ফের বন্দুকবাজ, এ বার শিকার পাঁচ সাংবাদিক

নিউজ়রুমে ঢুকে সামনে থেকে বড় শটগানে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় শ্বেতাঙ্গ বন্দুকবাজ জ্যারড ওয়ারেন রামোস (৩৮)। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান চার জন। পঞ্চম জনের গুলি লাগে হাত আর শরীরে উপরের অংশে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

বস্টন শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ০৩:৫৬
Share:

ঘাতক জ্যারড ওয়ারেন রামোস।

তখন স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুর সওয়া তিনটে। মেরিল্যান্ডের রাজধানী অ্যানাপলিসের ‘ক্যাপিটাল গেজ়েট’ দৈনিকের দফতরে কর্মীরা আর পাঁচটা দিনের মতোই কাজে ব্যস্ত। পাঁচতলা খয়েরি রঙা বাড়িটিতে হঠাৎই হানা দেয় এক বন্দুকবাজ। সাংবাদিকরা যত ক্ষণে বুঝলেন দফতরে হামলা হয়েছে, তত ক্ষণে নিউজ়রুমের কাচের দরজা গুলিতে চুরচুর।

Advertisement

নিউজ়রুমে ঢুকে সামনে থেকে বড় শটগানে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় শ্বেতাঙ্গ বন্দুকবাজ জ্যারড ওয়ারেন রামোস (৩৮)। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান চার জন। পঞ্চম জনের গুলি লাগে হাত আর শরীরে উপরের অংশে। হাসপাতালে মারা যান তিনি। জখম আরও তিন জন হাসপাতালে ভর্তি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, এত গুলি চলেছে যে আর্তনাদও শোনা যায়নি। ৯/১১-র পরে সাংবাদিকতায় এমন মারাত্মক দিন আর দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন সংবাদ-কর্মীরা।

আততায়ী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই হামলা চালায় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ‘ক্যাপিটাল গেজ়েট’-এর বিরুদ্ধে ২০১২ সালে সে মানহানির মামলা করেছিল। আদালতে তো বটেই, সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে রামোসের রাগের প্রমাণ মিলেছে। কাগজের প্রাক্তন সাংবাদিক এরিক টমাস হার্টলি তাঁর লেখায় মেরিল্যান্ডের লরেলের বাসিন্দা রামোসের সমালোচনা করেছিলেন। এক মহিলাকে অশালীন ইমেল পাঠানো এবং তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রামোসের বিরুদ্ধে। আদালতেও দোষী সাব্যস্ত হয় সে। পরে মামলা খারিজ হয়। কিন্তু টুইটারে হার্টলি এবং এই দৈনিকের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকে রামোস। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে অবশ্য তার টুইটার অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয়। রামোসকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে তার বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রামোস যখন হানা দেয়, তখন নিউজ়রুমে অন্তত ১৭০ জন কর্মী ছিলেন। অ্যানাপলিসের মেয়র গ্যাভিন বাকলে বলেছেন, “পুলিশ এক মিনিটে পৌঁছে দ্রুত বন্দুকবাজকে ধরে ফেলে। না হলে আরও বড়সড় বিপদ ঘটতে পারত।”

Advertisement

স্মরণ: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তরুণী। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর শিক্ষক জন ম্যাকনামারাও। শুক্রবার অ্যানাপলিসে।

প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ‘ক্যাপিটাল’-এর অপরাধ সংক্রান্ত প্রতিবেদক ফিল ডেভিস। স্থানীয় ওয়েবসাইটে তিনি লিখেছেন, “অ্যাসাইনমেন্টে বেরোচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি বড়সড় চেহারার লোকটা শটগান নিয়ে কাচের দরজা ঠেলে ঢুকে এলোপাথারি গুলি চালাতে শুরু করল। কিছু বুঝে ওঠার আগে ডেস্কের নীচে কোনওরকমে মাথা গুঁজে লুকিয়ে পড়লাম। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, এই হয়তো একটা বুলেট শরীর ভেদ করে চলে যাবে। কী ভাবে যে বাঁচলাম, কে জানে!”

দৈনিকের কর্মীরা এখনও চরম আতঙ্কে। তাঁরা জানালেন, নিহতদের মধ্যে আছেন খেলার প্রতিবেদক জন ম্যাকনামারা। স্মৃতিচারণায় জন-এর বন্ধুরা লিখেছেন, ‘ও যেমন খবর লিখত, তেমনই সম্পাদনাও পারত। পেজ লে আউট-ও করে ফেলত মাঝেমধ্যে।’ মধ্যবয়স্ক সেই জন যে আর নেই, ভাবতে পারছেন না তাঁরা।

মাস কয়েক আগে কাগজে সেলস অ্যাসিস্ট্যান্টের পদে যোগ দেন বছর চৌত্রিশের রেবেকা স্মিথ। হামলার শিকার রেবেকাও। সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, কয়েক মাসেই রেবেকা নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছিলেন। সদা হাসিমুখ মহিলা ছিলেন পরিবার অন্তপ্রাণ। সেলস-এর কাজ করলেও নিউজ়রুমে মাঝেমধ্যেই আড্ডা দিতে আসতেন। রামোসের রোষে প্রবীণ সহ-সম্পাদক রব হিলাসেন, ২৫ বছরেরও পুরনো কর্মী ও সম্পাদকীয় পাতার সম্পাদক জেরাল্ড ফিশম্যান, প্রবীণ সম্পাদক ওয়েন্ডি উইন্টার্স-ও প্রাণ হারিয়েছেন। ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে টুইট করেন প্রেসি়ডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা উস্কে দিয়েছে পুরনো বিতর্ক। এত প্রাণহানির পরেও অস্ত্র আইনে নিয়ন্ত্রণ কোথায়, প্রশ্ন উঠেছে।

অন্ধ্রপ্রদেশের সুবান্না বারাণসী এখন কর্মসূত্রে আইওয়ার ডিমোইনের বাসিন্দা। পেেয়ছেন মার্কিন নাগরিকত্ব। বললেন, “এখানে অস্ত্র কেনা খুব সহজ। আমার কাছে অস্ত্র নেই শুনে প্রতিবেশীরা অবাক! ওদের উৎসাহে আমি নাইন এমএম পিস্তল কিনেছি। লাইসেন্সও হয়েছে। এখন চালাতেও পারি।’’ তার পরেই সুবান্নার সংযোজন, ‘‘আমার কাছে আছে। তো স্ত্রীর থাকবে না? জন্মদিনে তাই ওঁকেও একটা দিয়েছি!”

ছবি: এএফপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন