(বাঁ দিকে) বংশোদ্ভূত লেখক সলমন রুশদি। হামলাকারী হাদি মাতার (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক সলমন রুশদির উপর হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত ২৭ বছরের হাদি মাতারের ২৫ বছরের জেলের সাজা হল। আমেরিকার নিউ ইয়র্কের একটি আদালতে তাঁর বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। সে সময়ই ‘দোষী’ ঘোষণা করা হয়েছিল হাজিকে। শাস্তি ঘোষণা করা হল শুক্রবার।
যে ধারায় হাদিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, আমেরিকার আইন অনুযায়ী তাতে ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের সাজা বরাদ্দ ছিল। ২০২২ সালে আমেরিকার একটি অনুষ্ঠানে রুশদির উপর প্রাণঘাতী হামলা চালান নিউ জার্সির বাসিন্দা হাদি। মঞ্চে উঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপান রুশদিকে। ছুরির আঘাতে মঞ্চেই লুটিয়ে পড়েছিলেন বুকারজয়ী ব্রিটিশ লেখক। বেশ কিছু দিন তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। পরে সুস্থ হয়ে উঠলেও হামলার ফলে একটি চোখে দৃষ্টি হারিয়েছেন ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর লেখক। অকেজো হয়ে গিয়েছে একটি হাতও।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দু’বছর কারাবন্দি থাকার পরে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে হাদির বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল নিউ ইয়র্কের একটি কাউন্টি আদালতে। যেখানে রুশদির উপর হামলা হয়েছিল, তার থেকে এই আদালত খুব বেশি দূরে নয়। মঞ্চে সে দিন রুশদির সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন হেনরি রিস। তাঁকেও আঘাত করেছিলেন যুবক। সেই দোষও প্রমাণিত হয়েছে আদালতে।
বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন সাক্ষ্য দিয়েছেন রুশদি স্বয়ং। তিনি আদালতে হামলার সেই দিনের ঘটনাবলির বর্ণনা করেছেন। রুশদি জানান, আচমকা এক যুবককে তাঁর দিকে ছুটে আসতে দেখেন তিনি। তাঁর চোখগুলি ছিল ‘অন্ধকার’ এবং ‘হিংস্র’। প্রথমে রুশদি ভেবেছিলেন, তাঁকে ঘুষি মারা হয়েছে। পরে বুঝতে পারেন, তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। মোট ১৫ বার তাঁকে কোপ মারা হয় বলে আদালতকে রুশদি জানান। প্রায় তিন সপ্তাহ বিচারপ্রক্রিয়া চলার পরে হাদিকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। শাস্তি ঘোষণা হল তারও তিন মাস পরে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালে বিতর্কিত উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লিখেছিলেন রুশদি। ওই উপন্যাসের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনি ‘মৃত্যু ফতোয়া’ জারি করেছিলেন। অজস্র বার খুনের হুমকি পেয়েছিলেন রুশদি। হামলার ভয়ে প্রায় ন’বছর আত্মগোপন করতে হয়েছিল তাঁকে। পরে প্রকাশ্যে আসেন, কিন্তু থাকতেন নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। সেই উপন্যাস লেখার প্রায় ৩৫ বছর পর আমেরিকার মঞ্চে তাঁর উপর হামলা হয়েছিল।