এনআরসি নিয়ে আশ্বাস চায় ঢাকা

গত কাল তাঁর দিল্লি সফরের প্রথম দিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানে এনআরসি নিয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন নয়।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৩৯
Share:

নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র

দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ বাড়ানো থেকে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি সই। তিনটি যৌথ প্রকল্পের উদ্বোধন। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, কাল হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শীর্ষ বৈঠকে এই কর্মসূচি ছাড়াও আলোচনায় অগ্রাধিকার পেতে চলেছে অসমের নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) থেকে বাদ যাওয়া মানুষদের নিয়ে ঢাকার উদ্বেগ, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন এবং তিস্তা চুক্তি দ্রুত রূপায়ণের মতো বিষয়গুলি।

Advertisement

গত কাল তাঁর দিল্লি সফরের প্রথম দিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানে এনআরসি নিয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন নয়। এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথা হয়েছে। কিন্তু সূত্রের বক্তব্য, মোদীর সঙ্গে বৈঠকের আগে এ কথা বলে তিনি একটি ইতিবাচক আবহাওয়া তৈরি করতে চেয়েছেন মাত্র। এনআরসি থেকে বাদ যাওয়া মানুষদের ফেরত পাঠানো হতে পারে বলে বাংলাদেশে যে ত্রাসের সঞ্চার হয়েছে, সে কথা অকপটে মোদীকে জানাবেন হাসিনা। আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমারকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমরা বরাবর বলে এসেছি যে এনআরসি প্রক্রিয়াটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুরু হয়েছে। এখনও এর অনেক কাজ বাকি। সেটা আগে শেষ করতে হবে।”

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এ কথা বলে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বোঝাতে চেয়েছেন যে অসমের নাগরিক পঞ্জি থেকে যাঁরা বাদ পড়লেন, তারা আদালতে আবেদন করতে পারবেন। সুতরাং গোটা বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়াটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু বাংলাদেশের আশঙ্কার জায়গা অন্যত্র। ঢাকার সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, এখনই কিছু হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে আবেগ-আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, নেত্রী হিসেবে তাকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই হাসিনার। এ বারে মোদীর সঙ্গে বৈঠকে তাঁকে এমন কোনও সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পেতে হবে, যা তিনি দেশে ফিরে তুলে ধরতে পারেন। ঢাকা চাইছে, মোদী-হাসিনা বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে সেই নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতির উল্লেখ থাক। কিন্তু সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য—বিষয়টি যে হেতু একান্ত ভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ, তাই কোনও আন্তর্জাতিক বিবৃতিতে তার উল্লেখ রাখা যায় না। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাংলাদেশের জীবন দুর্বিষহ করার কোনও অভিপ্রায় আমাদের নেই। এনআরসি-র বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি এবং এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’’

Advertisement

প্রশ্ন হল, বিদেশ মন্ত্রক বিষয়টিকে অভ্যন্তরীণ বললেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে কিছুটা হুমকির স্বরেই বলেছেন, এনআরসিতে বাদ পড়াদের ‘দরজা’ দেখানো হবে। বাংলাদেশের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘ভারতের বিদেশমন্ত্রী তাঁর প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য যে কাজটি দরকার তা করছেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবার অন্য কথা বলছেন। এটাও আমরা জানি যে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজনৈতিক কর্তৃত্বের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।’’
বাংলাদেশ আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরানোর বিষয়েও ভারত নীরব। এই নিয়ে মায়ানমারের সঙ্গে কোনও কথা বলা বা চাপ সৃষ্টি করার মতো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি দিল্লিকে। সূত্রের খবর, মোদীর সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়টি তুলবেন হাসিনা। সেই সঙ্গে মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসে তিস্তা চুক্তি যাতে সম্পন্ন করা যায়, সে ব্যাপারেও চাপ দেবে ঢাকা। এই নিয়ে আজ ভারতীয় মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার জানে তিস্তা নিয়ে আমাদের অবস্থান কী। এই প্রথম দু’দেশ তিস্তা নিয়ে কথা বলবে এমন নয়। তিস্তা ছাড়াও দু’দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া আরও ৭টি নদীর জলবণ্টন নিয়ে শীঘ্রই যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক বসছে।’’ সূত্রের খবর, দু’দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলির
সংযোগ এবং বাণিজ্য বাড়ানো নিয়ে কাল কথা হবে। সন্দেহ নেই, এটিও তিস্তা চুক্তির জন্য পরোক্ষ চাপ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। ভারতের তরফে বাংলাদেশকে জানানো হবে তিস্তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে ফের সমন্বয়ের চেষ্টা করা হবে, যাতে অদূর ভবিষ্যতে এই চুক্তি করা সম্ভব হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন