খারাপ কিছু হলে দায় বিচারপতিরই, ফুঁসছেন ট্রাম্প

বেজায় খাপ্পা মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আদালতের স্থগিতাদেশে তিনি নিজেই আটকে গিয়েছেন। মেজাজ হারিয়ে তাই এ বার আদালতকেই কাঠগড়ায় তুললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প!

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:২১
Share:

সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়ে পোস্টার আমেরিকায়।

বেজায় খাপ্পা মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আদালতের স্থগিতাদেশে তিনি নিজেই আটকে গিয়েছেন। মেজাজ হারিয়ে তাই এ বার আদালতকেই কাঠগড়ায় তুললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প! এক টুইটে বললেন, ‘‘আমেরিকার খারাপ একটা কিছু হয়ে গেলে তার দায় নিতে হবে ওই বিচারপতিকেই।’’

Advertisement

‘খারাপ একটা কিছু’ মানে ঘুরে-ফিরে আঙুল সেই সন্ত্রাস হামলার দিকেই। শরণার্থীদের পাশাপাশি সিরিয়া-ইরাক-ইরানের মতো সাত মুসলিম দেশকে ‘নিষিদ্ধ’ করার পিছনে গোড়া থেকেই ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ কথা বলে আসছেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু আদালতে সে যুক্তি ধোপে টেকেনি। সিয়াটলের ফেডেরাল বিচারপতি জেমস রবার্ট সম্প্রতি সেই প্রশাসনিক নির্দেশে দেশ জুড়ে স্থগিতাদেশ জারি করেন। এ দিন তাঁকেই নিশানা করে ট্রাম্প বলেন, ‘‘একজন বিচারপতি যে দেশকে এমন বিপদে ফেলতে পারেন, বিশ্বাস করতে পারছি না।’’

কিন্তু বিপদ তো বাড়ছে তাঁর নিজেরই! গত কাল আইনি লড়াইয়ে নেমেছে টেক-জায়ান্ট অ্যাপল, গুগল, মাইক্রোসফট-সহ প্রায় ১০০টি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। প্রেসিডেন্টের বিরোধিতায় আইনি ভাবে নথিভুক্ত করেছে নিজেদের সংস্থার নাম। এর আগে ট্রাম্পের শরণার্থী নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ওয়াশিংটন স্টেটের মামলায় আইনি সমর্থন জানিয়েছিল ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন, মাইক্রোসফট এবং অনলাইনভিত্তিক পর্যটন সংস্থা এক্সপিডিয়া। আলাদা-আলাদা ভাবে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মাইক্রোসফট-গুগল-অ্যাপল কর্তারা। কিন্তু আইনি ভাবে সিলিকন ভ্যালির একজোট হওয়াটা এই প্রথম। সংস্থাগুলির তরফে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, ‘‘এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়ছে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতে। অভিবাসীদের জন্য দরজা বন্ধ রাখার মানে প্রতিভা, কর্মদক্ষতা, পণ্যের গুণমান, ব্যবসা— সব দিক থেকেই পিছিয়ে পড়া।’’ এই মর্মেই প্রেসিডেন্টের নির্দেশিকা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সংস্থাগুলি। মামলার শুনানি শুরু হয়েছে সান ফ্রান্সিসকোর ফেডেরাল আপিল আদালতে।

Advertisement

সেই আদালত, যেখানে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের আর্জি শনিবার রাতেই খারিজ হয়ে গিয়েছে। ফেডেরাল বিচারপতি জেমস রবার্টের স্থগিতাদেশ অবিলম্বে রদের আর্জি। যার জেরে ফের খুলে গিয়েছে আমেরিকার দরজা। গত কাল থেকেই অভিবাসীরা ফের আসতে শুরু করেছেন আমেরিকায়। এমনকী ‘নিষিদ্ধ’ সিরিয়া-ইরাক থেকেও। সেই প্রেক্ষিতেই ট্রাম্প এ দিন টুইট করে বলেন, ‘‘আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে কড়া তল্লাশি চালাতে বলেছি। আসলে আদালতই কাজটা কঠিন করে দিয়েছে।’’ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সেরও দাবি, এই স্থগিতাদেশ সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত। যদিও সূত্রের খবর, হোয়াইট হাউসেরই একাংশ ট্রাম্পের এমন আদালত অবমাননা ভাল ভাবে নিচ্ছে না।

প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমছে নাগরিকদের মধ্যেও। ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। যাতে বলা হয়েছে— ‘‘কাজ খোয়ানোর ভয় না থাকলে সে দিন কাজে যাবেন না। কোনও কেনাকাটি নয় এ দিন।’’ স্কুল-কলেজও বন্ধ রাখার আর্জি রাখা হয়েছে ‘#ন্যাশনালস্ট্রাইক’ নামের একটি টুইট-পোস্টে। এরই মধ্যে যেটি ৩ হাজার রি-টুইট হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ব্যাপক সাড়া পড়েছে ফেসবুকেও। বলা হচ্ছে, বেশ কয়েক দশক পরে এমন জাতীয় ধর্মঘটে এককাট্টা হচ্ছে আমেরিকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন