শাট আপ! এ বার নাভ্রাতিলোভাকে শাসানি ‘দেশপ্রেমী’ ভারতীয়দের

মিক্সড ডাবলসে ভারতীয় পার্টনারকে সঙ্গী করে বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখিয়েছেন একাধিক বার। তবে ভারতের সঙ্গে সংযোগ শুধু সেটুকুই নয় মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার। নিউইয়র্ক টাইমসে ভারত নিয়ে কোনও লেখা প্রকাশিত হলে, তিনি তা মন দিয়ে পড়েন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১২:৫২
Share:

মিক্সড ডাবলসে ভারতীয় পার্টনারকে সঙ্গী করে বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখিয়েছেন একাধিক বার। তবে ভারতের সঙ্গে সংযোগ শুধু সেটুকুই নয় মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার। নিউইয়র্ক টাইমসে ভারত নিয়ে কোনও লেখা প্রকাশিত হলে, তিনি তা মন দিয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এমনই এক প্রতিবেদন পড়ে এত ভাল লেগেছে নাভ্রার যে তিনি তা টুইট করেছেন নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে। কিন্তু ভারত নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার বিনিময়ে নাভ্রাতিলোভা পেয়েছেন এক রাশ গালিগালাজ। সৌজন্যে ভারতের স্বঘোষিত ‘দেশপ্রেমী’রা। টেনিস কিংবদন্তীকে এই ‘দেশপ্রেমী’দের পরামর্শ, ‘‘ভারত নিয়ে আপনার ভাবার দরকার নেই। আমরা আপনার চেয়ে ভারতকে বেশি ভালবাসি।’’

Advertisement

নীলাঞ্জনা এস রায় সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসে একটি কলম লিখেছেন— ‘হোয়াট পাসেস ফর সিডিশন ইন ইন্ডিয়া’। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা এবং জেএনইউ-কাণ্ড নিয়ে লিখেছেন নীলাঞ্জনা। তিনি প্রতিবেদনটি টুইটও করেন। টুইটার থেকেই মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা প্রতিবেদনটি পড়েন। পছন্দ হওয়ায় নীলাঞ্জনা এস রায়ের টুইট তিনি নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে রিটুইট করেন। নিজের মন্তব্যে নাভ্রা লেখেন, ‘‘দেশদ্রোহের বিরোধিতার নাম করে ভারতে উগ্র জাতীয়তাবাদ খুব সহজে চরম হিংসাত্মক হয়ে উঠছে, অত্যাচার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছচ্ছে।’’ নাভ্রাতিলোভার এই টুইট অন্তত ২০০ জন লাইক করেছেন। রিটুইট করেছেন ৪০০ জন।

ভারতের পরিস্থিতি নিয়ে টেনিস কিংবদন্তীর উদ্বেগের শরিক যাঁরা হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই কিন্তু ভারতীয়। কিন্তু ভারতে স্বঘোষিত দেশপ্রেমীরাও যে রয়েছেন। মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা আমেরিকায় বসে ভারত সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করবেন, স্বঘোষিত দেশপ্রেমীদের পক্ষে তা মেনে নেওয়া অসম্ভব। সঞ্জয় ধবন নামে এক ব্যক্তি টুইট করেন, ‘‘আমরা তাদের উপর ‘অত্যাচার’ (বুলি) করি, আপনার দেশ যাদের উপর বোমার বর্ষণ করতে চাইবে। অত্যাচারীরা ভণ্ডদের চেয়ে ভাল।’’

Advertisement

অরবিন্দ সাই নামে আরও এক জন লেখেন, ‘‘যে জঙ্গিরা নাগরিকদের খুন করে তাদের প্রশংসা করুন। দেখুন তো আমেরিকায় আপনি পুরস্কৃত হন কি না। নিউইয়র্ক টাইমস বা আমেরিকার কাছ থেকে আমাদের জ্ঞান নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’

শুধু সঞ্জয় বা অরবিন্দ নয়, অনেক স্বঘোষিত দেশপ্রেমীই নাভ্রাতিলোভাকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন। টেনিস কিংবদন্তীকে যথেচ্ছ গালিগালাজ করতে থাকেন টুইটারে। নাভ্রাতিলোভা কিন্তু এক বারের জন্যও মেজাজ হারাননি। অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভদ্রতা ধরে রেখেই জবাব দিয়েছেন ভারতের ‘দেশপ্রেমী’দের গালিগালাজের। দীপক নামে এক ‘দেশপ্রেমী’ মন্তব্য করেন, ‘‘মনে হচ্ছে আপনি ভারত সম্পর্কে ভারতীয়দের চেয়েও বেশি ভাবছেন। অযাচিত পরামর্শ দেবেন না।’’ দীপকের এই আক্রমণে একটুও আহত না হয়ে মার্টিনা বিতর্ক চালিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘‘পরামর্শ দিচ্ছি না। শুধু একটা প্রতিবেদন পোস্ট করেছি আর বলেছি যে উগ্রবাদ খুব সহজে হিংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে এবং মনে হচ্ছে আজকাল দক্ষিণপন্থী উগ্রবাদ বাড়ছে। আমি ভুল হতে পারি। কিন্তু আমি ভারতকে ভালবাসি, যদি ভারতকে নিয়ে না ভাবতাম, তা হলে ভারতকে নিয়ে এত কথা বলতাম না।’’ দীপক তাতেও দমেননি। কমিউনিস্ট শাসন থেকে মুক্তি পেতে নিজের দেশ চেকস্লোভাকিয়া ছেড়ে আমেরিকায় আশ্রয় নেওয়া টেনিস কিংবদন্তী যখন বলছেন তিনি ভারতকে ভালবাসেন, তখনও দীপকের বোধগম্য হয়নি তিনি কাকে অপমান করছেন, নাভ্রাতিলোভাকে আরও চড়া সুরে আক্রমণ করে দীপক লেখেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, আপনি ভারতকে দেশপ্রেমী ভারতীয়দের চেয়ে বেশি ভালবাসতে পারবেন না। দক্ষিণপন্থা বলে ভারতে কিছু নেই। সব ভারতীয় একই সঙ্গে বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থী।’’ নাভ্রাতিলোভা এতে বেশ আহতই হন। তবু ভদ্রতা ধরে রেখে জবাব দেন, ‘‘বেশ, তা হলে আমরা আর কিছু বলছি না। আপনারা বলছেন, আমরা উদ্বিগ্ন নই। আমরা কিছু বললেই আপনি বলছেন— ‘শাট আপ, আপনারা কিছুই জানেন না, আমরা ভারতকে বেশি ভালবাসি’। ঠিক আছে তাহলে...’’। এই মন্তব্যে নাভ্রাতিলোভার অভিমান স্পষ্ট। বোঝা গিয়েছে যে ভারতীয়দের থেকে এমন ব্যবহার পেয়ে তিনি বিস্মিত। তবু মেজাজ হারাননি এক বারের জন্যও।

আরও পড়ুন:

বন্ধুরা কোথায়? কী ভাবে ধরব তাদের? কানহাইয়াকে প্রশ্ন পুলিশের

ধরা দিতে নির্দেশ কোর্টের, মাঝরাতে থানায় খালিদরা

নাভ্রার মতো এক জন কিংবদন্তী সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন, বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে টুইটারে নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন, আক্রমণের মোকাবিলা করছেন, এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। আসলে ভারত সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদন তিনি টুইট করার প্রেক্ষিতে যে বিতর্ক শুরু, তাতে কয়েক ঘন্টা ধরে অংশ নিয়ে নাভ্রা বুঝিয়ে দেন, ভারত তাঁর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নাভ্রাতিলোভার সেই বার্তা অনেক ভারতীয় ‘দেশপ্রেমী’ই ঠিক বুঝতে পারেননি। ফলে টেনিস কিংবন্তীকে লাগামছাড়া আক্রমণ চলতেই থাকে।

টুইটারে দীর্ঘ কথোপকথনে আরও অনেক আক্রমণেরই জবাব দেন মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। ভারতে আইএস হামলার আশঙ্কার কথা তুলে ধরে লেখা একটি টুইটের জবাবে তিনি লেখেন, ‘‘বিরোধিতা এক বিষয়, প্রতিবাদ আর একটি বিষয়। দেশদ্রোহ বা হিংসা ইত্যাদি আবার সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয়।’’ অন্য একটি আক্রমণাত্মক টুইটের জবাবে নাভ্রাতিলোভা লেখেন, ‘‘একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সহমত না হতে পারা কখনোই দেশদ্রোহ নয়। আপনার মন্তব্যই প্রমাণ করছে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক।’’ এক ব্যক্তি বিতর্কে মার্টিনাকে মনে করিয়ে দেন, কমিউনিস্ট শাসকদের থেকে বাঁচতে গণতান্ত্রিক আমেরিকায় আশ্রয় নিতে হয়েছিল তাঁকে। ভারতের গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা ‘হিংসাত্মক কমিউনিস্ট’দের এখন কী করে সমর্থন করছেন নাভ্রা? তোলা হয় সেই প্রশ্ন। এর জবাবে নাভ্রাতিলোভা বলেন, ‘‘আমি কোনও হিংসাকেই সমর্থন করি না— ডানই হোক বা বাম।’’

রাজনৈতিক এবং সামাজিক ইস্যু নিয়ে নাভ্রাতিলোভার মন্তব্য বা বিতর্কে অংশগ্রহণ এই প্রথম নয়। আমেরিকার বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতেও একাদিকবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন নাভ্রা। কিন্তু ভারত সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বেনজির আক্রমণের মুখে পড়তে হল ৫৯ বছরের টেনিস তারকাকে। ভারতের স্বঘোষিত দেশপ্রেমীরা নাভ্রাতিলোভাকেও ভারত বিরোধী বলে দিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন