মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরই অবৈধ অভিবাসীদের আমেরিকা থেকে বিতাড়িত করার কথা ঘোষণা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পর ধাপে ধাপে অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিতকরণ এবং আমেরিকা থেকে তাঁদের নিজেদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন। এখনও সেই প্রক্রিয়া চলছে। তবে এ বার প্রযুক্তির সাহায্যে অভিবাসীদের উপর নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা করল মার্কিন প্রশাসন। স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে নজরদারি চালানোর কাজ করা হবে। অর্থাৎ, অভিবাসীদের অজান্তেই তাঁদের মোবাইলে আড়ি পাতবে ট্রাম্প প্রশাসন।
গত বছর সেপ্টেম্বরে জো বাইডেনের শাসনকালে আমেরিকার স্বরাষ্ট্র বিভাগের সঙ্গে বিতর্কিত হ্যাকিং কোম্পানি ‘প্যারাগন সলিউশন’-এর সঙ্গে ২০ লক্ষ মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়েছিল। তবে সেই চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই ২০২৩ সালের স্পাইওয়্যার ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা বিধির কারণে চুক্তি স্থগিত করা হয়। এ বার তা বাস্তবায়নের পথে। আমেরিকার ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ (আইসিই) প্যারাগনের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করবে বলে ব্লুমার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আইসিই এবং প্যারাগনের মধ্যে যে চুক্তির কথা চলছে, তার বিষয়বস্তু এখনও স্পষ্ট নয়। মার্কিন প্রশাসনকে কী কী তথ্য সরবরাহ করা হবে, সেই তথ্য কী ভাবে ব্যবহার হবে তা খোলসা করা হয়নি। তবে ইজ়রায়েলের এই কোম্পানি ‘গ্রাফিতি’ নামে একটি ডিভাইসের ব্যবহার করবে। এর ফলে আইসিই ব্যবহারকারীদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। পড়তে পারবে মেসেজ, ফোনের ছবি-ভিডিয়ো দেখতে পারবে। শুধু তা-ই নয়, ফোনে আড়ি পেতে কথোপকথনও শুনতে পারবে মার্কিন প্রশাসন।
বছর কয়েক আগে ইজ়রায়েলি সংস্থা এনএসও-র তৈরি সফটওয়্যার পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে শোরগোল পড়েছিল ভারতে। গ্রাফিতির মতো পেগাসাসও মোবাইলে আড়ি পাতার অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। ফোনে কী কথাবার্তা হচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপে কী আদান-প্রদান হচ্ছে সবই জানা যায়। ফোনে কী তথ্য, নথি, ছবি রয়েছে সেটাও দেখে ফেলা যায় এর মাধ্যমে। অথচ যাঁর মোবাইল হ্যাক করা হয়েছে, তিনি জানতেই পারেন না।
মেটার হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাট সার্ভিসের এক কর্তা দিন কয়েক আগে জানিয়েছিলেন, তাঁরা প্যারাগনের আনাগোনা লক্ষ্য করেছেন। ইউরোপের বেশ কয়েক জন সাংবাদিক এবং সমাজের গণ্যমান্য কয়েক জন ব্যবহারকারীকে নিশানা করা হয়েছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও হয়। সেই প্যারাগন সংস্থার সঙ্গে গাঁটছ়ড়া বেঁধে মার্কিন প্রশাসন অভিবাসীদের উপর নজরদারির কাজ করার পরিকল্পনা সেরে ফেলেছে।
আমেরিকায় অভিবাসীদের সংখ্যা নিয়ে বার বার ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসনকে আশঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। ট্রাম্পের অভিযোগ, আমেরিকায় অপরাধমূলক কাজকর্ম বেড়েছে। পরোক্ষ ভাবে অপরাধমূলক কাজে অভিবাসীদের জড়িত থাকার সন্দেহ করছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই কারণে ভিসার দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম বলবৎ করেছে আমেরিকার বিদেশ দফতর। সমাজমাধ্যমে নজরদারি চালানোর মতো পদক্ষেপও করা হয়েছে।