International news

মৃতপ্রায় শিশুদের কোলে তুলে নেন মহম্মদ

একমাত্র সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধী। এত কিছুর পরও তিনি মোটেই ভেঙে পড়েননি। হতাশায় ডুবে যাননি। বরং গত কুড়ি বছরে ৮০টি মৃত্যুপথযাত্রী শিশুকে নিজের আশ্রয়ে রেখে তাঁদের শেষ জীবন ভরিয়ে দিয়েছেন ভালবাসায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ১২:২৮
Share:

মৃত্যু পথযাত্রী শিশুদের এ ভাবেই গভীর ভালবাসায় ভরিয়ে দেন জিক।

মৃত্যুকে তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। ক্যানসারকে যুদ্ধে হারিয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন তিনি। কিন্তু হারিয়েছেন স্ত্রীকে। একমাত্র সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধী। এত কিছুর পরও তিনি মোটেই ভেঙে পড়েননি। হতাশায় ডুবে যাননি। বরং গত কুড়ি বছরে ৮০টি মৃত্যুপথযাত্রী শিশুকে নিজের আশ্রয়ে রেখে তাঁদের শেষ জীবন ভরিয়ে দিয়েছেন ভালবাসায়। তাদের জীবনের শেষের দিনগুলো স্বপ্নের মতো সুন্দর করে তোলেন নিজের সর্বস্বটুকু দিয়ে। তিনি মহম্মদ জিক।

Advertisement

জন্মসূত্রে মহম্মদ জিক লিবিয়ান। ১৯৭৮ সালে পড়াশুনা করতে মার্কিন মুলুকে আসেন তিনি। ১৯৮০ থেকে জিক ও তাঁর স্ত্রী অসুস্থ, দুঃস্থ শিশুদের শুশ্রূষার কাজ শুরু করেন লস অ্যাঞ্জেলেসে। তাঁদের একমাত্র সন্তান অ্যাডাম জন্ম থেকেই হাড়ের বিরল অসুখ আর বামনত্বের শিকার। সামান্য চলাফেরাটুকুও করতে পারে না সে। এই অ্যাডামের চিকিত্সার সূত্রেই দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের কাছাকাছি আসেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: মিনার খুঁড়তেই ৬৭৫ মহিলা ও শিশুর খুলি

Advertisement

জিকের ছেলে অ্যাডামের বয়স এখন উনিশ। স্ত্রী মারা গিয়েছেন বছর খানেক আগে। স্ত্রীর মৃত্যুতে তাঁর জীবনের একটা বড় অংশ শূন্য হয়ে গেলেও দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী শিশুদের সেবায় নিজেকে ডুবিয়ে নিজের সেই শূন্যতা আজ অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন জিক।

দিন কয়েক আগেও যে শিশুটিকে পরম মমত্বে আগলে রেখেছিলেন তিনি, সে ছিল দৃষ্টিশক্তিহীন এবং বধির। জিক বলেন, “আমি জানি ও শুনতে পেত না, দেখতে পেত না। কিন্তু আমি সব সময় ওর সঙ্গে কথা বলতাম। ওরও তো একটা মন ছিল, অনুভূতি ছিল।” জিকের কোলেই দিন কয়েক আগে মারা গিয়েছে ওই শিশু। পরম স্নেহে, মমতায় ওদের জীবনের শেষ দিনগুলির রোগ যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিতে চেষ্টা করেন তিনি। “আমি জানি ওরা বেশি দিন বাঁচবে না। তাই আমার সবটুকু দিয়ে শেষ মুহূর্তেটা ওদের ভালবাসা দেওয়ার চেষ্টা করি। বাকিটা ইশ্বরের হাতে”— বলেন জিক।

মেলিসা টেস্টার্মেন, যিনি এই দুঃস্থ শিশুদের জিকের ঠিকানায় পৌঁছে দেন তিনি বলেন, “কেউ যখন আমাদের ফোন করে আশ্রয়হীন মৃত্যুপথযাত্রী শিশুদের খোঁজ দেন, তখন আমাদের একটা নামই মাথায় আসে— মহম্মদ জিক।”

গোটা বিশ্বে যখন সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বলছে। নাম, পোশাকের মধ্যে মানুষ একে অপরের ধর্ম খুঁজতে, বিভেদ খুঁজতে ব্যস্ত, তখন ৬২ বছরের জিক গোটা দুনিয়াকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন ধর্ম নয়, আগে মানুষ। আর তাঁর একটাই জাত, একটাই পরিচয়, তিনি বাবা।

দেখুন ভিডিও:

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement