বর্ষায় কাদার স্রোতে ভাসতে পারে জনপদ

ভূকম্পেই শেষ নয়। এ বার মেঘ ঘনাচ্ছে অন্য বিপদের। নেপালে পর পর তিনটি ভূমিকম্প ও প্রায় ৭০টি আফটারশকে হিমালয়ের পাথরের দেওয়াল জুড়ে ছোট ছোট অসংখ্য চিড় ধরেছে। ভূ-পদার্থবিদদের আশঙ্কা, বর্ষা নামলে সেগুলো দিয়ে জল ঢুকে পাহাড়ের মাটিকে আলগা করে দেবে। পরিণামে সিকিম-নেপাল-দার্জিলিঙের পাহাড় জুড়ে নামতে পারে ধস। পাথরের সঙ্গে পাহাড় বেয়ে নেমে আসবে তাল তাল কাদাও। এমনকী, কাদার বন্যায় পাহাড়ি জনপদ ভেসে যাওয়াও বিচিত্র নয় বলে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন।

Advertisement

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৪:০১
Share:

ভূকম্পেই শেষ নয়। এ বার মেঘ ঘনাচ্ছে অন্য বিপদের।

Advertisement

নেপালে পর পর তিনটি ভূমিকম্প ও প্রায় ৭০টি আফটারশকে হিমালয়ের পাথরের দেওয়াল জুড়ে ছোট ছোট অসংখ্য চিড় ধরেছে। ভূ-পদার্থবিদদের আশঙ্কা, বর্ষা নামলে সেগুলো দিয়ে জল ঢুকে পাহাড়ের মাটিকে আলগা করে দেবে। পরিণামে সিকিম-নেপাল-দার্জিলিঙের পাহাড় জুড়ে নামতে পারে ধস। পাথরের সঙ্গে পাহাড় বেয়ে নেমে আসবে তাল তাল কাদাও। এমনকী, কাদার বন্যায় পাহাড়ি জনপদ ভেসে যাওয়াও বিচিত্র নয় বলে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন।

বস্তুত এই নয়া বিপদ সম্পর্কে আইআইটি খড়্গপুরের ভূ-বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আমেরিকার মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরাও একমত। মার্কিন বিজ্ঞানীরা উপগ্রহ মারফত সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, কাঠমান্ডুতে গত শনিবারের ৭.৯ রিখটার-মাত্রার ভূমিকম্পে নেপালের পাহাড়ে বেশ কিছু অঞ্চল ধসে পড়ে। পরবর্তী দু’টি ভূমিকম্প ও লাগাতার আফটারশক আরও এলাকায় ধস নামিয়েছে। উপরন্তু বহু জায়গায় তৈরি হয়েছে ছোট ছোট ফাটল, যার সঠিক সংখ্যাটা এখনও পরিমাপ করা যায়নি।

Advertisement

আর তারই মধ্যে লুকিয়ে আছে নতুন বিপর্যয়ের উৎস। আইআইটি খড়্গপুরের ভূ-পদার্থবিদ্যার গবেষকদলের প্রধান শঙ্করকুমার নাথ বুধবার বলেন, ওই অসংখ্য পাথুরে ফাটলের মধ্য দিয়ে বৃষ্টির জল চুঁইয়ে ভিতরের মাটিকে নরম করে দিতে পারে। পরে জোরদার বৃষ্টি হলে ফাটলগুলো দিয়ে স্রোতের মতো কাদা-জল বেরিয়ে আসবে। ‘‘কখন কোথা দিয়ে যে কাদার বন্যা বইবে, তা চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। বিস্তীর্ণ জনপদ তাতে ভেসে যেতে পারে।’’— সতর্ক করছেন শঙ্করবাবু।

মিশিগানের জিও-মরফোলজিস্ট মারুন ক্লার্ক গবেষণাপত্রে বলেছেন, ‘‘উপগ্রহ-সমীক্ষায় বেশ ক’টি অঞ্চলকে অতি বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেছি। তালিকার শীর্ষে নেপালের গোর্খা জেলা ও ল্যাঙটাঙ উপত্যকা।’’ মার্কিন গবেষকেরা জানিয়েছেন, শনিবারের ভূকম্পের পরে ইতিমধ্যে ওই তল্লাটে ব্যাপক ধস নেমেছে। তাতেও ভয় কাটছে না। ‘‘আসল বিপদ বর্ষায়। পাহাড়ের যে অংশটা এখনও দাঁড়িয়ে, সেখানে অসংখ্য ফাটল হয়েছে, যা দিয়ে বৃষ্টির জল ঢুকে পুরো এলাকার অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলতে পারে।’’— লিখেছেন ক্লার্ক। ভূ-বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ধস ও কাদা-বন্যা হলে নেপাল–তিব্বত সীমান্তবর্তী তামাম এলাকাটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে সামান্য হলেও দিশা দিয়েছেন জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (জিএসআই)-র অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জ্ঞানরঞ্জন কয়াল। তিনি বলেন, ‘‘কোন কোন জায়গা সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং ভূমিকম্পে কোথায় কোথায় সহজে ফাটল ধরতে পারে, তার একটা ম্যাপ জিএসআইয়ের ভূ-বিজ্ঞানীদের কাছে রয়েছে। নতুন ফাটল কোথায় কোথায় হতে পারে, সে সম্পর্কেও আমাদের সমীক্ষকদের প্রাথমিক ধারণা আছে।’’

তাই নতুন ফাটল খুঁজে বার করা খুব সমস্যা হবে না বলে জ্ঞানরঞ্জনবাবুর দাবি। যদিও কাজটা সময়সাপেক্ষ বলে তিনি জানিয়েছেন। ‘‘ফাটল খুঁজে পেলে মেরামতির উপায়ও জানা আছে। ভুজের ভূমিকম্পের পরে সেখানে তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালিয়ে আমাদের ভূ-বিজ্ঞানীরা ফাটল খুঁজে বার করেছিলেন।’’— বলছেন তিনি।

তবে ফাটলসন্ধান বর্ষার আগে শুরু করা যাবে কি না, বিশেষজ্ঞেরা সন্দিহান। কারণ, লাগাতার ঘূর্ণাবর্তে নেপাল-সিকিমে বৃষ্টি চলছে। আগামী কয়েক দিনেও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement