গণভোটের রায় মেনেই ইস্তফার ঘোষণা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের। শুক্রবার লন্ডনে সাংবাদিক বৈঠকে। ছবি: এএফপি।
তিনি গর্বিত— গত ছ’বছর দেশটার প্রধানমন্ত্রী থাকতে পেরে। ব্রিটেন তার শক্তি বুঝিয়ে দিয়েছে। দেশবাসীর স্বপ্ন সত্যি করতে যথাসাধ্য করবেন তিনি।
শুনলে মনে হবে, ভোটে সদ্য-জেতা কোনও নেতার বক্তৃতা। এবং তখনই মস্ত ভুল হবে!
শুক্রবার সকালে লন্ডনের ডাউনিং স্ট্রিটের বিখ্যাত ১০ নম্বর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে যে ডেভিড ক্যামেরন কথাগুলো বলছিলেন, তিনি সদ্য-পরাজিত। ‘ব্রেক্সিট’ গণভোটের ফলাফল তখন স্পষ্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষেই রায় দিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা।
হেরে গিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘ সময় ধরে যিনি ব্রিটেনের ইইউ-এ থাকার পক্ষে প্রচার করে এসেছেন। গণভোটের ফল বেরোনোর পর আবেগের সঙ্গে লড়তে লড়তে যিনি ঘোষণা করলেন, অক্টোবর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালাবেন। তার পরেই ইস্তফা দেবেন। ওই অক্টোবরেই ক্যামেরনের দল কনজারভেটিভ পার্টির অধিবেশন। সেই সময়েই দেশ নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী? নাহ্, ‘ক্যাপ্টেন’! তেমনই তো বললেন ক্যামেরন। বললেন, ‘‘আগামী কিছু দিন এই জাহাজটাকে স্থিতিশীল রাখতে আমি যথাসাধ্য করব। কিন্তু দেশ যখন নতুন গন্তব্যে পৌঁছবে, তখন আমার আর ক্যাপ্টেন থাকার চেষ্টা করাটা ঠিক হবে না। দরকার নতুন নেতৃত্ব।’’
সাম্প্রতিক অতীতে হয়তো এমন কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে আর কোনও রাষ্ট্রনেতাকে পড়তে হয়নি। যেখানে একটা গণভোটে তাঁকে কার্যত বাজি রাখতে হয়েছিল নিজের রাজনৈতিক জীবন। যেখানে দলেরই একাংশ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। গোটা ব্রিটিশ মন্ত্রিসভাটাই দু’ভাগ হয়ে গিয়েছিল। বিচারমন্ত্রী মাইকেল গোভের নেতৃত্বে অন্তত ৬ জন মন্ত্রী বিদ্রোহ করে বসেছিলেন। গোভ এবং লন্ডনের প্রাক্তন মেয়র বরিস জনসন— দু’জনেই দাবি করেছিলেন, ইইউ-তে থেকেও ব্রিটেনের পক্ষে ঢালাও অভিবাসীর সংখ্যায় রাশ টানা সম্ভব হবে বলে জনতাকে ভুল বোঝাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
সবিস্তার পড়তে উপরে ক্লিক করুন।
ক্যামেরনের পাল্টা যুক্তি ছিল, ইইউ-এর সঙ্গে মাস কয়েক আগের বৈঠকে ব্রিটেনের জন্য ‘বিশেষ সুবিধে’ আদায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন তিনি। তাই ইইউ থেকে বেরোনোটা ভুল হবে। এর পরেও গণভোটের পথে হেঁটেছেন তিনি। তখনই বলা হচ্ছিল, গণভোট যা-ই বলুক, দলের মধ্যেই অনাস্থার ঝড়ের মুখে পড়তে চলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তবু বদল হয়নি তাঁর অবস্থানে।
আজ ক্যামেরন বলেছেন, ‘‘একমাত্র যে ভাবে লড়াইটা লড়তে পারতাম, সে ভাবেই লড়েছি। সেটা হল— যা বিশ্বাস করি, যা ভাবি, সেটা খোলাখুলি বলা।’’ নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই রানিকে জানিয়েছেন ক্যামেরন। এবং বক্তৃতায় একাধিক বার ধন্যবাদ জানিয়েছেন, ‘হ্যাঁ এবং ‘না’— দু’পক্ষকেই। বলেছেন, ‘‘দেশ চালানো নিয়ে অনেক সময়ে মানুষকেই প্রশ্ন করাটা জরুরি হয়ে পড়ে। সেটাই আমরা করেছি।... আমার পক্ষে যে ভাবে সম্ভব, আমি সাহায্য করব। অনেক ধন্যবাদ।’’
অদূরে এত ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা স্ত্রী সামান্থা এ বার এগিয়ে এলেন। পোডিয়াম ছাড়লেন ‘ক্যাপ্টেন’। আর মাস তিনেক পরেই যিনি ছেড়ে যাচ্ছেন প্রিয় জাহাজ।