গন্তব্যে পৌঁছতে যাত্রীদের পাড়ি দিতে হয় ষোলো হাজার সাতশো কিলোমিটার। ছবি: এএফপি।
একটানা ১৭ ঘণ্টা ৫২ মিনিট আকাশে কাটিয়ে দীর্ঘতম বিমানযাত্রার শেষে নিউ ইয়র্কের নেওয়ার্ক বিমানবন্দরে অবতরণ করল সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ‘এস কিউ ২২’ বিমান। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকে বৃহস্পতিবার ১৫০ জন যাত্রী এবং দু’জন চালক-সহ ১৭ জন বিমানকর্মীকে নিয়ে রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল বিমানটি। গন্তব্যে পৌঁছতে যাত্রীদের পাড়ি দিতে হয় ষোলো হাজার সাতশো কিলোমিটার।
প্রাথমিক উত্তেজনা কাটিয়ে ওঠার পরে আকাশে এই দীর্ঘ সময় কাটানো তো আর মুখের কথা নয়। বিমানের আসনে বসে এতটা সময় কী করে কাটাবেন যাত্রীরা?
বিমানটি আকাশে ওড়ার আগে কয়েক জন যাত্রীকে প্রশ্নটি করা হয়েছিল। তথ্য প্রযুক্তি কর্মী বাহান্ন বছরের পেগি অ্যানের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘এটা তো ভেবে দেখিনি! ঘুমবো, টিভি দেখব, নিজের কাজ করব হয়তো...’’ সিঙ্গাপুরের ইঞ্জিনিয়ার ড্যানি ওং-এর মতো কেউ-কেউ আবার স্রেফ এই দীর্ঘতম বিমান যাত্রার অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতেই যাত্রা করেছিলেন। পরের উড়ানে ফিরে আসার টিকিট কেটেই বিমানে উঠেছিলেন তিনি। সিঙ্গাপুরের এক ইতালীয় ইলেকট্রনিক ডিজ়াইনার পিয়ের মেসাজিয়ো ‘ফার্স্ট টু ফ্লাই’ দলের সদস্য। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সব বিমানের প্রথম যাত্রার সাক্ষী থাকেন ওই দলের সদস্যরা। কী করবেন, সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, মজার জন্যেই এই বিমানে ওঠা, দেখা যাক!
তবে কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছিলেন, যাঁরা উপন্যাস পড়তে ভালবাসেন তাঁরা তো গোটা দু’য়েক অনায়াসেই শেষ করে ফেলতে পারবেন! বাকিদের জন্য রয়েছে ১,২০০ ঘণ্টার অডিয়ো-ভিসুয়াল বিনোদনের ব্যবস্থা। নিজের পছন্দ মতো বেছে নিলেই হল! দীর্ঘ যাত্রায় কেউ যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়েন তাই খাওয়া-দাওয়ার উপরে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ঢালাও অরগ্যানিক খাবারের ব্যবস্থাও রাখা হয়।
সিঙ্গাপুর-নিউ ইয়র্ক রুটের এই বিমান দীর্ঘতম বিমানযাত্রা হওয়ার লড়াইয়ে পিছনে ফেলে দিয়েছে ১৭ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের দোহা থেকে অকল্যান্ড যাওয়ার ‘ফ্লাইট ৯২১’-কে। এর আগেও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এই রুটে বিমান চালিয়েছে প্রায় ন’বছর। তবে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুটি ইঞ্জিন সমৃদ্ধ ‘এস কিউ ২২’ বিমানটির হাত ধরে ফের চালু করা হল এই পরিষেবা। কারণ, ওই আয়তনের বিমানগুলির চেয়ে ২৫ শতাংশ কম জ্বালানি ব্যবহার করে এই বিমানটি।