আফগানিস্তানের ক্ষমতা গত ১৫ অগস্ট রাত থেকে তালিবদের হাতে। রিপোর্ট বলছে, সেই হাত ক্রমশ শক্ত করছে খোদ আফগানিস্তানেরই অস্ত্র ভাণ্ডার।
বিদেশি অস্ত্রের বিপুল সম্ভার রয়েছে আফগানিস্তানে। ন্যাটোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আফগান সেনাকে গত কয়েকবছরে বিদেশ থেকে বার বার অস্ত্র পাঠানো হয়েছে। অস্ত্র পাঠিয়েছে আমেরিকা, পোল্যান্ড, কানাডার মতো একাধিক দেশ। সেই অস্ত্র এখন তালিবানদের দখলে।
এর পাশাপাশি আমেরিকার ন্যাটো বাহিনীর ছেড়ে যাওয়া আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও এতদিন আফগান সেনার কাছেই ছিল। তার অধিকাংশই এখন তালিবানের হাতে।
চরমপন্থী শরিয়তি আইন মানা শাসক তালিবান। তাদের সঙ্গে অত্যাধুনিক বিদেশি অস্ত্রের সম্ভার কতটা মারণাত্মক হতে পারে তা ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছেন না আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। অথচ এই পরিস্থিতিতে ওই অস্ত্রভাণ্ডার তালিবানদের হাতে যাওয়া আটকানোর কোনও উপায়ও দেখছেন না তারা।
কী কী অস্ত্র হাতে পেয়েছে তালিবান, তার একটা আন্দাজ পাওয়া গিয়েছে নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ফুটেজে।
তবে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ বেড়েছে ন্যাটো বাহিনীর বায়োমেট্রিক যন্ত্র তালিবানদের হাতে আসায়।
আমেরিকার সেনাবাহিনীর ওই বায়োমেট্রিক যন্ত্র আদতে আফগানবাসীর আঙুলের ছাপ এবং চোখের মণি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বায়োমেট্রিক তথ্যের বিপুল ভাণ্ডার। নাম এইচআইআইডিই।
এই যন্ত্র ব্যবহার করে চাইলে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডারেও ঢোকা যায়। শুধু তা-ই নয়, বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, আফগান-আমেরিকান যৌথবাহিনীকে কারা সাহায্য করেছিল তা জানতেও সাহায্য করতে পারে এইচআইআইডিই। তবে এই যন্ত্র হাতে পাওয়ার পর আফগানবাসীর ব্যক্তিগত তথ্য তালিবানের কাছে কতটা ফাঁস হয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি।
এ তো গেল তথ্য-অস্ত্রের কথা। যা অপব্যবহারে মারাত্মক আকার নিতে পারে বলে আতঙ্কে ভুগছেন পর্যবেক্ষকরা। পাশাপাশি তালিবরা দখল নিয়েছে আফগানিস্তানের ‘যুদ্ধপতি’র প্রাসাদেরও। জেনারেল আবদুল রশিদ দোস্তম। আফগানিস্তানে ন্যাটোর অন্যতম সমর্থক ছিলেন তিনি। তাঁকে যুদ্ধপতি সম্বোধন করা হয় আফগানিস্তানে। দোস্তম প্রাসাদে বসে সোনার পাত্রে চা খেতে দেখা গিয়েছে তালিবদের।
যুদ্ধপতি দস্টুমের বাড়িতে অস্ত্র থাকবে, তা বলে দিতে হয় না। সে ক্ষেত্রে সেই অস্ত্রও আপাতত তালিবানের দখলেই।
ভিডিয়ো ফুটেজে তালিবান নেতাদের হাতে গাড়ি বোঝাই করে অস্ত্র তুলে দিতে দেখা গিয়েছে আফগান সেনাদের। তাতে এম ১৬এ২, এম৪ কার্বাইন এবং কোল্ট কানাডা সি৭ জাতীয় অ্যাসল্ট রাইফেল রয়েছে।
তার সঙ্গে রয়েছে অত্যাধুনিক কামানও। এম১৯৮ হাউইৎজার নামের ওই কামান তৈরি হয়েছিল আমেরিকার সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর জন্য। তালিবানদের বিরুদ্ধে ন্যাটো বাহিনীর যুদ্ধে এই কামান বহু ব্যবহৃত।
আরও একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে আফগানিস্তানের সেনা হেলিকপ্টার ব্ল্যাক হক পাহারা দিচ্ছে এক সশস্ত্র তালিব। এই ব্ল্যাক হকও আফগানিস্তানের জন্য বানিয়েছিল আমেরিকাই। সেনা ঘাঁটির ওই ফুটেজে একাধিক ব্ল্যাক হককে পাহারা দিতে দেখা গিয়েছে তালিবান যোদ্ধাদের।
যেহেতু কুন্দুজের বিমান ঘাঁটিরও দখল নিয়েছে তালিবান, তাই ধরে নেওয়া হয়েছে দু’টি রাশিয়ান সেনা হেলিকপ্টার এবং আফগানিস্তানকে ভারতের পাঠানো এম-আই ২৪ অ্যাটাক হেলিকপ্টারও এখন তালিবানদের হস্তগত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ ভাবে অস্ত্রের দখল নিতে থাকলে তালিবানদের শক্তি বেড়ে তা অচিরেই বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছবে।