ব্রেক্সিট ভোটে শেষ পর্যন্ত হেরেই গেলেন টেরেসা মে।
এখানকার স্থানীয় সময় সন্ধে সাতটায় (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে বারোটা) হাউস অব পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ভোট দিলেন এমপি-রা। এই চুক্তি নিয়ে গত পাঁচ দিন ধরে বিতর্ক চলেছে হাউসে। আজ ভোটের ঠিক আগে চুক্তির পক্ষে চূড়ান্ত সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগে সকালে সব দলের এমপিদের উদ্দেশে এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘আপনারা এমন কিছু করবেন না, যাতে ব্রিটেনের মানুষ প্যাঁচে পড়েন।’’ কিন্তু মে যা-ই বলুন, শেষ পর্যন্ত শোচনীয় ভাবে হারতে হল মে-কে। শুধু বিরোধী এমপিরা-ই নন, টেরেসার প্রস্তাবিত চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিলেন তাঁর নিজের দলেরই শ’খানেক এমপি।
ভোটে যদি এই হারের পরে এ বারে কী হবে? ব্রেক্সিট, অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য ব্রিটেনের সামনে এখন যে কয়েকটি পথ রয়েছে সেগুলি হল—
১। চুক্তিহীন ব্রেক্সিট। অর্থাৎ, ইইউ-এর সঙ্গে কোনও সমঝোতা না করেই
ইইউ ছেড়ে যাওয়া।
২। বিরোধীদের সঙ্গে ফের আলোচনা করে নতুন একটি ব্রেক্সিট চুক্তির প্রস্তাব দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান চুক্তির যে সব অংশ (যেমন আয়ারল্যান্ড সীমান্ত সমস্যা) নিয়ে বিরোধীদের আপত্তি রয়েছে, সেগুলি পাল্টাতে হবে টেরেসাকে।
৩। এমপি-রা যদি তা-ও টেরেসার প্রস্তাবে সম্মত না হন, তা হলে ব্রেক্সিট চুক্তি কী হবে, তা ভোটাভুটি করে ঠিক করতে হবে পার্লামেন্টকেই। ব্রিটিশ রাজনীতির ইতিহাসে যা প্রথম। এখন যে হেতু পার্লামেন্টের হাওয়া ‘নরম ব্রেক্সিট’-এর পক্ষে, তাই পার্লামেন্টের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি টেরেসা-র চুক্তির মতো ‘কঠোর’ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। আর তা হলে ইইউ-এর সঙ্গে ব্রিটেনের সদ্ভাব বজায় থাকার সম্ভাবনাও বেশি।
৪। হাল ছেড়ে দিয়ে টেরেসা মে ইস্তফা দিতে পারেন। তা হলে কনজ়ারভেটিভ দলকে নতুন নেতা নির্বাচন করতে হবে এবং সেই নেতা তখন ঠিক করবেন, কোন ব্রেক্সিট চুক্তি শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে।
৫। পার্লামেন্টে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনলে আরও প্যাঁচে পড়বেন টেরেসা। ভোটে হারলে ১৪ দিনের মধ্যে নতুন সরকার গঠন করতে হবে কনজ়ারভেটিভ দলকে। না পারলে সাধারণ নির্বাচন হবে দেশে। মুখে বিশেষ কিছু না বললেও ঠিক এটাই চাইছেন বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। ভোটে হারের পরে সেই হিসেব করেই অনাস্থা চেয়ে সওয়াল করেন তিনি।
৬। আলোচনার জন্য সময় চেয়ে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া তিন মাস পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারে ব্রিটিশ সরকার। এর আগে ইউরোপীয় আদালত বলেই দিয়েছে, ব্রেক্সিট কবে হবে বা আদৌ হবে কি না, তা সম্পূর্ণ ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত। ইইউ-এর এ বিষয়ে কিছু বলার এক্তিয়ার নেই।
৭। সরকার যদি শেষ পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তে না-ই পৌঁছয়, তা হলে ফের গণভোট হবে ব্রিটেনে। সাধারণ মানুষকে আর এক বার জিজ্ঞাসা করা হবে, তাঁরা কি সত্যিই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চান? ২০১৬ সালের ২৩ জুন ব্রিটেনে যে গণভোট হয়েছিল, তাতে ৫১.৯ শতাংশ ব্রিটিশ বলেছিলেন, তাঁরা ইইউ ছাড়ার পক্ষে। গত আড়াই বছরের টালবাহানায় তাঁদের মনোভাব পাল্টেছে কি না, তা বোঝা যাবে আর এক বার গণভোট হলেই।
২৯ মার্চ ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ব্রিটেনের। আগামী আড়াই মাসে কী হতে চলেছে, তার একটা ইঙ্গিত মিলবে আজকের ভোটে। ভোট দিচ্ছেন লেবার এমপি, টিউলিপ সিদ্দিকও। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনার বোনঝি টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর সিজ়েরিয়েন অস্ত্রোপচার পিছিয়ে দিয়েছেন। কালই টিউলিপ বলেন, ‘‘চিকিৎসকের পরামর্শ না-মেনেই আমি ছেলের জন্ম দু’দিন পিছিয়ে দিলাম। এই আশায় যে, আমার ছেলে এমন এক ব্রিটেনে জন্ম নেবে, যেখানে ইইউ-এর সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক অনেক মজবুত। তাই এই ঝুঁকি নিলাম।’’