হরদীপ সিংহ নিজ্জর। —ফাইল চিত্র।
খলিস্তানপন্থী সন্ত্রাসবাদীকে কী ভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তার ভিডিয়ো সম্প্রচার করল কানাডা। দেশের সরকারি চ্যানেলে ওই ঘটনার একটি সিসিক্যামেরার ফুটেজ সম্প্রচার করা হয়েছে। আর সেই ভিডিয়ো ঘিরেই শুরু হয়েছে জল্পনা। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ভারতকে বার্তা দিতেই এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আনল কানাডা?
ভারতের সঙ্গে এখন তেমন সুসম্পর্ক নেই কানাডার। কারণ, মাস কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কানাডাকে দোষারোপ করেছিলেন ভারত ভাগ করতে চাওয়া মৌলবাদী শক্তি খলিস্তানপন্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য। অন্য দিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পাল্টা অভিযোগ ছিল, ন’মাস আগে কানাডার রাস্তায় যে খলিস্তানপন্থী সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে হত্যা করা হয়েছিল, তা আসলে ভারতের ঘটানো। ভারত অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করে। কিন্তু তাতে দু’দেশের সম্পর্কের শৈত্য বিন্দুমাত্র কমেনি। এই পরিস্থিতিতেই কানাডার সরকারি চ্যানেলে সম্প্রচার করা হল ওই ভিডিয়ো।
ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, একটি গুরুদ্বারের সামনে দাঁড় করানো ধূসর রঙের একটি র্যাম পিক-আপ ট্রাকে চেপে বেরিয়ে যাচ্ছেন নিজ্জর। ঠিক সেই সময়েই তাকে অনুসরণ করতে শুরু করে সাদা রঙের একটি সেডান গাড়ি। নিজ্জরের গাড়ি যে মুহূর্তে গুরুদ্বারের গেটের বাইরে পৌঁছয় ঠিক তখনই ওই সাদা গাড়ি তাঁর পথরোধ করে দাঁড়ায়। নিজ্জর গাড়ি থেকে বেরনোর আগেই দু’জন ওই সাদা গাড়ি থেকে নেমে তার দিতে ছুটে যায় এবং তাকে প্রায় সামনে থেকেই গুলি করে হত্যা করে এবং অন্য একটি গাড়িতে চেপে পালিয়ে যায়।
গোটা ঘটনাটিই রেকর্ড হয় গুরুদ্বারের সিসি ক্যামেরায়। সেই ভিডিয়ো ফুটেজই সম্প্রচার করেছে কানাডার সরকারি চ্যানেল সিবিসি নিউজ়। ওই ফুটেজ সংগ্রহ করেছিল সিবিসিরই একটি ধারাবাহিক তদন্তমূলক তথ্যচিত্র ‘দ্য ফিফথ এস্টেট’-এর প্রোডাকশন টিমের কাছ থেকে। একাধিক সূত্রে ফুটেজটি যাচাই করানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, নিজ্জরকে ২০২০ সালে সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করেছিল ভারত। তিন বছর পর গত ২০২৩ সালের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারের একটি গুরুদ্বারের সামনে তাঁকে হত্যা করা হয়।
সিবিসির ধারাবাহির তদন্তমূলক তথ্যচিত্র ‘দ্য ফিফথ এস্টেট’-এ অবশ্য ওই সিসিটিভি ফুটেজের পাশাপাশি দুই প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানও তুলে ধরা হয়েছে। ঘটনাটির সময় গুরুদ্বারের সংলগ্ন মাঠে ফুটবল খেলছিলেন দুই যুবক— ভূপিন্দর সিংহ সিধু এবং মলকিত সিংহ। তাঁরা জানিয়েছেন, ঘটনাটি ঘটতে দেখে তাঁরা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সিধু নিজ্জরকে সামলান, মলকিতকে বলেন দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা অন্য একটি গাড়িতে বেরিয়ে যাওয়ায় আর তাদের নাগাল পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, কানাডার পুলিশ এখনও পর্যন্ত নিজ্জর হত্যার ঘটনায় কোনও সন্দেহভাজনের নাম জানাতে পারেনি। যদি কানাডার সরকার মনে করে এর নেপথ্যে ভারতেরই হাত আছে।