Iran-Israel Conflict

যুদ্ধে জিতল কে? তিন পক্ষই বলছে ‘আমরা সফল’! ইরান, ইজ়রায়েল, আমেরিকার পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি কী

১২ দিনের যুদ্ধ আপাতত থেমেছে। তার পরেই যুদ্ধজয়ের কৃতিত্ব দাবি করেছে কেবল ইরান, ইজ়রায়েলই নয়, আমেরিকাও। তিন পক্ষের দাবির সমর্থনেই বেশ কিছু যুক্তি আছে। উল্টো দিকে আছে কিছু প্রতিযুক্তিও।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৫ ১৫:৩৭
Share:

(বাঁ দিক থেকে) বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। —ফাইল চিত্র।

অনেক টালবাহানার পরে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইরান এবং ইজ়রায়েল। ১২ দিনের যুদ্ধ আপাতত থেমেছে। তার পরেই যুদ্ধজয়ের কৃতিত্ব দাবি করেছে কেবল ইরান, ইজ়রায়েলই নয়, আমেরিকাও। তিন পক্ষের দাবির সমর্থনেই বেশ কিছু যুক্তি আছে। উল্টো দিকে আছে কিছু প্রতিযুক্তিও, স্বাভাবিক ভাবে যা তারা স্বীকার করেননি বা করতে চাইবেন না।

Advertisement

আমেরিকা

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ভেস্তে দিতে কেবল বন্ধু ইজ়রায়েলকে সমর্থনই নয়, সরাসরি ময়দানেও নামে আমেরিকা। গত রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময়) ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করে আমেরিকার ‘বি২ বম্বার’ বোমারু বিমান। কিন্তু আমেরিকার এই অতর্কিত হামলায় কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরানের পরমাণুকেন্দ্রগুলি? এই সংক্রান্ত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার একটি প্রাথমিক মূল্যায়নের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ওই রিপোর্টকে উল্লেখ করে জানায়, মার্কিন হামলায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়নি ইরানের পরমাণুকেন্দ্রগুলি। তাদের পরমাণু কর্মসূচি শুধু কয়েক মাস পিছিয়ে গিয়েছে মাত্র! মার্কিন গোয়েন্দাদের এই তথ্যের সঙ্গে একমত নন ট্রাম্প। সাফল্যের ঢাক পিটিয়ে তাঁর দাবি, ইরানের পারমাণবিক পরিকাঠামো ধ্বংসের পাশাপাশি যুদ্ধও বন্ধ করেছেন তিনি।

Advertisement

ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, তেহরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির চেষ্টা এবং সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি রোধ করতে পারলেন না ট্রাম্প। তবে যুদ্ধে লাগাম পরানোর কৃতিত্ব তিনি দাবি করতেই পারেন। তাতে তাঁর নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

ইজ়রায়েল

মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর ইজ়রায়েলের তরফ‌ে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল “ইজ়রায়েল দু’টি অস্তিত্বগত ঝুঁকি নষ্ট করে দিয়েছে। একটি ছিল পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত ঝুঁকি, আর একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত ঝুঁকি।” প্রায় এক পক্ষকালের যুদ্ধে ইজ়রায়েল একাধিক বার সামরিক আধিপত্যের প্রমাণ রেখেছে। এই সময়ে ইরানের নয় পরমাণুবিজ্ঞানী এবং তেহরানের প্রথম সারির সেনা আধিকারিকেরা তেল আভিভের চোরাগোপ্তা হানায় নিহত হয়েছেন। এর আগে ইরাক এবং সিরিয়ার পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালালেও এই প্রথম চিরশত্রু ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েল। তা ছাড়া ইরান বিশ্বের বাকি দেশগুলিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য কতটা ঝুঁকির। আমেরিকা-সহ বেশ কয়েকটি দেশ এই বিষয়ে ইজ়রায়েলের সঙ্গে সহমত পোষণ করে।

গাজ়া ভূখণ্ডেও হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইজ়রায়েল। সেখানে ইজ়রায়েলি সেনার বিরুদ্ধে বার বার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ইজ়রায়েলকে দু’টি বার্তা দেওয়ার মঞ্চ গড়ে দিল বলে মনে করছেন অনেকে। একটি হল, ইজ়রায়েল যে একই সময়ে একাধিক যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করতে পারে, সেই বার্তা দেওয়া। দুই, ইরানের কার্যকলাপে নিরাপত্তাগত ঝুঁকির কথা তুলে গাজ়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগকে কিছুটা লঘু করা বা বিষয়টা থেকে দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া। ইজ়রায়েল-ইরান সংঘাত ছিল প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছেও বড় পরীক্ষা। তাঁর দাবি, তিনি এই পরীক্ষায় সফল। তবে তিনি সফল কি না, আগামী বছর তার রায় দেবেন ইজ়রায়েলবাসী, আসন্ন নির্বাচনে। দুর্নীতি, অপশাসনের অভিযোগ এড়িয়ে নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টি নির্বাচনে ফের জয়ী হতে পারে কি না, সে দিকে নজর সকলেরই।

ইরান

ইজ়রায়েল এবং আমেরিকার যৌথ প্রচেষ্টার পরেও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি ভেস্তে যায়নি। এমনই দাবি আমেরিকার গোয়েন্দাদের। ৪০০ কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামকে তারা কোন গোপন কুঠুরিতে রেখেছে, তার হদিস পায়নি আমেরিকা কিংবা ইজ়রায়েল। তেহরানেরও দাবি, তারা পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। ইরান কেবল ইজ়রায়েলকেই পাল্টা আক্রমণ করেনি, ওয়াশিংটনকে জবাব দিতে কাতারের মার্কিন সেনাঘাঁটিতেও হামলা চালিয়েছে। তা ছাড়া বহির্শত্রু ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের গোঁড়া ধর্মীয় প্রশাসনের পাশে যে ভাবে সে দেশের প্রায় সব শ্রেণির মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা অভাবনীয় বলেই মনে করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের রক্ষণশীল আচরণের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন ইরানের মহিলারা, মানবাধিকার সংগঠনগুলিও। কিন্তু ‘ইজ়রায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার স্বার্থে’ যুদ্ধ খামেনেই প্রশাসনের পাশে এনে দাঁড় করিয়েছে সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে। অনেকেই মনে করছেন এর ফলে ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থার রাজনৈতিক এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ল।

তা ছাড়া প্রথমে ইজ়রায়েলের সুরে জমানা বদলের কথা বললেও ট্রাম্প মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ইরানে শাসকবদল তিনি চান না। এ ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি, শাসকবদলের সময়ে বিশৃঙ্খলা হয়। তবে আপাত সাফল্যের মাঝে অনেক কাঁটাও আছে ইরানের। ইরান ১২ দিনের যুদ্ধে সেনাপ্রধান-সহ একাধিক সামরিক কর্তাদের হারিয়েছে। হারিয়েছে দেশের প্রায় ৬৫০ নাগরিককেও। তা ছাড়া ইরানের শাসনব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে যে ইজ়রায়েলি গুপ্তচর বাহিনী মোসাদের নজরদারি রয়েছে, এই সংঘাতে তা-ও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমেরিকার হুঁশিয়ারি এড়িয়ে খামেনেই প্রশাসন কী ভাবে নিজেদের পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে নিয়ে যায়, তা-ই এখন দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement