Sweden

জাতীয়তাবাদের জোর বদলে দিয়েছে সব কিছু

সুইডেন শীতপ্রধান দেশ। মানুষগুলোও খুব অন্তর্মুখী। খেলাধুলোর ব্যক্তিগত ইভেন্টে সুইডিশরা খুবই ভাল। কিন্তু দলগত খেলাতেও যে কত ভাল সেটা আমি অন্তত আগে জানতাম না।

Advertisement

স্নেহাংশু কুণ্ডু

উপসলা (সুইডেন) শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০১:৫৫
Share:

কলকাতার ছেলে আমি। ফুটবল ভালবাসি, নিজে খেলেছিও। সুইডেনের উপসলা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করছি বছর দশেক। কিন্তু ফুটবলের টান কাটিয়ে উঠতে পারিনি।

Advertisement

সুইডেন শীতপ্রধান দেশ। মানুষগুলোও খুব অন্তর্মুখী। খেলাধুলোর ব্যক্তিগত ইভেন্টে সুইডিশরা খুবই ভাল। কিন্তু দলগত খেলাতেও যে কত ভাল সেটা আমি অন্তত আগে জানতাম না। এখানেও আমাদের মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাব ফুটবল আছে। কিন্তু তা নিয়ে তেমন মাতামাতি নেই। সুইডেন বিশ্বকাপ খেললেও কখনওই ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বা জার্মানির মতো ছাপ ফেলেনি আমার মনে।

যা বলছিলাম, শেষ ১০ বছর সুইডেনে থাকাকালীন আমি কখনও সুইডিশদের মধ্যে সে রকম উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ দেখিনি, অন্তত এই উপসলা শহরটাতে। কিন্তু এ বারের আবহটা একেবারেই অন্য রকম। মানুষের মধ্যে কী উত্তেজনা! জায়গায় জায়গায় বড় স্ক্রিনে খেলা দেখানো হচ্ছে। শিশু থেকে প্রবীণ, সবাই সেখানে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে, হাতে পতাকা নিয়ে, মাথায় ভাইকিং ক্রাউন পরে টিমের জন্য গলা ফাটাচ্ছে। কারও কারও হাতে আবার বিয়ারের গ্লাস।

Advertisement

কী এমন হল, যা সবাইকে এমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলল? বিশেষ করে এই ফুটবল টিমটাকে? তবে কি জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচের খোঁচাটা তাতিয়ে দিয়েছে ওঁদের? বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ে জ‌্লাটান বলেছিলেন, তিনি দলে নেই,
সুতরাং সুইডিশ টিম রাশিয়া বেড়িয়ে চলে আসবে। কাজের কাজ কিচ্ছু করতে পারবে না। এমন একটা মন্তব্যের পরে টিমটা কি প্রমাণ করতে চাইছে যে, জ্লাটানের উপরে তারা নির্ভরশীল নয়? এগারো জন খেলোয়াড় কী অসাধারণ দায়বদ্ধতা নিয়ে খেলছেন! ক্যাপ্টেন আন্দ্রিয়াস গ্রাঙ্কভিস্ত সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কোচ জাঁ অ্যান্দারসঁ-র অবদানও কম নয়।

আমার মনে হয়, এ সবের কারণ দু’টো। এক, জ্লাটানের কটূক্তি। দুই, আয়োজক রাশিয়া। যারা খেলাধুলো থেকে রাজনীতি, সবেতেই খুব শক্ত প্রতিপক্ষ। এটাও নতুন করে জাতীয়তাবাদকে জোরালো করে তুলেছে। রাশিয়ার সামরিক সক্রিয়তার জেরে সুইডিশ সরকার তো ক’দিন আগে রীতিমতো লিফলেট ছাপিয়ে জনতাকে জানিয়েছে, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে গেলে কী কী করতে হবে।

ফুটবল টিমটা এখন চায়, গোটা বিশ্বের কাছে নিজেদের প্রমাণ করতে। ১৯৫৮ সালে ফাইনাল খেলে হেরেছিল সুইডেন। ১৯৯৪ সালে তৃতীয় হয়েছিল। এ ছাড়া বিশ্বকাপে এ দেশের তেমন কোনও পারফরম্যান্স আমার মনে পড়ে না। ইংল্যান্ডের ‘হ্যারিকেন’ থামিয়ে সুইডেন এ বারের সেমিফাইনালে যেতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার। মন বলছে, চমকে দেওয়ার মতো একটা ফলাফল দেখলেও দেখতে পারি আমরা।

ব্রাজিলের অন্ধ ভক্ত আমি। কিন্তু এই প্রথম বার মনে হচ্ছে, সুইডেনের জেতা উচিত। যে জয়টা হবে এত পরিশ্রম ও দায়বদ্ধতার ফসল। থ্রি চিয়ার্স টু সুইডিশ ফুটবল টিম। লিকা তিল... গুড লাক!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন