ট্রাম্পের জন্য লাল গালিচা, নিষিদ্ধ নগরীও

আসল চমকটা এখানেই। মার্কিন প্রেসিডেন্টের খাতিরে দূষণ নিয়ন্ত্রণকে চিনের সৌজন্য বলেই দেখছেন কূটনীতিকদের একাংশ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বেজিং শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৬
Share:

খাসা লাগছে: ‘নিষিদ্ধ নগরী’তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়াকে দেখে এমনই অভিব্যক্তি চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের। বুধবার বেজিংয়ে। ছবি: রয়টার্স।

কাল পর্যন্ত ধোঁয়াশায় মো়ড়া ছিল চারপাশ। আজ সকাল হতে না হতেই সব ঝকঝকে। এয়ার ফোর্স ওয়ান মাটি ছোঁয়ার ঠিক আগে বেজিংয়ের আকাশটাও যেন আচমকা আরও নীল হয়ে গেল!

Advertisement

ভোজবাজি নয়। যান-চলাচল আর কারখানায় সাময়িক ভাবে উৎপাদন কমিয়ে রাতারাতি দূষণ নিয়ন্ত্রণে এক প্রকার নজিরই তৈরি করল চিন। গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আজ এ ভাবেই অভ্যর্থনা জানাল শি চিনফিং-এ চিন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর সেরে আজই চিনে পা এসেছেন ট্রাম্প। লাল গালিচা পাতাই ছিল। স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট তাতে পা রাখতেই বেজে উঠল সেনাবাহিনীর ব্যান্ড। স্বাগত জানাতে চিনা পতাকা হাতে হাজির কচিকাঁচাদের ভিড়।

তার পরেই ট্রাম্পকে নিয়ে ‘নিষিদ্ধ নগরীর’ দিকে হাঁটা দিলেন চিনফিং। ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যেখানে বাস করেছে চিনের রাজ-পরিবার। ১৯৪৯-এ আধুনিক চিনের জন্মের পর থেকে সরকারি ভাবে কোনও বিদেশি রাষ্ট্রনায়ককে সেখানে ডাকা হয়নি। ট্রাম্পই প্রথম।

Advertisement

আসল চমকটা এখানেই। মার্কিন প্রেসিডেন্টের খাতিরে দূষণ নিয়ন্ত্রণকে চিনের সৌজন্য বলেই দেখছেন কূটনীতিকদের একাংশ। কিন্তু প্রথা ভেঙে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ নগরীতে প্রবেশাধিকার কেন! সেখানেই আবার নৈশভোজের বন্দোবস্ত, কিংবা অতিথি দম্পতিকে গিয়ে এক ফাঁকে পিকিংয়ের অপেরা দেখিয়ে আনার মধ্যে চিনা প্রেসিডেন্টের অন্য কোনও সমীকরণ কাজ করছে বলেই মনে করছেন অনেকে। তাঁরাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রেসিডেন্টের মেয়াদ ফুরোনোর আগে বারাক ওবামা যখন চিনে এসেছিলেন, তখন তো তার জন্য লাল গালিচারও বন্দোবস্ত করা হয়নি।

গোটা বিষয়টিকে আবার শুধুই আনুষ্ঠানিকতা বলে দেখতে চাইছে না ভারত। বরং ট্রাম্পের এই সফরের পরে আমেরিকার দক্ষিণ এশীয় নীতিতে
কোনও তারতম্য হয় কি না, সে দিকেও কড়া নজর রাখছে নয়াদিল্লি।

আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, উত্তর কোরিয়ার বেপরোয়া পরমাণু কর্মসূচি রুখতে চিনের সঙ্গে এ বার একটা বোঝাপড়ায় আসতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিমের উপর চাপ তৈরিতে তিনি যে তাদের কূটনৈতিক সঙ্গী চিনকে পাশে টানতে চান, সে ইঙ্গিতও দিয়েছেন ট্রাম্প। স্পষ্ট বলেন, ‘‘উত্তর কোরিয়াকে সামলাতে চিনা প্রেসিডেন্ট বরাবরই আমাদের সাহায্য করেছেন।’’

অথচ এর আগে কিন্তু এ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে চিনের উপর চোটপাট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউসে আসার আগে থেকে বিশ্ববাণিজ্যে চিনের দুর্নীতি নিয়েও সরব তিনি। কূটনীতিকদের দাবি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখেই এখন বন্ধুত্বের সুরে মজেছেন ব্যবসায়ী হিসেবে জীবন শুরু করা ট্রাম্প। এরই মধ্যে ৯০০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়ে গিয়েছে দু’দেশে।

কিন্তু চিনফিংয়ের কী এমন দায়! দেশে তো তিনিই এখন সর্বোচ্চ ক্ষমতাসীন। রাজনৈতিক সঙ্কট না থাকলেও, দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি দক্ষিণ চিন সাগরও ভাবাচ্ছে চিনফিংকে। দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের দাদাগিরি নিয়ে ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্স বহু দিন ধরেই সুর চড়িয়ে আসছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর পর ওই দু’টি দেশেই যাবেন। তাই আগাম আটঘাট বেঁধে রাখতেই চিনফিংয়ের এমন রাজকীয় ট্রাম্প-বরণ কি না, প্রশ্ন উঠছে।

ট্রাম্প কী করেন, সে দিকেও তাকিয়ে গোটা দুনিয়া। বিশেষ কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানাতে হোক, বা কারও নিন্দা— মার্কিন প্রেসিডেন্ট এত দিন টুইটারকেই সব চেয়ে বড় অস্ত্র করে এসেছেন। কিন্তু এ বার কী হবে? চিনে যে ওই সামাজিক মাধ্যমটাই নিষিদ্ধ! ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ আধিকারিকেরা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, চিনে থেকেও টুইট করা থামাবেন না ট্রাম্প। সহায়ক, তাঁর বিশেষ বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন