ঠাট্টা কমছে ‘ট্রাম্পেট’ নিয়ে, কী হবে ৩ দিন পর?

থাকি ডেভেনপোর্টে। শিকাগো শহর থেকে শ’খানেক মাইল দূরে। বাইরের কেউ জিজ্ঞাসা করলে অবশ্য বলি, শিকাগোয় বসবাস। যেমন তারকেশ্বরের লোক দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে বলেন— ‘নিবাস কলিকাতা’।

Advertisement

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

ডেভেনপোর্ট (আইওয়া) শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৭
Share:

থাকি ডেভেনপোর্টে। শিকাগো শহর থেকে শ’খানেক মাইল দূরে। বাইরের কেউ জিজ্ঞাসা করলে অবশ্য বলি, শিকাগোয় বসবাস। যেমন তারকেশ্বরের লোক দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে বলেন— ‘নিবাস কলিকাতা’। পাক্কা ১০৮ বছর পরে বেসবলে ওয়ার্ল্ড সিরিজ জিতেছে ‘শিকাগো কাবস’। সে নিয়ে এই গঞ্জে আমাদেরও তাই হুজুগের শেষ নেই। দোকানে ওল্ড স্টাইল বিয়ারের আকাল, শিকাগো-শাবকরা জয় উদ্‌যাপন করার স্মারক হিসেবে তুলে নিয়ে গিয়েছেন। যেখানে বসে এই লেখা লিখছি, পাড়াগাঁয়ের সেই একটেরে ছোট্ট ক্যাফে ছেয়ে গিয়েছে কাবসের জার্সিতে। সবই ‘রিফ্লেক্টেড গ্লোরি’! চিনা চেয়ারম্যানই আমাদের চেয়ারম্যান, কলকাতা নাইট রাইডার্সই আরামবাগের নাইট রাইডার্স, শিকাগোর টিমই আমাদের টিম।

Advertisement

এরই মধ্যে ভোট- হুজুগও চলছে। এই গঞ্জের ছায়া মাড়িয়ে গিয়েছেন হিলারি ক্লিন্টন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বার নভেম্বরের শুরুতেও ঠান্ডা নেই, পাতাও ঝরছে কম। যেন তা পুষিয়ে দিতে প্রায় রোজই শরতের শিউলির মতো রোমাঞ্চকর তথ্যে ঠাসা গোপন ই-মেল ফাঁস করে চলেছে উইকিলিক্স। সঙ্গে ফাউ, এফবিআই-এর তদন্তের খবর! কোনও দিন ক্লিন্টন ফাউন্ডেশন নিয়ে, কোনও দিন আবার ই-মেল নিয়ে। এই যেমন সম্প্রতি উইকিলিক্স-খ্যাত জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ দাবি করেছেন, যাঁরা ক্লিন্টন ফাউন্ডেশনকে টাকা দেন, তাঁরাই আইএসকে অর্থ জোগান। এর আগে স্বয়ং হিলারিই ই-মেল হ্যাক নিয়ে বলেছেন, ‘‘ও সব রাশিয়ার চক্রান্ত।’’ শুনে, আমার বন্ধু ব্রেট বললেন, ‘‘আহা রে, পোড়াকপাল! বেচারির মেলগুলোও রাশিয়া এসে লিখে দিয়ে গিয়েছে।’’ এই বাজারে হিলারিকে নিয়ে ইয়ার্কি? ব্রেট চট করে এ-দিক ও-দিক দেখে নিয়ে বললেন, ‘‘পাগল! হিলারি তো ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হোল্ডার। এই প্রথম এক জন হবু প্রেসিডেন্ট পাওয়া গিয়েছে, মার্কিন-রুশ দু’দেশের গোয়েন্দারাই যার পিছনে লেগেছেন।’’

এ সব ঠাট্টা এখানে জনজীবনের অঙ্গ। যদিও ইদানীং দেখছি, ট্রাম্পের কাজকারবারে মজা পাওয়া লোকের সংখ্যা কমছে। আমাদের অফিসের ক্যাফেটেরিয়ায় রাখা আছে মস্ত টিভি। লাঞ্চের সময় ট্রাম্পের মুখ দেখা গেলেই কেউ-না-কেউ ইয়ার্কি মেরে বলতেন, ‘‘ওই ট্রাম্পেট বাজছে।’’ কিন্তু সে সব আর শোনা যায় না। নিয়ম করে এখনও তিনি হিলারিকে ‘ক্রুকেড’ বলছেন, কারও গা নেই। ব্যাপারটা কী? লোকের সহ্যশক্তি কি বেড়ে যাচ্ছে? অফিসের প্রবীণ ট্রাম্প সমর্থকের বক্তব্য, এ সব যুগ-লক্ষণ। এই শিকাগোতেই কয়েক মাস আগে তুমুল বিক্ষোভে বাতিল হয়েছিল ট্রাম্পের সভা। পরে হিলারি শিবিরের ফাঁস হওয়া ভিডিও থেকে স্পষ্ট, সভা ভণ্ডুল করতে লোক ঢুকিয়েছিল তারাই। তাই অনেকে বলছেন, মূল কুচক্রী রাশিয়া নয়, ‘ক্রুকেড’ হিলারি।

Advertisement

কেউ-কেউ বলছেন, বেসবল ও ‘শিকাগো কাবস’-এর সঙ্গে ভোটের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। ৩-১ পিছিয়ে থেকেও শিকাগো শাবকরা এ বার যেমন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ট্রাম্পও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বাকি শুধু মরণকামড়!

যদিও মধ্যবিত্তদের মধ্যে উচ্চকণ্ঠে ট্রাম্পের সমর্থক কমই। নিম্নবিত্ত কৃষ্ণাঙ্গ পাড়াতেও এক হাল। কিছু দিন আগে শিকাগোয় কৃষ্ণাঙ্গদের বিরাট বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা কেউই ট্রাম্পপন্থী নন। তা ছাড়া, স্কুল-কলেজে এখন হু-হু বাম হাওয়া। কয়েক দিন আগে ট্রাম্প সমর্থক দুই ছাত্রীকে ডাকা হয়েছিল স্থানীয় টিভিতে। ট্রাম্প সমর্থক হওয়ার জন্য তাঁরা কী ভাবে কলেজে হেনস্থার শিকার হয়েছেন, সেই গল্প বলছিলেন।

তা সত্ত্বেও এটা আর বলা যাচ্ছে না যে, হিলারিই জিতছেন। আমাদের রাজ্য আইওয়া রিপাবলিকান ঘাঁটি। আমাদের ছোট্ট শহরেও বহু বাড়ির লনে ট্রাম্পের সমর্থনে প্ল্যাকার্ড রয়েছে। আর পুব দিকে মিসিসিপির পাড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের ডিসপ্লে বোর্ডে দেখা যায় মুক্ত অর্থনীতি এবং নানা বাণিজ্য চুক্তির বিরোধিতা। যেন ট্রাম্পেরই নীরব প্রচার। ভোটবাক্সে এ সব কী প্রভাব ফেলবে, কেউ জানে না।

বেসবল ওয়ার্ল্ড সিরিজের ফলাফল জানতেও এ বার শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন