মমতার সঙ্গে বৈঠকে শরণার্থী প্রসঙ্গ তুললেন হাসিনা

প্রাথমিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও আলাদা বৈঠকের সূচি ছিল না হাসিনার। কিন্তু নবান্ন থেকে বৃহস্পতিবারই একান্ত বৈঠক চেয়ে বার্তা পাঠানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায় ঢাকাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৬
Share:

মুখোমুখি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শেখ হাসিনা।—ছবি পিটিআই।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে বিতর্কের জেরে দেশের রাজনৈতিক আবহ যখন সরগরম, ঠিক তখনই কলকাতার মাটিতে দাঁড়িয়ে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Advertisement

শুক্রবার আলিপুরের একটি পাঁচতারা হোটেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আশা করি, সেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চিরদিন বজায় থাকবে।’’ অন্য দিকে মমতা বলেন, ‘‘দুই বাংলা ও দুই দেশের নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ থাকবে, সেই আশা করি।’’

প্রাথমিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও আলাদা বৈঠকের সূচি ছিল না হাসিনার। কিন্তু নবান্ন থেকে বৃহস্পতিবারই একান্ত বৈঠক চেয়ে বার্তা পাঠানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায় ঢাকাও। সেই সূত্রেই ঠিক হয়, শুক্রবার সন্ধ্যায় মিনিট কুড়ি একান্তে কথা বলবেন দুই নেত্রী। বাস্তবে অবশ্য বৈঠক গড়ায় প্রায় ৫০ মিনিট।

Advertisement

এ দিন সন্ধ্যা সওয়া ৬টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে যান আলিপুরের হোটেলে। সেখানে প্রথমে উভয় পক্ষের কূটনীতিক এবং অফিসারদের সঙ্গে দুই নেত্রীর কথা হয়। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী হাসিনাকে বলেন, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দুই বাংলার মধ্যে আরও আদানপ্রদানের সুযোগ রয়েছে। হাসিনা বাংলাদেশে সাইকেল শিল্পে বাড়বাড়ন্তের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। তা শুনে মমতা বলেন, বাংলাদেশের সাইকেল নির্মাতারা এ রাজ্যে লগ্নি করতে চাইলে তাঁদের জমি দেওয়া হবে।

এর পরে একান্তে কথা বলেন হাসিনা ও মমতা। বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দুই বাংলা এবং দুই দেশের সম্পর্ক বরাবরই ভাল। দু’দেশের বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে। আলোচনা ছিল সৌজন্যমূলক।’’ তিস্তা বা এনআরসি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান মমতা।

সূত্রের মতে, দুই নেত্রীর কেউই তিস্তা প্রসঙ্গ তোলেননি। তবে এনআরসি নিয়ে ভারতে যা ঘটছে সে ব্যাপারে বাংলাদেশ যে অবহিত, এ দিনের আলোচনায় সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন হাসিনা। বস্তুত, মমতার সঙ্গে বৈঠকের পরেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এক কোটি শরণার্থীর ভারতে আশ্রয় নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছেন, তাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে।

তাঁদের মতে, কলকাতায় এসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের অবদানের কথা এর আগে বহু বার বলেছেন বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামি লিগের শীর্ষ নেতারা। সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। শেখ হাসিনাও তাঁর বাবা মুজিবুর রহমানের সংগ্রামে ভারতের সাহায্য-সমর্থনের কথা স্মরণ করেছেন। কিন্তু এখন এনআরসি-র আবহে যখন বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তাঁদের চিহ্নিত করে সে দেশে ফেরত পাঠানো হবে কি না, তা নিয়ে ভারতে জল্পনা শুরু হয়েছে, তখন মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পিছনে কূটনৈতিক কৌশল রয়েছে।

শেষ বেলায় এই রাজনীতি-কূটনীতির ছোঁয়াটুকু বাদ দিলে এ দিন হাসিনার এগারো ঘণ্টার সফর জুড়ে ছিল শুধুই ক্রিকেট। হাসিনা জানান, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে তিনি কলকাতা এসেছেন। গোলাপি বলে টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশ ভাল খেলতে না পারলেও, ভবিষ্যতে তারা ভাল করবে বলে আশা করেন হাসিনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন