গুলশনে কূটনীতিক এলাকার সেই রেস্তোরাঁর বাইরে রক্ষীরা। ছবি: এপি।
শুক্রবার রাতে ঢাকার গুলশনে কূটনৈতিক এলাকায় একটি স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় হানা দিয়ে অন্তত ২০ জনকে পণবন্দি করেছে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা। বন্দিদের মধ্যে ইতালি ও জাপানের নাগরিক মিলিয়ে অন্তত ৭ জন বিদেশি রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গুলির লড়াইয়ে বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং রবিউল নামে এক অতিরিক্ত কমিশনার নিহত হয়েছেন বলে গভীর রাতে সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর। জখম হয়েছেন অন্তত ১০ জন পুলিশ। দুই হানাদারও নিহত হয়েছে বলে একটি সূত্রে বলা হলেও সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। এই ঘটনার পিছনে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) রয়েছে বলেও পিটিআই-এর খবর।
হোটেলের ছাদ থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে আসা এক কর্মী জানিয়েছেন, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আট-দশ জন সশস্ত্র যুবক বোমা ফাটাতে ফাটাতে ‘হোলি আর্টিজান বেকারি’ নামে রেস্তোরাঁটিতে ঢোকে। পুলিশ পৌঁছলে দুষ্কৃতীরা তাদের দিকে গুলি ছুড়তে থাকে। এলাকা খালি করে রেস্তোরাঁটি ঘিরে ফেলে পুলিশ।
রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিজি বেনজির আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, কিছু ‘বিপথগামী’ যুবক সশস্ত্র অবস্থায় রেস্তোরাঁটিতে ঢুকেছে। তারা সংখ্যায় কত জন বলা সম্ভব নয়। যাঁরা খেতে গিয়েছিলেন, এমন জনা কুড়ি সেখানে আটকে পড়েছেন। অভিযানের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দেন ডিজি। রেস্তোরাঁর দু’কিলোমিটার দূরে সরিয়ে দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমকে।
রেস্তোরাঁটির দু’কিলোমিটারের মধ্যেই ভারতীয় দূতাবাস। দূতাবাস সূত্রে জানানো হয়েছে, সব কর্মীই নিরাপদ। মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, কারা এই কাজ করেছে স্পষ্ট নয়। ঢাকায় মার্কিন নাগরিকদের বাড়তি সতর্ক থাকার আবেদনও জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র।
পরে নিজস্ব প্রচার সংস্থার মাধ্যমে আইএস হামলার দায় নিয়েছে বলে জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। আইএসের ওই প্রচার সংস্থার দাবি, কাউকে পণবন্দি করে রাখা হয়নি। রেস্তোরাঁয় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সকলকেই মেরে ফেলা হয়েছে এবং নিহতের সংখ্যা কুড়ির বেশি। বাংলাদেশ সরকারের তরফে এই দাবি সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শুক্রবারই খালিদ সাইফুল্লা নামে জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন)-এর প্রথম সারির নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ১৫ জুন মাদারিপুরে সরকারি কলেজের এক শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর উপরে হামলার পরিকল্পনা করার অভিযোগ রয়েছে। জঙ্গিদের দাবি সাইফুল্লাকে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে যেতে দিতে হবে। পাশাপাশি, তাদেরও নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সূত্রের খবর আরও একটি দাবি জঙ্গিরা জানিয়েছে। কিন্তু কী সেই দাবি, তা সরকারের তরফে জানানো হয়নি।
এ দিন রাতেই চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যে সব যুদ্ধবিমান রয়েছে তাদের সরিয়ে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, জঙ্গি আক্রমণের আশঙ্কা থেকেই এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।