চোখের মণিতে কিলবিল কৃমি!

জলে ধুয়ে, হাত দিয়ে অল্পবিস্তর ঘষাঘষি করেও লাভ হচ্ছিল না। তার পর এক দিন নিজেই চোখের মণি থেকে টেনে বার করলেন সুতোর মতো কী একটা জিনিস! আধ ইঞ্চি মতো লম্বা। আধা স্বচ্ছ।কৃমির মতো মনে হলেও এমনটা আগে কখনও দেখেননি ওই চিকিৎসকও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

বছর চব্বিশের হাসিখুশি, ছটফটে তরুণী। ভালবাসেন পাহাড়-জঙ্গল-ঝর্নার ধারে বন্ধুদের সঙ্গে মজা করতে। ঘোড়ায় চড়তে। কিন্তু এ বারে ছুটি কাটিয়ে আসার কিছু দিন পর থেকেই একটা চোখ করকর করছিল বেশ। জলে ধুয়ে, হাত দিয়ে অল্পবিস্তর ঘষাঘষি করেও লাভ হচ্ছিল না। তার পর এক দিন নিজেই চোখের মণি থেকে টেনে বার করলেন সুতোর মতো কী একটা জিনিস! আধ ইঞ্চি মতো লম্বা। আধা স্বচ্ছ।

Advertisement

ঘাবড়ে যাওয়ারই কথা। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনিও চোখ থেকে বার করে আনলেন অমনই আর দু’টো সুতো! কৃমির মতো মনে হলেও এমনটা আগে কখনও দেখেননি ওই চিকিৎসকও।

অন্ধ হয়ে যাব না তো! আতঙ্কে একশা হয়ে ওরেগনের ব্রুকিংস শহরের অ্যাবি বেকলি ছুটে গিয়েছিলেন চোখের ডাক্তারের কাছে। তিনি বার করলেন আরও তিনটি। কিন্তু সমাধান করতে পারলেন না। অ্যাবি শেষে দ্বারস্থ হলেন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)-এর একটি কেন্দ্রে। সেখানকার গবেষকেরা জানালেন, অ্যাবির চোখে এগুলো কৃমি। থেলাজিয়া পরিবারের। সেখানে আরও ৮টি, অর্থাৎ ২০ দিনে বার করা হল মোট ১৪টি কৃমি। দেখা গেল, আর কোনও কৃমি নেই অ্যাবির চোখে। জ্বালা বা অন্য উপসর্গও নেই ।

Advertisement

ঘটনাটি ২০১৬ সালের। এত দিনের মধ্যে চোখ নিয়ে আর কোনও সমস্যা হয়নি। ভাল আছেন ২৬ বছরের অ্যাবি। ক’দিন আগেই ফেসবুকে পোস্ট করেছেন মজাদার স্নোম্যানের ছবি। আর সিডিসি-র বিজ্ঞানীরাও সদ্যই জানিয়েছেন তাঁর চোখে বাসা বাঁধা কৃমির কাহিনি। ‘ট্রপিক্যাল মেডিসিন’ ও ‘হাইজিন’ পত্রিকায়। ওই গবেষকদেরই এক জন, রিচার্ড ব্র্যাডবেরি। তাঁর কথায়, ‘‘চোখের মধ্যে কিলবিল করছে কিছু কৃমি! এটা ছিল খুবই বিচ্ছিরি, শিউরে ওঠার মতো ব্যাপার।’’ অ্যাবিকে ওই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারলেও অনেকগুলি প্রশ্নের মুখে পড়েন সিডিসি-র গবেষকেরা। কয়েক মাস পরে তাঁরা ঠিক করে চিনতে পারেন ওই জঘন্য পরজীবীগুলি আসলে ‘থেলাজিয়া গুলোসা’। যা থাকে গরুর চোখে। কখনও কখনও বেড়াল বা কুকুরেরও। মূলত, চোখে বসা মাছিদের মাধ্যমে ছড়ায় এই কৃমির লার্ভা। ওই মাছিরা চোখের জল খেয়ে বাঁচে। এবং খাওয়ার সময়ে চোখে চলে যায় কৃমির লার্ভা। সেখানেই বাড়বাড়ন্ত হতে থাকে সেগুলির।

তা বলে মানুষের চোখে ‘থেলাজিয়া গুলোসা’! মানুষের চোখ এতই তৎপর যে, কাছাকাছি কিছু এলেই চোখের পলক পড়ে যায়। মাছি তাতে বসল কী করে? শুরু হয় খোঁজ। অ্যাবির কাছ থেকে গবেষকেরা জানতে পারেন, কিছু দিন আগে দক্ষিণ ওরেগনে এক জায়গায় ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন তিনি। এলাকাটি গো-পালনের জন্য বিখ্যাত। সেখানেই ঘোড়ায় চড়ার সময়ে কোনও মাছি এত দ্রুত এসে চোখে পড়েছিল যে, চোখের পাতাও তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এটা খুবই বিরল ঘটনা। এবং মানুষের চোখে ‘থেলাজিয়া গুলোসা’ বিশ্বে এই প্রথম, জানাচ্ছেন ব্র্যাডবেরি।

এর আগে থেলাজিয়া পরিবারেরই অন্য দুই প্রজাতির কৃমি দেখা গিয়েছে মানুষের চোখে। গোটা ইউরোপ ও এশিয়া মিলিয়ে মাত্র ১৬০টি ঘটনার তথ্য মিলেছে এ পর্যন্ত। আর আমেরিকার ইতিহাসে সংখ্যাটি ১১। চিকিৎসা না করালে এগুলি কর্নিয়ার ক্ষতি, এমনকী অন্ধও করে দিতে পারে । তবে সব কৃমি বার করে দিলে, স্থায়ী সমস্যা বা উপসর্গ থাকে না।

স্বস্তির দিক এই একটিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন