নওয়াজের মেহমান শর্মিলাকেও হেনস্থা

পাকিস্তানে এসেছেন সাহিত্য উৎসবে যোগ দিতে। উৎসবের সূচনাও হয়েছিল তাঁরই হাত ধরে। অথচ আজ দেশে ফিরে যাওয়ার সময় নিয়মমাফিক ওয়াঘা সীমান্তে অভিবাসন দফতরে যেতেই লাহৌর লিটারারি ফেস্টিভ্যালের প্রধান অতিথি শর্মিলা ঠাকুরকে শুনতে হল— তিনি যে লাহৌরে ছিলেন, তার পুলিশ রিপোর্ট কোথায়? আর ওই রিপোর্ট যখন নেই, দেশেও ফিরতে পারবেন না তিনি!

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লাহৌর শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৪১
Share:

লাহৌর লিটারারি ফেস্টিভ্যালে শর্মিলা ঠাকুর। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে

পাকিস্তানে এসেছেন সাহিত্য উৎসবে যোগ দিতে। উৎসবের সূচনাও হয়েছিল তাঁরই হাত ধরে। অথচ আজ দেশে ফিরে যাওয়ার সময় নিয়মমাফিক ওয়াঘা সীমান্তে অভিবাসন দফতরে যেতেই লাহৌর লিটারারি ফেস্টিভ্যালের প্রধান অতিথি শর্মিলা ঠাকুরকে শুনতে হল— তিনি যে লাহৌরে ছিলেন, তার পুলিশ রিপোর্ট কোথায়? আর ওই রিপোর্ট যখন নেই, দেশেও ফিরতে পারবেন না তিনি!

Advertisement

সাহিত্য উৎসবে আমন্ত্রিত হয়েও ভিসা না পাওয়া নিয়ে বিতর্ক ও তিক্ততার জেরে শেষ পর্যন্ত আসাই হয়নি অনুপম খেরের। এ বার শর্মিলার হয়রানি ফেরার পথে!

যদিও ওয়াঘা সীমান্তে পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত ছবিটা ছিল একেবারেই অন্য রকম। সাহিত্য উৎসবে যোগ দিতেই শর্মিলার এই চার দিনের পাক সফর। এরই মধ্যে একটি সন্ধে কেটেছে নওয়াজ শরিফের রায়উইন্দের প্রাসাদোপম বাড়িতে। দাওয়াত দিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। হবে না-ই বা কেন! এক সময়ে নওয়াজ মুগ্ধ হয়ে দেখতেন শর্মিলা ঠাকুরকে, ছবির পর্দায়। তখন থেকেই দারুণ ভক্ত তাঁর অভিনয়ের। সেই তরুণ নওয়াজের বয়স এখন ৬৭। আর তাঁর প্রিয় অভিনেত্রী ৭১-এ। এত বছর পরে শর্মিলাকে নিজের দেশে এত কাছে পেয়ে নিমন্ত্রণ জানানোর সাধটা চেপে রাখেননি। সেই সূত্রেই কাল সন্ধেয় শরিফের রায়উইন্দের বাড়িতে নৈশভোজে হাজির ছিলেন শর্মিলা।

Advertisement

দু’জনের আলাপচারিতায় কখনও উঠে আসে ষাটের দশকের বলিউড, কখনও পটৌডী-পরিবার। প্রবীণ অভিনেতা দিলীপ কুমারের খোঁজ নিতেও ভোলেননি শরিফ। উঠে আসে ভারতের রাজনীতির প্রসঙ্গও। শরিফ জানান, তিনি চান দু’দেশের সম্পর্কে উন্নতি হোক।

কিন্তু শরিফ চাইলেই যে এ দেশে সব কিছু তাঁর পছন্দ মোতাবেক হবে, এমন নিশ্চয়তা কোথায়! এ দেশের সেনাবাহিনী, আইএসআই থেকে শুরু করে মোল্লাতন্ত্রও যে যথেষ্টই, এমনকী অনেক ক্ষেত্রে বেশি প্রভাবশালী, সেটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে বিভিন্ন প্রসঙ্গে। নওয়াজের জন্মদিনে আচমকাই উড়ে আসা নরেন্দ্র মোদী কী ভাবে ‘বিনা ভিসায়’ পাকিস্তানে ঘুরে বেড়ালেন তা-ই নিয়ে প্রশ্ন তুলতেও ছাড়েনি পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ। সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও কূটকচালি কিছু কম হয়নি এ নিয়ে। শর্মিলার ক্ষেত্রে প্রশ্নটা তুলল পাকিস্তান ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি।

শরিফের বাড়িতে দাওয়াতের পরই পঞ্জাব সরকার ‘অফিসিয়াল প্রোটোকল’ দিয়েছিল শর্মিলাকে। আজ কড়া নিরাপত্তা-বেষ্টনীকে পরিবৃত অবস্থায় ওয়াঘা সীমান্ত পৌঁছতেই স্তম্ভিত হয়ে যান নওয়াজের মেহমান। পাক গোয়েন্দা দফতরের অভিবাসনের বিভাগের অফিসারেরা সটান প্রশ্ন করেন, তিনি যে লাহৌরে ছিলেন, সেই ‘পুলিশ-রিপোর্ট’ কোথায়? তাঁরা জানান, শর্মিলার পাক-সফর সংক্রান্ত কাগজপত্রে ওই রিপোর্টটি নেই। বিস্মিত শর্মিলা প্রশ্ন করেন, ‘‘তা হলে কি আমি যেতে পারব না?’’

ওই অফিসারের সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল, ‘‘না।’’

পাক অভিবাসন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পর অভিনেত্রীর সঙ্গে থাকা এক অফিসার যোগাযোগ করেন সংশ্লিষ্ট থানায়। দু’ঘণ্টার চেষ্টায় ব্যবস্থা করা হয় রিপোর্টের। তা ফ্যাক্স করে পাঠানো হয় অভিবাসন দফতরে। কিন্তু তত ক্ষণে বিব্রত অভিনেত্রী ফিরে গিয়েছেন মল রোডের হোটেলে। এক পাক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, ‘‘দফতরের অতিথিশালায় বসে অপেক্ষা করছিলেন শর্মিলা। কিন্তু ওই রিপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যা মিটতে মিটতে পরিকল্পনা বদলে ফেলেন শর্মিলা। ঠিক করেন, আজ নয়, কাল দেশে ফিরবেন।’’ যদিও অন্য একটি সূত্রের দাবি, অমৃতসর-মুম্বই উড়ান আর ধরতে পারবেন না বুঝেই হোটেলে ফিরে যান অভিনেত্রী।

এই লাহৌর লিটারারি ফেস্টিভ্যালেই আমন্ত্রিত ছিলেন আর এক বলিউড অভিনেতা অনুপম খের। যদিও শেষ মুহূর্তে তাঁকে জানানো হয়, ভিসার আবেদনই তিনি করেননি। ফলে পাকিস্তানে যেতে পারবেন না। অনুপম তখন জানান, নিয়মমাফিক উৎসব কমিটিরই ভিসার আবেদন করার কথা ছিল। কমিটির তরফে তখন জানানো হয়, ভিসার আবেদন করতে নিষেধ করেছিল বিদেশ মন্ত্রক। আগেই তাদের জানানো হয়েছিল, অনুপমের ভিসার আবেদন করা হলেও তা দেওয়া হবে না। পাক সরকার অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চায়নি। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ-ও বলা হয়, ভিসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। কিন্তু অনুপমই শেষ পর্যন্ত এই দফায় পাকিস্তান আসতে আর রাজি হননি।

অনুপমের আসা হয়নি। এসে কিন্তু সাহিত্যবাসরে উষ্ণ অভ্যর্থনাই পেয়েছেন শর্মিলা। উৎসবের সূচনাই হয় তাঁর বক্তৃতা দিয়ে। অনুষ্ঠানের ওই পর্বের নাম রাখা হয়েছিল ‘সফর’। সাহিত্য উৎসবে দেখানো হয় তাঁর ‘অপুর সংসার’, ‘দেবী’-র ভিডিও ক্লিপ। ‘অপুর সংসার’ থেকে যাত্রা শুরু করে ‘অ্যান ইভনিং ইন প্যারিস’-এর বিকিনি বিপ্লব— জীবনের নানা ওঠাপড়ার কথা উঠে আসে তাঁর অকপট আলাপচারিতায়। পরনে পেঁয়াজ-রঙা শাড়ি, নায়িকা মঞ্চে উঠতেই হাততালিতে ফেটে পড়েন দর্শকরা। উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান সবাই। শর্মিলাও বলতে থাকেন, ‘‘সীমান্ত পেরোনো থেকে হোটেলে হিন্দি গান... সবই মনে করিয়ে দেয় ভারত-পাকিস্তানে কত মিল।’’ তখনও জানতেন না, এ ‘সফর’-এর শেষটা ঠিক কেমন হবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন