প্রথমেই ৩০ লক্ষ অভিবাসী হটাবেন ট্রাম্প

শয়ে শয়ে লোক ভিড় জমাচ্ছে। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে দেশের বড় শহরগুলোতেও। ‘প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আম জনতার প্রতিবাদ পার করল চারটি দিন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০০
Share:

শয়ে শয়ে লোক ভিড় জমাচ্ছে। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে দেশের বড় শহরগুলোতেও। ‘প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আম জনতার প্রতিবাদ পার করল চারটি দিন। সে সবে তিনি বিচলিত নন বুঝিয়ে দিয়ে এ দিন ট্রাম্প ঘোষণা করলেন, ৩০ লক্ষ বেআইনি অভিবাসীকে অবিলম্বে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

Advertisement

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে কোনও টিভি চ্যানেলে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আজ বলেছেন, অপরাধের রেকর্ড রয়েছে এমন অভিবাসীদের খুঁজে বার করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘অপরাধী, অপরাধের রেকর্ড রয়েছে এবং মাদক পাচারকারী প্রচুর অভিবাসী রয়েছে। সম্ভবত ২০ লক্ষ। ৩০ লক্ষও হতে পারে। দ্রুত তাদের আমরা দেশ থেকে বার করে দেব অথবা জেলবন্দি করব।’’ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তোলার সেই বিতর্কিত প্রসঙ্গও ফের এই সাক্ষাৎকারেই তোলেন তিনি। প্রচার পর্বে এই দেওয়াল তোলা নিয়ে অনেক কথাই বলেছিলেন তিনি। এ দিন ট্রাম্প বলেন, ‘‘সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তবেই আমরা ঠিক করব কারা ঢুকতে পারবে। অনেকেই ভাল। কিন্তু সেটাও আমরা খতিয়ে দেখে ঠিক করব, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’’ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর কার্যভার নেওয়ার কথা ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি। তার পরপরই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

ট্রাম্পের ঘোষণার আগে আজও অভিবাসন, পরিবেশ, এলজিবিটি অধিকার-সহ ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে তাঁর নিজের শহর নিউ ইয়র্কেই পা মিলিয়েছেন আট হাজার মানুষ। ম্যানহাটনের ইউনিয়ন স্কোয়ার থেকে একটা বিশাল দল মিছিল করে পৌঁছে যায় ট্রাম্প টাওয়ারে। প্রেসিডেন্টে পদে সদ্য নির্বাচিত ধনকুবেরের বাড়ি আর সদর দফতর সেখানেই। রূপান্তরকামী মানুষ, পড়ুয়া, শরণার্থীদের শিশু, পিঠে বাচ্চা নিয়ে অসংখ্য বাবা-মা— কে নেই সেই মিছিলে! হাতের পোস্টারে লেখা: ‘পপুলার ভোট কেমন, সেটা বুঝিয়ে দিন!’ কোথাও বা লেখা, ‘পুতিনের জয়।’ শিকাগোতেও ট্রাম্পের একটি বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বহু মানুষ। লস অ্যাঞ্জেলেসেও উইলশায়ার বুলেভার্ডে মিছিল করেন কয়েক হাজার। এখানে বিক্ষোভরত যুবক আলফ্রেড ডায়াজ বললেন, ‘‘গণতন্ত্রে আমার যে-টুকু করা উচিত, সেটাই করছি।’’ ট্রাম্পের অনেক বক্তব্যেই আপত্তি রয়েছে তাঁর। আলফ্রেডের জন্ম লস অ্যাঞ্জেলেসে। পরিবার এসেছে মেক্সিকো থেকে।

Advertisement

ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে প্রতিবাদ জানাতে এসেছেন কিমি লিউ। তাঁর ১৪ মাসের শিশুকে পিঠে নিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেকে এনেছি, কারণ ওরাই ভবিষ্যৎ। ঘৃণার জয় হয়েছে। আমরা তো বসে থাকতে পারি না।’’ সপ্তাহান্তের এই বিক্ষোভ অবশ্য শান্তিপূর্ণ ছিল। এর মধ্যেই ইলেক্টোরাল কলেজের কাছে ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর অভিযানে যোগ দিয়ে ট্রাম্পকে সরানোর (‘ডাম্প ট্রাম্প’) আর্জি জানিয়েছে।

অ্যালেন মেইজনার নামে আর এক প্রতিবাদীর বক্তব্য, ‘‘পরিস্থিতি পাল্টাতে কী করা উচিত, আমরা জানি না। কিন্তু আমরা ফিরে আসব। যে ঘৃণা, ভয় আর ক্রোধের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প, তা আমাদের দেশের ঐতিহ্য নয়, এটা বোঝানো প্রয়োজন।’’

তবে শুক্রবার থেকে উত্তপ্ত পোর্টল্যান্ডে বিক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়েছে। শহরের রেল এবং অন্য যান চলাচল স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। শনিবার পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে এগিয়ে যায়। মরিসন ব্রিজে প্রতিবাদ মিছিলে শনিবার এক ব্যক্তির উপরে গুলি চালায় পুলিশ। শিকাগোয় এক ট্রাম্প সমর্থকদের উপরেও চড়াও হয়েছে জনতা। পুলিশের দাবি, তাঁকে মারধর করা হয়েছে। রবিবার সকালে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ওয়াশিংটনে। বিকেলে নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কেও শুরু হয় প্রতিবাদ। অকল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া আর সান ফ্রান্সিসকোয় রাতে বিক্ষোভ কর্মসূচি রয়েছে।

প্রতিবাদ সত্ত্বেও ট্রাম্প সমর্থকদের ঘৃণার মাত্রায় খামতি নেই। জর্জিয়ার একটি স্কুলে এক মুসলিম শিক্ষিকাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। মায়রা তেলি নামে ওই শিক্ষিকার দাবি, তাঁর ক্লাসরুমে অজ্ঞাতপরিচয় কোনও ব্যক্তি একটি নোট ফেলে যায়। তাতে লেখা রয়েছে, ‘‘আপনার হেডস্কার্ফটা আর চলবে না। ওটা আপনি বরং গলায় বেঁধে ঝুলে পড়ুন।’’ ওই শিক্ষিকা এই বার্তায় যথেষ্ট ভীত। ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এক জন মুসলিম মহিলা হিসেবে নিজের বিশ্বাস থেকেই হেডস্কার্ফ পরি। কিন্তু বলতে চাই, ঘৃণা ছড়িয়ে আমেরিকাকে মহান বানানো যাবে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন