Abdulrazak Gurnah

Abdulrazak Gurnah: সাহিত্যে নোবেল আব্দুলরজাক গুরনাহের, আপসহীন ভাবে লিখে চলেছেন শিকড়হীন মানুষের বেদনা

প্রথম উপন্যাস ‘মেমরি অব ডিপার্চার’ (১৯৮৭)-এ তিনি তৃতীয় বিশ্বের বিপ্লব-স্বপ্নের সেই ভঙ্গুরতাকে লিখে রেখেছিলেন, যার সাক্ষী ছিল ভারতও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৩৫
Share:

আব্দুলরজাক গুরনাহ

সাহিত্যে ২০২১-এর নোবেল পুরস্কার পেলেন আব্দুলরজাক গুরনাহ্‌। ৭৩ বছর বয়সি তাঞ্জানিয়ার কথাসাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হল ‘ঔপনিবেশিকতার অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন সংগ্রাম এবং সংস্কৃতি ও মহাদেশীয় পরিসরে উদ্বাস্তু মানুষের কণ্ঠস্বরকে সাহসের সঙ্গে তুলে ধরার জন্য।’
আব্দুলরজাকের জন্ম পূর্ব আফ্রিকার জাঞ্জিবারে, ১৯৪৮ সালে। ১৯৬০-এর দশকে তিনি উদ্বাস্তু হিসেবে ইংল্যান্ডে উপস্থিত হন। ১৯৬৩-তে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা থেকে জাঞ্জিবার মুক্ত হয়। কিন্তু সেই সময় সে দেশে শুরু হয় আরব-বংশোদ্ভূতদের বিরুদ্ধে অত্যাচার এবং গণহত্যা। আব্দুলরজাক ও তাঁর পরিবার আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে পড়লে তাঁদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়। ১৯৮৪ সালের আগে তিনি আর স্বভূমিতে ফিরে যেতে পারেননি।

Advertisement

এই ভূমিচ্যুত হওয়ার বেদনা তাঁকে উত্তর-ঔপনিবেশিকতাবাদের দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করতে বাধ্য করে। পরবর্তী কালে তিনি ক্যান্টারবেরির ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট-এ ইংরেজি এবং উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। হাতে তুলে নেন উওলে সোইঙ্কা, গুগি ওয়া থিয়োঙ্গো বা সলমন রুশদির মতো লেখকদের সাহিত্য বিষয়ে পাঠদানের কাজ। পাশাপাশি নিজেও কলম ধরেন ভূমিচ্যুত মানুষের বেদনা ও ফেলে আসা দেশের স্মৃতি ও সত্তাকে আশ্রয় করে।

তবে ইংরেজি সাহিত্যের মূলধারার চেনা ছক থেকে বেরিয়ে এসে উপনিবেশ-উত্তর চৈতন্যকে তুলে ধরাকেই প্রাথমিক কর্তব্য হিসেবে মনে করেন আব্দুলরজাক। ২০০৫-এ প্রকাশিত উপন্যাস ‘ডেসারশন’-এ তিনি এমন এক প্রেমকে তুলে ধরেন, যা তাঁর ভাষায় ‘সাম্রাজ্যবাদী রোমান্স’-এর একেবারে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে।

Advertisement

তাঁর উপন্যাস ও ছোটগল্পে আব্দুলরজাক সচেতন ভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন প্রাক-ঔপনিবেশিক আফ্রিকার ‘ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড়’-গোছের স্মৃতিকাতরতার পুনর্নিমাণকে। বরং দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা দাস ব্যবসা, ভারত মহাসাগরের দ্বীপভূমিগুলির আকাশে ঘনিয়ে থাকা বিভিন্ন পরস্পর-বিরোধী সংস্কৃতির মেঘকে তিনি লিখতে চেয়েছেন। দেখাতে চেয়েছেন তথাকথিত বিশ্বায়নের অনেক আগেই ভারত মহাসাগরে বাণিজ্য ও রাজনীতি জাঞ্জিবারের মতো দ্বীপভূমিতে বহুমাত্রিক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছিল।

রুশদির মতো আব্দুলরজাকও যে কোনও ‘পিছুটান’-কে প্রশ্ন করেন তাঁর উপন্যাসে। সেই ‘টান’-এর পিছনে ক্রিয়াশীল উপনিবেশ ও তার এখনও সক্রিয় বন্ধনগুলিকে বুঝতে চান বারবার। প্রথম উপন্যাস ‘মেমরি অব ডিপার্চার’ (১৯৮৭)-এ তিনি তৃতীয় বিশ্বের বিপ্লব-স্বপ্নের সেই ভঙ্গুরতাকে লিখে রেখেছিলেন, যার সাক্ষী ছিল এশিয়া ও আফ্রিকার অগণিত দেশের সঙ্গে ভারতও। ১৯৮৮ সালের উপন্যাস ‘পিলগ্রিমস’-এ তিনি এমন এক যাত্রাকে আঁকেন, যেখানে আত্মপরিচয়, স্মৃতি এবং আত্মীয়তার বোধগুলি চলে আসে প্রশ্নের সামনে। ১৯৯৪-এর উপন্যাস ‘প্যারাডাইস’ তাঁকে আবিশ্ব খ্যাতি এনে দেয়। পু্রাণকথার সঙ্গে সংলাপ ঘটে সাম্প্রতিকের। উপনিবেশ-নির্ধারিত উপন্যাসের সীমানা অতিক্রম করে এই আখ্যান। ১৯৯৬-এর ‘অ্যাডমায়ারিং সাইলেন্স’ এবং ২০০১-এর ‘বাই দ্য সি’-তে নীরবতাকে ভূমিচ্যুত মানুষের এক বড় অস্ত্র হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস ‘আফটারলাইভস’ প্রকাশিত হয়েছে ২০২০-তে।

এখনও পর্যন্ত ১০টি উপন্যাস ও একটি ছোটগল্পের সংকলন প্রকাশিত হয়েছে আব্দুলরজাকের। উত্তর-ঔপনিবেশিক চিন্তকদের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য মানুষ হিসেবে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন। তাঁর নোবেল প্রাপ্তি এই বিশেষ ঘরানার সাহিত্যের দিকে আবার নজর ফেরাল বিশ্বের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন