Mosul

গোটা শহরের তলায় সুড়ঙ্গ-জাল, মসুল যেন এখন ভয়ঙ্কর চক্রব্যূহ!

মসুল এখন আর একটা শহর নয়, দু’টো শহর হয়ে উঠেছে। ইরাকি সেনাবাহিনীর সদস্যদের মুখে মুখে এখন এ কথাই ফিরছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ১৬:০৩
Share:

মসুলে ঢুকছে ইরাকি বাহিনীর ট্যাঙ্ক। ছবি: রয়টার্স।

মসুল এখন আর একটা শহর নয়, দু’টো শহর হয়ে উঠেছে।

Advertisement

ইরাকি সেনাবাহিনীর সদস্যদের মুখে মুখে এখন এ কথাই ফিরছে।

একটা শহরকে আইএস জঙ্গিদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য যতটা প্রস্তুতি প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুতি নিয়েই মসুলে ঢুকেছে ইরাকি বাহিনী। কিন্তু মাটির উপরে যে মসুলকে দেখা যাচ্ছে, মাটির নীচেও যে তেমনই একটা মসুল তৈরি হয়ে গিয়েছে, তা আগে আঁচ করতে পারেনি ইরাকের কাউন্টার টেররিজম সার্ভিসেস (সিটিএস) বাহিনী। ফলে মসুলে ঢোকার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে অতর্কিত হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে সিটিএস-কে।

Advertisement

মসুলে গত কয়েক দিনের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন এক ইরাকি সৈনিক। তাঁর কথায়, আইএস জঙ্গিরা যেন মাটি ফুঁড়ে উঠে আসছে। কোথাও কাউকে দেখা যাচ্ছে না, রাস্তাঘাট ফাঁকা, কিন্তু মাটির তলায় বানিয়ে রাখা সুড়ঙ্গ বেয়ে হঠাৎ শহরের যে কোনও প্রান্তে হাজির হচ্ছে জঙ্গিরা এবং ইরাকি বাহিনীর উপর অতর্কিতে হামলা চালাচ্ছে। শুক্রবার এবং শনিবার মসুলে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে সিটিএস বাহিনীকে। সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসে বার বার হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। ফলে মসুলে এখন প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে ফেলতে হচ্ছে মার্কিন সাহায্যপুষ্ট ইরাকি সেনা বাহিনীকে।

গোটা মসুল শহরের তলাতেই সুড়ঙ্গ বানিয়ে রেখেছে আইএস। সিটিএস বাহিনীর ধারণা, মাটির তলায় নিজেদের জন্য প্রায় আস্ত একটা শহর গড়ে ফেলেছে তারা। শহরের প্রত্যেকটি অংশেই মাটির তলায় সুড়ঙ্গ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কোথাও সুড়ঙ্গের মুখ উন্মুক্ত হয়েছে কোনও বাড়ির মধ্যে, কোনওটির প্রবেশ বা প্রস্থান পথ জনবসতির আড়ালে-আবডালে। ফলে কোথা দিয়ে আইএস বাহিনী মাটির উপরে উঠে আসছে এবং অতর্কিতে হামলা চালিয়ে আবার কোন পথে গায়েব হয়ে যাচ্ছে, তা বুঝে ওঠা এখনও সিটিএস বাহিনীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যেই মসুলের বেশ কিছুটা ভিতরে ঢুকে পড়েছে ইরাকের সেনা, কুর্দিশ পেশমেরগা এবং শিয়া মিলিশিয়াদের নিয়ে গঠিন সিটিএস। তার ফলে এখন অনেকটা চক্রব্যূহে আটকে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছে সিটিএস-এর। গত দু’দিনে সিটিএস বাহিনী বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে খবর। সিটিএস-এর তরফে ক্ষয়ক্ষতির বিশদ তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে ইরাকি বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া রসুল বলেছেন, ‘‘মসুলে লড়াইটা এখন প্রচণ্ড হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে।’’

আরও পড়ুন: রেঞ্জার্স সরিয়ে কাশ্মীর সীমান্তে সেনা বাড়াচ্ছে পাকিস্তান

গত প্রায় দু’বছর ধরে আইএস-এর দখলে ছিল মসুল। ইরাকের উত্তরাংশের এই শহর সে দেশে আইএস-এর শেষ বড় ঘাঁটি। মসুল ছিনিয়ে নেওয়া গেলে ইরাকে প্রায় নির্মূল হয়ে যাবে আইএস। তাই ৫০ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী পাঠানো হয়েছে মসুলে। ঘন জনবসতিপূর্ণ মসুলে যুদ্ধ যে খুব সহজ হবে না, তা সিটিএস বাহিনীর জানা ছিল। সাধারণ মানুষকে যে আইএস মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে, তাও বাহিনীর জানা ছিল। কিন্তু গোটা শহরের তলায় যে সুড়ঙ্গের জাল বিছিয়ে গিয়েছে, তা সিটিএস কম্যান্ডাররা আঁচ করতে পারেননি। সিটিএস-এর তরফে জানানো হয়েছে, এখন আর শহরের এক একটা করে মহল্লা দখলে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে না। প্রত্যেকটা বাড়িকে জঙ্গিমুক্ত করতে করতে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাটির উপরের মসুল দখল করে নিতে খুব অসুবিধা হবে না বলে সিটিএস বাহিনী মনে করছে। কিন্তু তাতে মসুল দখল হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করা যাবে না বলে কম্যান্ডারদের মত। কারণ মাটির তলার সুড়ঙ্গ-শহরটা আইএস দখলমুক্ত করার কৌশল এখনও খুঁজে পাননি সিটিএস কম্যান্ডাররা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন