১৯ বার রেস জিতে রেকর্ড করেছে পোর্শে।
রেস বললেই মাথায় আসে গতি আর সময়ের লড়াই। একদিকে গতির কাঁটা যেমন বাড়তে থাকে, তেমনই কম সময়ে রেস শেষ করার জন্যে গাড়ি ও চালক— দুই-ই এক সঙ্গে কাজ করতে থাকে। প্রায় ৯৫ বছরের পুরনো একটা রেস কিন্তু এই সময়ের হিসেবকে একেবারে বদলে দিয়েছে ২৪ ঘণ্টায়। হ্যাঁ, ঠিকই পড়লেন, ২৪ ঘণ্টার রেস।
সাল ১৯২৩।ফ্রান্সের লে মান্স শহরের কাছে প্রথমবার এই রেস শুরু হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা পেরিয়ে মানুষ তখন আবার স্বাভাবিক ছন্দে। এর মধ্যে সেরার সেরা শিরোপা লাভের জন্যে মোটরগাড়িগুলি বিভিন্ন রেসে অংশগ্রহণ করতে থাকে। নামী দামি কিছু গাড়ি নির্মাতা সংস্থা এবং কিছু চালক মিলে এই রেস শুরু করে। ২৪ ঘণ্টার একটানা এই রেস বর্তমানে কুলীন রেসগুলির মধ্যে অন্যতম। বলা হয় ধৈর্য এবং একাগ্রতার এমন অগ্নিপরীক্ষা আর একটাও নেই।
সেই সময় এত বিজ্ঞাপনের যুগ ছিল না। ফলে গাড়ি প্রস্তুতকারকদের কাছে এই রেসে জেতার থেকে বড় বিজ্ঞাপন কিছু ছিল না। যে গাড়ি জিতবে, তারাই সেরার শিরোপা পাবে। তাদের গাড়ি সাধারণ মানুষ বেশি কিনবে, এই ছিল হিসাব। ফলে এই সেরার সেরা হতে গিয়ে মোটরগাড়ি কোম্পানিগুলির যেমন একটা ঠান্ডা লড়াই চলত। চালকদের মধ্যেও তার আঁচ পাওয়া যেত। ফোর্ডের সঙ্গে ফেরারি, বেন্টলির সঙ্গে পোর্শে, লড়াই ছিল সমানে সমানে।
আরও পড়ুন: এই জঙ্গলের গাছপালা কেন এরকম অদ্ভুত দেখতে? এখনও কেউ জানে না
আগে একজন ড্রাইভার দিয়ে শুরু হলেও এখন দুই থেকে তিন জন ড্রাইভার মিলে একটা গাড়ি চালায়।লে মান্স মোটরগাড়ি নির্মাতাদের জন্যেও কঠিন ফাঁদ।তিন জন চালক থাকলেও গাড়ি সেই একটাই। সামান্য একটা ব্রেক শু থেকে টার্বোচার্জারের মাথার স্ক্রু– একটু এদিক ওদিক হলে শুধু রেস নয়, জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হতে পারে।শুধু চালক নয়, গাড়ি এসে দর্শকদের ওপর দিয়ে চলে গিয়েছে, তাতে প্রাণহানি ঘটেছে, এরকম ঘটনারও সাক্ষী লে মান্স। কিন্তু তাতেও উন্মাদনা কমা তো দূরের কথা, বরং আর মাত্র ৫ বছর বাকি ১০০ বছরের তালিকায় নিজের নাম তুলতে।
বলাই বাহুল্য, বিশেষ রকমের গাড়ি প্রস্তুত করা হয় এই রেসের জন্যে। এলএমপি ১ এবং ২, দুটো বিভাগ রয়েছে।লে মান্স প্রোটোটাইপ বা এলএমপি গাড়িগুলি আপনি সাধারণ রাস্তায় দেখতে পাবেন না, কিনতেও পারবেন না। বিশেষ ভাবে প্রস্তুত করা এই গাড়ি টানা ৬০ ঘণ্টা পরীক্ষাকেন্দ্রে চালিয়ে দেখা হয় ২৪ ঘণ্টার রেসের জন্য নির্ভরযোগ্য কিনা। এছাড়াও জিটি বিভাগে বিভিন্ন রেসিং গাড়ি অংশগ্রহণ করতে পারে, কোনও গ্রুপ বা ব্যক্তিবিশেষ প্রফেশনাল বা অ্যামেচার, যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারেন।
শুধু চালক বা গাড়ি নয়, যারা ক্রু মেম্বার এবং ইঞ্জিনিয়ারহিসেবে থাকেন, তাদের ওপর চাপ আরও বেশি। প্রতি মুহুর্তে গাড়ির দিকে নজর রাখতে হয় তাদের। একটা ছোট্ট ভুলের জন্যে একটা গোটা রেস হেরে যেতে পারে তাদের দল। রেস শুরু হওয়ার আগে থেকে রেস হয়ে যাওয়ার পরেও যাদের একটানা কাজ করে যেতে হয়, তারা হচ্ছেন এঁরা।
আরও পড়ুন: এ শহরে সাইকেল চালালেই মিলবে এক বোতল বিয়ার!
সব থেকে বেশি, ১৯ বার জিতে রেকর্ড করেছে পোর্শে। ২৪ ঘণ্টার রেসে একটা গাড়িকে কমপক্ষে পাঁচ হাজার কিলোমিটার রেস করতে হয়।অর্থাৎ একটা সাধারণ ফর্মুলা ওয়ান রেসের সঙ্গে তুলনা করলে প্রায় ১৮ গুন বেশি! সার্কিট ডে লা সার্থে, ১৩.৭ কিমির এই ট্র্যাককে সময়ের সঙ্গে কিছু সংশোধন করা হয়েছে নিরাপত্তার খাতিরে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লে মান্স নিয়ে সিনেমা, গেম সবই তৈরি হয়েছে। একাধিক ডকুমেন্টারিতে গাড়ির বিবর্তন থেকে দুর্ঘটনা, সব নিয়ে কাজ হয়েছে। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাধারণত এই রেস হয়ে থাকে। একদিকে যখন গরম, আর্দ্রতা বেশি, তার মধ্যে এভাবে বন্ধ গাড়ির মধ্যে রেস করা।এর সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হলে আবার সাবধানে গাড়ি চালানো, আরও বেশি একাগ্রতার পরীক্ষা। সামনের বছর ১৬ জুন থেকে শুরু হবে এই রেস, আবার সারা পৃথিবীর রেস ও গাড়ি প্রেমিকদের উন্মাদনা শুরু হবে লে মান্স নিয়ে।