গাজ়ায় আকাশপথে পাঠানো হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। ছবি: রয়টার্স।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়ার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল রাষ্ট্রপুঞ্জ। সোমবার ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন বিষয়ক বিশেষ আলোচনাসভায় রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, গাজ়ার তিনটি অঞ্চলে দৈনিক ১০ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইজ়রায়েল যতটুকু আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে, তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়।
সোমবার থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জে ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন নিয়ে দু’দিনের সম্মেলন শুরু হয়েছে। সেখানেই আলোচনায় উঠে এসেছে গাজ়ায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ। ফ্রান্স এবং সৌদি আরবের উদ্যোগে আয়োজিত ওই সম্মেলনে সোমবার যোগ দিয়েছেন বিশ্বের ১১৫টি দেশের প্রতিনিধিরা। তেল আভিভের হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে ফ্রান্স ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্যালেস্টাইনকে ‘সার্বভৌম রাষ্ট্র’ হিসেবে মর্যাদা দেবে। গাজ়ায় ত্রাণবণ্টনেরা কাজে যুক্ত ‘গাজ়া হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) সোমবার জানিয়েছে, মাত্র তিনটি স্থানে মাত্র ১০ ঘণ্টার জন্য হামলার মুলতুবি রাখায় পর্যাপ্ত ত্রাণ বণ্টন সম্ভব হচ্ছে না।
গত এপ্রিল মাসে গাজ়া পরিস্থিতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবিক বিষয়াবলী সমন্বয় দফতর (ওসিএইচএ) । রিপোর্টে বলা হয়েছিল, অবিলম্বে ইজ়রায়েল আন্তর্জাতিক ত্রাণসামগ্রী প্রবেশে অবরোধ না হটালে অন্তত আড়াই লক্ষ্য গাজ়াবাসী অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর শিকার হতে পারেন। রবিবার রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত এক-তৃতীয়াংশ বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে অভুক্ত। ৪ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন। এর পরেই ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার বিশ্ব জুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে জানায়, তারা গাজ়া ভূখণ্ডের তিনটি এলাকা— গাজ়া সিটি, দের আল-বালা এবং মুয়াসিতে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে যুদ্ধ বন্ধ রাখবে। ওই সময়ে ত্রাণের ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হবে জনবহুল অঞ্চলগুলিতে।
এই ‘কৌশলগত বিরতি’ শুরু হয়েছে রবিবার থেকে। যদিও ইজ়রায়েলের প্রতিশ্রুতির উপর ‘ভরসা’ রাখতে পারছেন না অনেকেই। কারণ, সোমবারেও ত্রাণের আশার ভিড় জমানো প্যালেস্টাইনিদের উপর ইজ়রায়েলি সেনার গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আল কাশিম ব্রিগেড ইজ়রায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালানোর পরে নেতানিয়াহুর ফৌজ ধারাবাহিক ভাবে গাজ়ায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এর পর কাতারের মধ্যস্থতায় এবং আমেরিকা ও মিশরের প্রচেষ্টায় গত ১৫ জানুয়ারি রাতে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল ইজ়রায়েল সরকার এবং হামাস। ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরও হয়েছিল।
কিন্তু পণবন্দি মুক্তি ঘিরে টানাপড়েনের জেরে মার্চের গোড়ায় একতরফা ভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজ়ায় আবার হামলা শুরু করেছে ইজ়রায়েলি সেনা। তার পর থেকে প্রায় প্রতি দিনই গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলা চলেছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সরবরাহ আটকাতে চলেছে অবরোধ। এমনকি, গাজ়া ভূখণ্ড পুরোপুরি দখলের কথাও ঘোষণা করেছেন নেতানিয়াহু। এখনও পর্যন্ত ৫৯৭৩৩ জন প্যালেস্টাইনি ইজ়রায়েলি হামলার শিকার হয়েছেন বলে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজ়া কর্তৃপক্ষের অভিযোগ।