বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: রয়টার্স।
জুলাই গণহত্যার মামলায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফাঁসির শাস্তি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। পাঁচটি অভিযোগের ক্ষেত্রে মোট তিনটি ধারায় তাঁর দোষ প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং প্রাক্তন পুলিশকর্তা চৌধুরী আবদুল্লা আল-মামুনকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক। তাঁরা ভারতে রয়েছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাই আসাদুজ্জামানকেও ফাঁসির শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দু’জনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। তবে আল-মামুনকে কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমা প্রদর্শন করেছে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি মহম্মদ শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মহম্মদ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর ট্রাইবুনাল। তিনি রাজসাক্ষী হয়েছেন। এখনও বাংলাদেশ পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। তাঁকে পাঁচ বছরের কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার ঢাকার আদালতকক্ষে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শোনান বিচারপতিরা। হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হলে আদালতকক্ষ হাততালিতে ফেটে পড়ে। জুলাই গণহত্যায় নিহতদের পরিবারকে এবং আহতদের আর্থিক সাহায্যের নির্দেশও দিয়েছে ট্রাইবুনাল।
মোট পাঁচটি অভিযোগ তোলা হয়েছিল হাসিনাদের বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর থেকে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে এই সংক্রান্ত মামলা চলছে। অভিযোগগুলি হল—
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল জানিয়েছে, মোট তিনটি ধারায় হাসিনার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। প্রথমত, তিনি উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন, যা পরিস্থিতিকে অগ্নিগর্ভ করে তোলে। দ্বিতীয়ত, আন্দোলন দমনের জন্য বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাসিনা। তৃতীয়ত, দমনপীড়ন আটকানোর ক্ষেত্রে পুলিশকে তিনি নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন। উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগে হাসিনাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি দু’টি ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
হাসিনা ভারতে রয়েছেন। তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় ভারত সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে, জানিয়েছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী। তিনি আরও জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে হাসিনা আপিল করতে পারবেন না। কারণ, তিনি পলাতক। আপিল করার হলে রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে পুলিশ হাসিনাকে গ্রেফতার করতে পারলেও তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ পেতেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারত সরকারকে ফের চিঠি দেবে ঢাকা।