দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে মরিয়া বেজিঙের হুমকি-বার্তা নয়াদিল্লিকে

আমেরিকার হাতে তামাক খাওয়া ছেড়ে, বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই দক্ষিণ চিন সাগর বিতর্কের রফা করুক ভারত। বলছে চিন। আগামি ১২ তারিখ হেগ-এ বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপূঞ্জের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যালের রায় দেওয়ার দিন। তার চার দিন আগে নয়াদিল্লিকে এই মর্মেই হুঁশিয়ারি দিল বেজিং।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ২০:২৩
Share:

আমেরিকার হাতে তামাক খাওয়া ছেড়ে, বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই দক্ষিণ চিন সাগর বিতর্কের রফা করুক ভারত। বলছে চিন। আগামি ১২ তারিখ হেগ-এ বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপূঞ্জের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যালের রায় দেওয়ার দিন। তার চার দিন আগে নয়াদিল্লিকে এই মর্মেই হুঁশিয়ারি দিল বেজিং। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি সাউথ ব্লককে দেওয়া গোপন বার্তায় ড্রাগনের দেশ এ কথাই বুঝিয়ে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় যাই হোক না কেন, ওয়াশিংটনের পোঁ ধরে দক্ষিণ চিনা সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর মত পদক্ষেপ তারা মেনে নেবে না। সাউথ ব্লককে এ কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ভারতের বেশ কিছু কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ এই মুহুর্তে বেজিং-এর কোর্টে পড়ে রয়েছে।

Advertisement

সরকারিভাবে ভারত এর কোনও উত্তর এখনও দেয়নি। বিষয়টিকে অবশ্যই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা ঘটনা যে ভারত-চিন সম্পর্ক এখন অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং সঙ্কটজনক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পরমাণু সরবরাহকারী সংস্থা বা এনএসজি-তে প্রবেশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে চিনের প্রাচীর। ভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্ব মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে পরমাণু অস্ত্র সম্প্রসারণে নিজেদের সদর্থক ভূমিকাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরতে এবং চিনকে বোঝাতে। কিন্তু তাই বলে, এনএসজি-র টিকিট পাওয়ার জন্য নিজেদের নিরাপত্তাকে জলাঞ্জলি দেওয়ার আদৌ পক্ষপাতী নন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং তাঁর টিম।

চিন গত তিন বছর ধরে দাবি করতে শুরু করেছে, দক্ষিণ চিন সাগরের সিংহভাগই তাদের নিজস্ব জলসীমা। দখলদারি সুনিশ্চিত করতে দক্ষিণ চিন সাগরের বিভিন্ন অংশে চিন কৃত্রিম দ্বীপও বানিয়েছে। কিন্তু আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ চিনের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব। দক্ষিণ চিন সাগর এত দিন ধরে আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবেই স্বীকৃত। সেই অঞ্চলকে আচমকা চিন নিজেদের এলাকা বলে দাবি করলেই যে তা মেনে নেওয়া হবে না, সে বার্তা চিনকে দিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। তা নিয়ে মার্কিন-চিন হুঁশিয়ারি-পাল্টা হুঁশিয়ারি সমানেই চলছে।

Advertisement

আরও পড়ুন- ধৃত তিন, আত্মঘাতী এক বন্দুকধারী! পরিকল্পিত হামলা, বললেন ওবামা

বিষয়টি ফিলিপিন্স বা ভিয়েতনামের পাশাপাশি ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নেও যথেষ্ট উদ্বেগের। আর তাই, কয়েক মাস আগেই আমেরিকার সঙ্গে পরামর্শের পর রীতিমত যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে অপারেশন ডেপ্লয়মেন্ট শুরু করে ভারত। অর্থাত্ চারটি অস্ত্রবোঝাই রণতরী দক্ষিণ চিন সাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টহল দিতে পাঠানো হয়। পুরোদস্তুর রণসাজে সজ্জিত ভারতীয় নৌবহর দক্ষিণ চিন সাগরে দাপিয়ে বেড়াবে এবং আড়াই মাস ধরে ওই সমুদ্রের আশেপাশে বিভিন্ন বন্দরে নোঙর করবে— এটা চিনা আগ্রাসনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছোড়া ছাড়া আর কিছুই নয়। বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি বেজিংও।

কিন্তু এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের আগে যথেষ্ট শঙ্কায় ড্রাগনের দেশ। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতকে এনএসজি-র গাজর দেখিয়ে এই সাগর-যুদ্ধে আমেরিকার বিরুদ্ধে নয়াদিল্লিকে পাশে পাওয়ার একটা প্রয়াস শুরু করেছেন চিনা কূটনীতিকেরা। নিঃসন্দেহে বিষয়টি ভারতের কাছে অত্যন্ত চ্যালে়ঞ্জের। ভারত এত দিন একই সঙ্গে আমেরিকা এবং চিনের সঙ্গে দ্বিস্তরীয় কূটনীতি চালিয়ে এসেছে। এক দিকে আমেরিকা, জাপান, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনামের মত দেশগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে রণতরী পাঠিয়ে চোখ লাল করে তাকিয়েছে বেজিং-এর দিকে। অন্য দিকে গত এপ্রিল মাসেই রিক (রাশিয়া-ভারত-চিন)-এর বৈঠকে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠক করে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন আলোচনার মাধ্যমেই বিতর্কের সমাধান করা হবে।

চিনের হুমকি এবং আদালতের রায় ঘোষণার পর ভারত কোন নীতি নিয়ে এগোয় এখন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন