পেশায় চিকিৎসক। বাবার নাম ওম প্রকাশ। অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক তিনি। আবার রাজনীতিকও। গত ৩৫ বছর ধরে বেনজির-বিলাবল ভুট্টোর দল পিপিপি-র সক্রিয় কর্মী ওম প্রকাশ। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন। আর সেই ভোটে লড়তে চেয়ে ওম প্রকাশের কন্যা সাবিরা বুনের জেলার পিকে-২৫ আসনটি থেকে গত ২৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে এক-একটি আসনে একই রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা বা নেত্রী মনোনয়ন জমা দিতে পারেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এক জনকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে বেছে নিলে বাকিরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।সাবিরার আশা, দলীয় নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত তাঁকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে টিকিট দেবেন। পাক সংবাদমাধ্যম সূত্র জানাচ্ছে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে তিন ধরনের আসন আছে। সাধারণ আসন, মহিলাদের
জন্য সংরক্ষিত আসন ও সংখ্যালঘুদের (হিন্দু, খ্রিস্টান, পার্সি, শিখ) জন্য সংরক্ষিত আসন। যে দল যতগুলি সাধারণ আসন দখল করবে, তার ভিত্তিতে সংরক্ষিত আসন পাবে। সংরক্ষিত আসনে তারা পছন্দসই প্রার্থীকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে পাঠাতে পারে। সাবিরা এক সাক্ষাৎকারে জানান, বর্ষীয়ান নেতারা
তাঁর বাবাকে বলেছেন, তিনি যেন কোনও সাধারণ আসন থেকে লড়েন। কিন্তু সূত্রের মতে, রক্ষণশীল এলাকার ওই আসনটিতে শেষ পর্যন্ত অন্য কোনও জোরদার প্রার্থীকে জিতিয়ে এনে সংরক্ষিত আসনে সাবিরাকে আইনসভায় পাঠাতে পারে পিপিপি।

Advertisement

স্থানীয় সমাজকর্মী ইমরান নোশাদ খান জানিয়েছেন, গত ৫৫ বছরে বুনের জেলা থেকে কোনও মহিলা ভোটে দাঁড়াননি। সাবিরাই প্রথম। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও যে পিকে-২৫ আসনটিতে তিনি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, সেটি সম্পূর্ণ মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকার। সাবিরা জানান, তিনি তাঁর বাবার পথেই হাঁটছেন। মানবতার সেবা করাটা তাঁর রক্তে। ২০২২ সালে অ্যাবটাবাদ ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন তিনি। তবে রাজনীতিতে সাবিরা নেহাতই আনকোরা নন। তিনি বুনের জেলায় পিপিপি-র মহিলা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদিকা।

একটি পাক সংবাদপত্রকে সাবিরা জানিয়েছেন, ডাক্তারি পড়ার সময়ে গরিব মানুষের দুর্দশা ও সরকারি হাসপাতালে তাঁদের অসহায়তার ছবি খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। তাই ভোটে নির্বাচিত হয়ে এলাকার গরিব মানুষের কল্যাণ তাঁর লক্ষ্য। মহিলারা কী ভাবে ক্রমাগত উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত হয়েছেন, কী ভাবে তাঁদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে, তা-ও তিনি দেখেছেন। নির্বাচিত হলে মহিলাদের পৃথিবীকে আরও সুরক্ষিত করা এবং তাঁদের অধিকারগুলি নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করতে চান তিনি। ভাঙতে চান পিতৃতন্ত্রের অচলায়তন। নিজেরই উদাহরণ দিচ্ছেন সাবিরা। বলছেন, ‘‘বুনের পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে এই জেলা থেকে এক জন মহিলার ভোটে দাঁড়াতে ৫৫ বছর লেগে গেল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন