তিস্তা নিয়ে মমতাকে বোঝান, আর্জি হাসিনার

সুষমা স্বরাজের হাত ধরে আকুল আবেদন জানলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা— ভারতের বিদেশমন্ত্রী যেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটু বোঝান। তিস্তার জলবণ্টন ও স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে মমতা যেন আপত্তি তুলে নেন। হাসিমুখে আজ ভারতের নতুন বিদেশমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান হাসিনা। আন্তরিক ভাবে দু’জনে কথাবার্তা বলেন। নরেন্দ্র মোদীর চিঠিটি সুষমা তুলে দেন হাসিনার হাতে।

Advertisement

কুদ্দুস আফ্রাদ

ঢাকা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৪ ০২:৫৫
Share:

মৈত্রীর বন্ধন। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার ঢাকায়।

সুষমা স্বরাজের হাত ধরে আকুল আবেদন জানলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা— ভারতের বিদেশমন্ত্রী যেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটু বোঝান। তিস্তার জলবণ্টন ও স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে মমতা যেন আপত্তি তুলে নেন।

Advertisement

হাসিমুখে আজ ভারতের নতুন বিদেশমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান হাসিনা। আন্তরিক ভাবে দু’জনে কথাবার্তা বলেন। নরেন্দ্র মোদীর চিঠিটি সুষমা তুলে দেন হাসিনার হাতে। এই চিঠিতে হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মোদী। হাসিনা চিঠিটি পড়ে বলেন, বিভিন্ন কারণে তাঁর জাপান সফর বাংলাদেশের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অনেক আলোচনা করেও তা পিছোনো যায়নি। সে জন্য নরেন্দ্র মোদীর শপথে থাকার আমন্ত্রণ রাখতে পারেননি। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিল্লি সফরে যাওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি। সুষমা বলেন, উত্তর-পূর্বের জঙ্গি সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ভারতকে যে ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ, এই আমলেও তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদী। হাসিনা বলেন, শুখা মরসুমে জলের সঙ্কটে বাংলাদেশের চাষবাস ভীষণ ভাবে মার খাচ্ছে। এই জন্যই বাংলাদেশের মানুষ তিস্তা চুক্তিটির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। সুষমা জবাবে বলেন, তিস্তা ও স্থলসীমা চুক্তি নিয়ে ঐকমত্য তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে নতুন সরকার। এ জন্য একটু সময় চান তাঁরা। মুখোমুখি আলোচনার পরে সুষমা বিদায় চাইলে হাত ধরে তাঁকে বাইরে নিয়ে আসেন হাসিনা। আলিঙ্গন করে বলেন, “জানি আপনারা আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করছেন। তবু বলব, মমতাকে একটু বোঝান। তিনি যেন আপত্তি তুলে নেন।” হেসে ঘাড় নাড়েন সুষমা।

কাল ঢাকা পৌঁছনোর পরে আজ সকালে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আব্দুল হাসান মাহমুদ আলির সঙ্গে প্রথমে প্রতিনিধি পর্যায়ের ও পরে মুখোমুখি বৈঠকে বসেন সুষমা। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী বৈঠকের পরে জানান, দু’দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ও আদানপ্রদান আরও সহজ করার বিষয়ে দুই প্রতিবেশী দেশ সহমত হয়েছে। এ জন্য ভিসানীতি সহজ করার ঘোষণা করেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। এ বার থেকে ৬৫ বছরের বেশি ও ১৩ বছরের কমবয়সী বাংলাদেশি নাগরিকদের সহজেই মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেবে ভারত। বাংলাদেশও তাদের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য ত্রিপুরায় পাঠানোর ছাড়পত্র দিচ্ছে ভারতকে। আলি বলেন, বাংলাদেশে সাত খুনের আসামি কলকাতায় ধরা পড়া নুর হোসেনকে ফেরত দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন সুষমা। সীমান্তে পাহারা আরও জোরদার করা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা বন্ধেও সহমত হয়েছে দুই দেশ।

Advertisement

তবে ভারত থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ফেরানো নিয়ে বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি।

সুষমা বৈঠকে বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তের সম্পর্ক। ভবিষ্যতেও তা অটুট থাকবে। ভারতের বিদেশনীতিতে বাংলাদেশের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এই কারণে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই সফরের জন্য তিনি ঢাকাকে বেছে নিয়েছেন। উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গিদের উচ্ছেদে সহযোগিতার জন্য ঢাকাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান সুষমা। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আকবরুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া যেমন সহজ করা হচ্ছে, তেমনই দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। মৈত্রী এক্সপ্রেসে আরও বাতানুকুল কামরা সংযোজন, যাত্রার সময় কমানো, ঢাকা থেকে শিলং হয়ে গুয়াহাটি পর্যন্ত বাস চলাচল ও সীমান্ত-হাটের সংখ্যা বাড়ানো নিয়েও ইতিবাচক কথা হয়েছে।

কাল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন সুষমা। তার পরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও বিরোধী নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে আলোচনা সেরে বিকেলেই দিল্লির বিমানে ওঠার কথা সুষমার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন