দোষীই, তবে জেল-মুক্তি শরিফদের

কুলসুমের প্রয়াণ ও শেষকৃত্যের জন্য গত সপ্তাহে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন শরিফেরা। গত পরশুই জেলে ফেরেন। তবে কারাবাস আর দীর্ঘায়িত হল না এ দফায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩০
Share:

ফুলে স্বাগত: রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল থেকে বাড়ির পথে নওয়াজ শরিফ (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

স্ত্রীকে হারানোর শোকের মধ্যেই সাময়িক স্বস্তি পেলেন নওয়াজ শরিফ। স্বস্তি পেলেন তাঁর মেয়ে মরিয়ম, জামাই মহম্মদ সফদারও। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট আজ বলেছে, পানামা-দুর্নীতির অ্যাভেনফিল্ড মামলায় আপাতত জেল খাটতে হবে না তাঁদের। তবে তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করে নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছিল, তা খারিজ হচ্ছে না। শরিফেরা যে হেতু ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গিয়েছেন, অতএব সেই বিচার চলবে। সাজাটুকু স্থগিত থাকবে হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় না-দেওয়া পর্যন্ত।

Advertisement

আজ রাত ৮টা নাগাদ রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল থেকে ছাড়া পান নওয়াজ, মরিয়ম ও সফদার। নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বাঁচাতে গুরুতর অসুস্থ স্ত্রী কুলসুমকে লন্ডনের হাসপাতালে রেখেই জুলাইয়ে মেয়েকে নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরেই তাঁদের গ্রেফতার করে সোজা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জেলে। কুলসুমের প্রয়াণ ও শেষকৃত্যের জন্য গত সপ্তাহে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন শরিফেরা। গত পরশুই জেলে ফেরেন। তবে কারাবাস আর দীর্ঘায়িত হল না এ দফায়।

পানামা নথি ফাঁস হওয়ার পরে শরিফদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেছিল পাকিস্তানের দুর্নীতি দমন সংস্থা ‘ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি বুরো’ (ন্যাব)। একটি মামলা লন্ডনের অ্যাভেনফিল্ড হাউসে বেনামে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগের ভিত্তিতে। অন্য দু’টি মামলা আল আজ়িজ়িয়া স্টিল মিলস এবং ফ্ল্যাগশিপ ইনভেস্টমেন্টে হিসাব-বহির্ভূত লগ্নি সংক্রান্ত। লন্ডনের মামলাটিতে নওয়াজকে ১০ বছর, মরিয়মকে ৭ বছর এবং সফদারকে ১ বছরের কারাদণ্ড দেয় পাক দুর্নীতি দমন আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট যান তাঁরা। কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ আজ প্রত্যেককেই ৫ লক্ষ টাকার বন্ডে মুক্তি দিয়েছে।

Advertisement

পাক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ন্যাব-এর সওয়াল নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতিরা। তাঁদের মতে, অ্যাভেনফিল্ডের ওই ফ্ল্যাটগুলির মালিক যে নওয়াজ, সেই সংক্রান্ত প্রমাণ দিতে পারেনি ন্যাব। গোটা অভিযোগই দাঁড়িয়ে আন্দাজের উপরে। আয়ের থেকে বেশি সম্পত্তি মানেই তা অসদুপায়ে অর্জিত— এই সমীকরণ মানতে চাননি তাঁরা।

আর এখানেই অক্সিজেন পেয়ে যান শরিফেরা। আদালত কক্ষে আজ হাজির ছিলেন নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরিফ-সহ পিএমএল(এন) নেতা-কর্মীরা। রায় ঘোষণা হতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন তাঁরা। শাসক দল তেহরিক-এ-ইনসাফের নেতা ফয়সল জাভেদ পরে বলেন, ‘‘ওঁরা কিন্তু এখনও দোষী হিসেবেই গণ্য হবেন। রায় তো পাল্টায়নি। আদিয়ালা জেলই ওঁদের ঠিকানা।’’ তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, শরিফের মামলাটি আদপে রাজনৈতিক। নির্বাচনের সময়ে জেলবন্দি ছিলেন তিনি। ভোটে দাঁড়ানো তো বন্ধই। নতুন সরকার এসে গিয়েছে। ফলে এখন শরিফকে জেলে রাখার পক্ষে জোরালো সওয়াল করে পাক প্রশাসন তথা সেনার বিশেষ লাভ নেই। বরং নানা বিপর্যয়ের মুখে আজ কিছুটা নিজেদের সামলে নিতে পারবে শরিফ পরিবারই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন