পর্যটকদের মূল আকর্ষণের কারণ হয়ে উঠেছে এই ডাক বাক্স। ছবি: সংগৃহীত।
এ যুগের ই-মেল, মেসেজ, হোয়াট্স্যাপ-এর সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে ২০১৩-র ১৪ জুলাই বন্ধই হয়ে যায় ভারতীয় ডাক ব্যবস্থার ১৬৩ বছরের প্রাচীন টেলিগ্রাম পরিষেবা। ডিজিটাল আগ্রাসনের যুগে কোনও রকমে টিকে রয়েছে বাকি ডাক পরিষেবাগুলি। এই রকম পরিস্থিতিতে হাজার হাজার পর্যটকদের মূল আকর্ষণের কারণ হয়ে উঠেছে একটি ডাক বাক্স। হ্যাঁ, লাল রঙের, গোল মাথাওয়ালা ছোট থামের মতো দেখতে। ঠিক যেমন দেখতে হয়! তা হলে তার জন্য এত হুড়োহুড়ি কীসের? আসলে এই ডাক বাক্সটি রয়েছে সমুদ্রের গভীরে। ভাবছেন গভীর সমুদ্রে ডুব দিয়ে চিঠি ফেলার ধুম! তা-ও কি সম্ভব! হ্যাঁ, এমনটাই হয় জাপানের সুসামি শহরে। এখানে ফি বছর কয়েকশো পর্যটক শুধুমাত্র এই ডাক বাক্সের টানেই ছুটে আসেন এখানে। ‘ডিপ সি ডাইভিং’ তো ছুতে।
জাপানের এই শহরে মূলত মৎস্যজীবী মানুষের বাস। প্রায় পাঁচ হাজার মৎস্যজীবী এখানে বসবাস করেন। ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে এখানে ‘কুমানোকোদো’ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে পর্যটন প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কীসের টানে পর্যটকরা আসবেন এখানে? কেন এই ‘আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’-এর টানে! জানা গিয়েছে, এক প্রবীণ পোস্টমাস্টারের পরামর্শতেই নাকি এই অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ‘মজার ডাকাতি’ ক্যালিফোর্নিয়ার দোকানে, মুহূর্তে ভাইরাল হল ভিডিও
সমুদ্র সৈকত থেকে ১০ মিটার দূরে এবং ৩২ ফুট গভীরে বসানো হয় ডাক বাক্সটি। ১৯৯৯ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার চিঠি পড়েছে এই ডাক বাক্সে। ২০০২ সালে ‘ডিপেস্ট আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’ হিসেবে গিনেস বুক-এ নামও ওঠে সুসামির এই ডাক বাক্সটির। কিন্তু জলের তলায় চিঠিপত্র টিকবে কী করে? স্থানীয় দোকানে পাওয়া যায় বিশেষ ওয়াটারপ্রুফ কাগজ, খাম আর বিশেষ মার্কার পেন। এই মার্কার পেন দিয়ে ওয়াটারপ্রুফ কাগজে চিঠি লিখে জলের নীচে গিয়ে নিজেদের চিঠি পোস্ট করেন পর্যটকরা। নির্দিষ্ট সময় পরপর পোস্টাল ডাইভাররা গিয়ে তুলে আনেন সেই চিঠিগুলি। তার পর সেগুলিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় স্থানীয় ডাকঘরে। এর মোটামুটি এক সপ্তাহের মধ্যে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয় চিঠিগুলিকে। ছ’ মাস অন্তর ডাকবাক্সটি তুলে আনা হয় রং আর মেরামতির জন্য। দু’টি ডাকবাস্ক এ ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রেখে আসা হয় সমুদ্রের তলায়। তবে এটাই বিশ্বের একমাত্র ‘আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’ নয়। প্রশান্ত মহাসাগরের ভানুয়াতো দ্বীপরাষ্ট্রে প্রথম শুরু হয়েছিল আন্ডারওয়াটার পোস্ট বক্স। পর্যটকদের জন্যই। তারই অনুকরণে জাপানের সুসামিতে তৈরি হয় এই ‘আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’।