Russia-Ukraine Conflict

Russia-Ukraine Conflict: রুশ আগ্রাসন রুখতে শেক্সপিয়র থেকে চার্চিল আউড়ে ব্রিটেনের সাহায্য চাইলেন জেলেনস্কি

পরনে সেনাবাহিনীর খাকি টি-শার্ট। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিরোধের বার্তা দিয়ে রুখে দাঁড়ানো এই মুখটি এখন অতি-পরিচিত।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ ০৬:৫৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

পরনে সেনাবাহিনীর খাকি টি-শার্ট। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিরোধের বার্তা দিয়ে রুখে দাঁড়ানো এই মুখটি এখন অতি-পরিচিত।
যা স্ক্রিনে ভেসে উঠতেই এ দিন উচ্ছ্বাসে মুখরিত হল গোটা চেম্বার। এর সঙ্গে ব্রিটেনের ‘হাউস অব কমন্স’-এ গড়া হল এক নতুন ইতিহাস।

Advertisement

অতীতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওয়েস্টমিনস্টার হল বা হাউস অব লর্ডস-এ বক্তব্য রেখে গিয়েছেন বহু রাষ্ট্রনেতা। তবে সোজা চেম্বারে প্রবেশ করে এমপিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ এর আগে কেউ পাননি। যা দেওয়া হয়েছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত পড়শি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিকে। ভিডিয়ো লিঙ্কের মাধ্যমে মঙ্গলবার এই সভায় যোগ দিয়েছিলেন জ়েলেনস্কি। শেক্সপিয়র থেকে শুরু করে চার্চিল— এক এক করে ব্রিটেনের খ্যাতনামা ভূমিপুত্রদের লেখনী বা মন্তব্য ধার করে বোঝাতে চাইলেন প্রতিপক্ষ রাশিয়ার আগ্রাসনকে মাত দিতে ব্রিটেনের সহযোগিতা এখন ঠিক কতটা প্রয়োজন তাঁদের।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের অবস্থান ব্যক্ত করতে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন— সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু করে আকাশ, সব জায়গাতেই লড়বে ব্রিটেন। সেই সুরেই মঙ্গলবার জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘জঙ্গল, মাঠ, সৈকত থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, রাশিয়ার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ব। সমুদ্রে। আকাশে। আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে সব জায়গায় যুদ্ধ চালিয়ে যাব... সে তার বদলে যা-ই খেসারত দিতে হোক না কেন।’’

Advertisement

ইউক্রেনীয় ভাষাতেই তাঁর বক্তব্য রাখেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট। বিশেষ হেডফোনের মাধ্যমে যার ইংরেজি অনুবাদ শুনছিলেন এমপি-রা। এই বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য রাতারাতি ৫০০টি হেডফোনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল পার্লামেন্টে। অতিথিদের গ্যালারিটিও ছিল ভিড়ে ঠাসা। জ়েলেনস্কির বক্তব্য শোনাতে নিজের ছ’বছরের কন্যাকে নিয়ে এসেছিলেন এক এমপি। উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতও।

‘টু বি অর নট টু বি’— শেক্সপিয়র রচিত নাটক হ্যামলেটের এই জনপ্রিয় লাইনটিও নিজের বক্তব্যে তুলে ধরেন জ়েলেনস্কি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কাছে এখন প্রশ্ন হল, ‘টু বি অর নট টু বি’। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত ১৩ দিনে এই প্রশ্নটি করা যেত, তবে এখন আমি এর চূড়ান্ত জবাব দিতে পারব। তা হল, অবশ্যই হ্যাঁ— টু বি!’’

এর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটেনের পরিস্থিতির সঙ্গে ইউক্রেনের তুলনা টানেন জ়েলেনস্কি। বলেন, ‘‘আমাদের যা আছে তা আমরা হারাতে চাই না। ঠিক যেমন আপনারা নাৎজ়িদের কাছে নিজেদের দেশকে হারাতে চাননি।’’ সঙ্গে গত ১৩ দিনে ইউক্রেনের উপর দিয়ে বয়ে চলা ঝড়ের বিবরণ দিয়ে চলেন জ়েলেনস্কি। এমপি-দের কাছে রাশিয়াকে ‘সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র’ হিসাবে দেখার আর্জি জানান তিনি। দাবি জানান, ব্রিটেন যাতে আরও নিষেধাজ্ঞা চাপায় রাশিয়ার উপর, রুশদের জন্য যেন বন্ধ করা হয় ব্রিটেনের আকাশপথ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমরা সাহায্য চাইছি, আপনাদের মতো সভ্য দেশগুলির সাহায্য।’’

‘সকলের হৃদয়ে ধাক্কা দিয়েছে’ তাঁর বার্তা, জ়েলেনস্কির বক্তব্য শেষে হাউসের তরফে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টকে এ কথা জানান ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বরিস বলেন, ‘‘আমি জানি আমি গোটা হাউসের হয়েই এটা বলছি যে ব্রিটেন এবং তার সহযোগীরা প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করে ইউক্রেনকে তাদের ভূমি বাঁচানোর লক্ষ্য নিশ্চিত করার পক্ষেই।’’

বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ের স্টারমার তুলে ধরেন যে, জ়েলেনস্কি চাইলেই যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারতেন। তাঁর কাছে সেই সুযোগও ছিল। সকলে বিষয়টি বুঝতও। তবে তিনি তা করেননি। তিনি আরও বলেন, ‘‘পুতিন বেশির ভাগ সময়েই যা চেয়েছেন, তা করিয়ে নিয়েছেন। তবে জ়েলেনস্কির দৃঢ়তা বিশ্বকে পুতিনের বিরুদ্ধে পাঞ্জা শক্ত করায় অনুপ্রাণিত করেছে। গোটা ইউক্রেনকে রুখে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করেছেন তিনি। আর রাশিয়ার পরিকল্পনা পণ্ড করার দিকে পা বাড়িয়েছেন।’’

নেতাদের অভিবাদনেই থেমে থাকেনি জ়েলেনস্কি-স্তুতি। পশ্চিমি দেশগুলির নেতা বলেও তাঁকে উল্লেখ করতে শোনা যায় লেবার পার্টির এক এমপিকে। এমনকি সভার শেষ ভাগে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিবাদন জানায় গোটা হাউস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন