ট্রাম্প-পুতিন বিশ্বাসে চিড় গ্যাস-তরজায়

সিরিয়ায় বিষ গ্যাস হামলা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির আগে দিনভর যুদ্ধ! চাপ ও পাল্টা চাপের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মস্কো শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ০২:১৫
Share:

বাগ্‌যুদ্ধ: ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন

সিরিয়ায় বিষ গ্যাস হামলা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির আগে দিনভর যুদ্ধ! চাপ ও পাল্টা চাপের।

Advertisement

মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসন মস্কোয় গিয়ে পৌঁছেছেন গত কাল। ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে রাখার পরে রুশ প্রসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন। তার আগে বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠকে রেক্স আজ অভিযোগ তোলন, রাশিয়া সিরিয়ায় গ্যাস হানার ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলি মনে করে সিরিয়ার প্রেসিডন্ট বাশার আল-আসাদকে আর সমর্থন করা উচিত নয় পুতিনের। পাল্টা চাপ বজায় রেখে ল্যাভরভ বৈঠকের গোড়াতেই আমেরিকাকে সতর্ক করে দিলেন, তারা যেন সিরিয়ায় ফের কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা না চালায়।

এর আগে এ দিনই এক টিভি সাক্ষাৎকারে রীতিমতো ক্রুদ্ধ রাশিয়ার প্রসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ ফের দাবি করেন, বিষ গ্যাসের হামলাই হয়নি সিরিয়ায়। দেশের ৮৭ জন নাগরিককে সারিন গ্যাস দিয়ে মেরে ফেলার যে অভিযোগ প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে উঠেছে, সে বিষয়ে পুতিনের স্পষ্ট দাবি, ‘‘সিরিয়ায় আদৌ রাসায়নিক অস্ত্র নেই। ওই অস্ত্রের ভাণ্ডার তারা নষ্ট করে দিয়েছে।’’

Advertisement

একটা হত্যালীলার খবর প্রচারিত হওয়ার পরেও তার সত্যাসত্য নিয়ে বিশ্বের দেশগুলি যখন এমনই দু’ভাগ, তারই মধ্যে প্রকৃত তথ্য জানার জন্য নিরাপত্তা পরিষদে তদন্তের দাবি তুলেছে ব্রিটেন, আমেরিকা ও ফ্রান্স। তাদের প্রস্তাবে সিরিয়ার বাহিনীর ৪ এপ্রিলের গ্যাস হামলাকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সিরিয়া যেন ওই দিনের সব উড়ানের তথ্য দিয়ে ও অন্য ভাবে তদন্তে সহযোগিতা করে। প্রস্তাবটিতে রাশিয়া ভেটো দেবে জানিয়েই দিয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদে এই সব নিয়ে আলোচনার ঢের আগেই অবশ্য সিরিয়ার বিমানবন্দরে ৫৯টি টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ফেলেছে মার্কিন সেনা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই অভিবাসন ও অন্যান্য নীতি নিয়ে ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়লেও এই প্রথম বার আমেরিকার পুরোনো সব মিত্র দেশ ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই সমর্থনে উৎসাহিত ট্রাম্প এখন আসাদের পাশ থেকে পুতিনকে সরিয়ে আনতে কূটনৈতিক অভিযানে নেমেছেন। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা সম্ভব এবং ট্রাম্পের আসল লক্ষ্যটি ঠিক কী— তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে রাশিয়ার-ঘনিষ্ঠ বলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছিল, তাতে বোধ হয় কিছুটা জল পড়েছে এ বার। পুতিন বলেছেন, ‘‘জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্বে আসার পরে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সামরিক দিক দিয়ে দু’দেশের মধ্যে বিশ্বাস বাড়া তো দূর, বরং কমে গিয়েছে।’’ সন্দেহ নেই ট্রাম্প সিরিয়া নিয়ে একা এগোতেই সম্পর্কের এই অবনতি।

এর আগে ইরাকেও সাদ্দাম হুসেনের সরকারের হাতে রাসায়নিক অস্ত্র থাকার অভিযোগ উঠেছিল। যে অভিযোগ ও রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিদের রিপোর্টের ভিত্তিতে জর্জ ডব্লিউ বুশের আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করে। পরে দেখা যায় তেমন কোনও অস্ত্র নেই সে দেশে। পুতিনের অভিযোগ, আসাদকে হঠাতে তেমনই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদেও এ দিন রাশিয়া ও সিরিয়ার দূত একই অভিযোগ তোলেন। তুরস্ক অবশ্য গত কালও দাবি করেছে, গ্যাসে হতাহতদের রক্তে নিষিদ্ধ নার্ভ এজেন্ট তথা সারিন গ্যাসেরই লক্ষণ মিলেছে। নিরাপত্তা পরিষদে আজ একই দাবি করেন ব্রিটেনের বিশেষজ্ঞরা।

যাদের অভিযোগই সত্য হোক, এই চাপানউতোর কি যুদ্ধের পূর্বলক্ষণ? ট্রাম্প কিন্তু আজও বলেছেন, ‘‘আমরা সিরিয়ায় (যুদ্ধ করতে) ঢুকব না।’’ ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোর সঙ্গে নতুন কোনও দেশে সেনা পাঠাতে রাজি ছিলেন না ওবামাও। তাঁর কট্টর সমালোচক ট্রাম্প এই ক্ষেত্রে ওবামার পথে থাকার কথাই বলছেন। অন্তত এখন পর্যন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন