দক্ষিণ চিন সাগরে উত্তাপ

ট্রাম্প-শি কথায় উঠে এল উত্তর কোরিয়াও

কাল থেকেই দক্ষিণ চিন সাগরের বিতর্কিত এক দ্বীপে মার্কিন রণতরীর উপস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত বেজিং প্রশাসন। তাদের মতে, আমেরিকার এই কাজ রাজনৈতিক প্ররোচনার ফল। এবং এর পিছনে মার্কিন সেনার প্ররোচনাও রয়েছে। দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ফোনে কথা হওয়ার কিছু ঘণ্টা আগেই দক্ষিণ চিন সাগরের ট্রিটন দ্বীপের কাছে পৌঁছে যায় ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে সক্ষম মার্কিন রণতরী স্টেথেম।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বেজিং শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০৩:২৫
Share:

মার্কিন রণতরী। ছবি:এএফপি।

কথা হওয়ার কথা ছিল। কথা হল। রবিবার সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের ফোনে কথোপকথনের অন্যতম বিষয় ছিল উত্তর কোরিয়া। কিন্তু দুই প্রেসিডেন্টের কথা হলেও আমেরিকা এবং চিন, দু’দেশের মধ্যেকার টানাপড়েন বাড়ল বই কমল না।

Advertisement

কাল থেকেই দক্ষিণ চিন সাগরের বিতর্কিত এক দ্বীপে মার্কিন রণতরীর উপস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত বেজিং প্রশাসন। তাদের মতে, আমেরিকার এই কাজ রাজনৈতিক প্ররোচনার ফল। এবং এর পিছনে মার্কিন সেনার প্ররোচনাও রয়েছে। দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ফোনে কথা হওয়ার কিছু ঘণ্টা আগেই দক্ষিণ চিন সাগরের ট্রিটন দ্বীপের কাছে পৌঁছে যায় ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে সক্ষম মার্কিন রণতরী স্টেথেম। চিনও পাল্টা জবাব দিয়েছে রণতরী ও যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে।

চিনা টেলিভিশন চ্যানেলে দাবি, রবিবার দুই শাসকের মধ্যে আলোচনার সময়ে শি চিনফিং মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, মার্কিন-চিন সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে কিছু নেতিবাচক বিষয়। হোয়াইট হাউসের তরফে এই ব্যাপারে অবশ্য কোনও মন্তব্য করা হয়নি। হোয়াইট হাউসের বক্তব্য, ‘‘কোরীয় দ্বীপপুঞ্জে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে দুই দেশ একজোট হয়ে এগোতে চায়, সে কথা আরও এক বার তাঁদের আলোচনায় উঠে এসেছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: পাল্টা চাপ দিতে ভারতের সহায় ইজরায়েল

দক্ষিণ চিন সাগরে বিতর্কিত অংশে চিনের আগ্রাসন নিয়ে বহু বার বেজিং প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওয়াশিংটন। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে বেজিংয়ের দাবি, ওই অংশে তাদেরই সার্বভৌম অধিকার। রবিবার চিনের বিদেশ মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, চিনা জলসীমার মধ্যে ঢুকে পড়েছে মার্কিন রণতরী স্টেথেম। ট্রিটন দ্বীপের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ছিল সেটি। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের অফিসারদের আবার যুক্তি, এটা তাদের নৌ বাহিনীর অধিকার বহির্ভূত নয়। বেজিং বলছে, চিন ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্য সব প্রতিবেশী দেশ শান্ত হয়ে পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা করছে। আর আমেরিকা সমস্যা তৈরি করছে। কিন্তু দেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় বেজিং সম্ভাব্য সব রকম পদক্ষেপ করবে। চিনের গা জোয়ারি সত্ত্বেও ছোট ট্রিটন দ্বীপটিতে ভিয়েতনাম এবং তাইওয়ানও তাদের অধিকার জানিয়ে এসেছে। এই প্রতিবেশীদের সঙ্গে সাগরে অনেক বারই জটিলতায় জড়িয়েছে চিন।

এ সবের পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে চিনের ভূমিকাও চটিয়েছে আমেরিকাকে। হোয়াইট হাউসের বিবৃতি অনুযায়ী, ফোনে চিনফিংকে ট্রাম্প বুঝিয়েছেন, মার্কিন ব্যবসায়িক সঙ্গীদের সঙ্গে চিন যাতে ভারসাম্য রেখে চলে, দেখতে হবে সে দিকটিও। কূটনীতিকদের মতে, উত্তর কোরিয়া প্রশ্নে চিনকে চাপ দিতেই ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, পিয়ংইয়ংকে চাপ না দিলে বেজিংয়ের সঙ্গে ‘কড়া ব্যবসা নীতি’তে ফিরে যাবেন। বৃহস্পতিবারই একটি চিনা ব্যাঙ্ক ও বেশ কয়েক জন চিনা নাগরিকের ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ।

চিনা টেলিভিশনে দাবি, ট্রাম্প চিনফিংকে বুঝিয়েছেন, আমেরিকা ‘এক চিন নীতি’ই (চিনের মতে, তাইওয়ানও তাদের দেশের অংশ) অনুসরণ করে চলবে। তাতে কিছুটা আশ্বস্ত বেজিং। তাদের আশা, তাইওয়ান প্রসঙ্গে আমেরিকা যথাযথ পদক্ষেপ করবে। যদিও বৃহস্পতিবারই তাইওয়ানের সঙ্গে একশো কোটি ডলারের অস্ত্রচুক্তি করেছে আমেরিকা। তাতে আবার কিছুটা উদ্বেগে বেজিং।

চিনফিং ছাড়াও রবিবার সন্ধেয় ট্রাম্প ফোনে কথা বলেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে। উঠে আসে উত্তর কোরিয়ার প্রসঙ্গ। একযোগে কিমের দেশের উপরে চাপ বাড়াতে তাঁরা বদ্ধপরিকর বলে জানান দুই নেতা। জার্মানিতে জি-২০ বৈঠকে আমেরিকা-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া ত্রিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলন হবে বলে জানিয়েছেন জাপানের ক্যাবিনেট সচিব ইয়োশিহিদে সুগা। কিন্তু সেখানে কী নিয়ে কথা হবে, এখনও স্পষ্ট করেননি তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন