Hillary Clinton

শেষপ্রহরের উৎকণ্ঠায় কাঁপছে আমেরিকা

এই বিশাল বড় দেশটায় যেমন ভাবে সূর্যের আলো পড়তে পড়তে আসছে তেমন ভাবে ভোটের শুরু এবং শেষ হবে। আমেরিকায় ছ’টা টাইম জোন। ফলে ফলে ভারতের মতো সর্বত্র একসঙ্গে নির্বাচন শুরু করা সম্ভব নয়। নিউ হ্যাম্পশায়ারে সবচেয়ে আগে ভোট নেওয়া শুরু হয়েছে।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সিংহ

ফিলাডেলফিয়া, পেনসিলভ্যানিয়া শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৫
Share:

এই বিশাল বড় দেশটায় যেমন ভাবে সূর্যের আলো পড়তে পড়তে আসছে তেমন ভাবে ভোটের শুরু এবং শেষ হবে। আমেরিকায় ছ’টা টাইম জোন। ফলে ফলে ভারতের মতো সর্বত্র একসঙ্গে নির্বাচন শুরু করা সম্ভব নয়। নিউ হ্যাম্পশায়ারে সবচেয়ে আগে ভোট নেওয়া শুরু হয়েছে। শেষও হয়েছে সবচেয়ে আগে।

Advertisement

ফিলাডেলফিয়ায় যেখানে রয়েছি, তার কাছেই লাডলো স্ট্রিটে ক্যাটো এডুকেশন সেন্টারে একটা নির্বাচন কেন্দ্র হয়েছে। সকালে সেখানে গিয়ে দেখি, নাতিদীর্ঘ লাইন পড়েছে। এখানে খুব বড় লাইন প্রত্যাশিত নয়ও। তা ছাড়া, ভোটের সময়ও অনেকটা বেশি। সকাল সাতটায় ভোট শুরু। শেষ রাত আটটায়। যাতে অফিস থেকে ফিরে ভোট দেওয়া যায়। সময়মতো যে যার ভোট দিয়ে আসেন। ভোটের লাইন বড় না হওয়ার আর একটা বড় কারণ হল, আর্লি ভোটিংয়ের সুযোগ নিয়ে অনেকে ভোটের নির্ধারিত দিনের আগেই নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকারটি প্রয়োগ করেন। এ বারেই তো আর্লি ভোটিংয়ে রেকর্ড হয়ে গিয়েছে। প্রায় চার কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ আগাম ভোটে তাঁদের মতামত জানিয়ে দিয়েছেন।

হইহুল্লোড় নেই। ১০৫ বছরের বৃদ্ধ ঠাকুমা নাতির কোলে চড়ে ভোট দিতে আসছেন, কিংবা বড়কর্তার সঙ্গে গোটা পরিবারের লোকজন ভোট দিতে আসছেন, এমন দৃশ্য এখানে নেই। রিগিংয়ের অভিযোগ একেবার নেই বলা যাবে না। তবে নগণ্য। এমনকী, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের কিছুটা দূরে বিভিন্ন দলের ছাউনি নেই। ভোটকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ নেই। এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটারেরা গল্পগুজব করছেন। কেউ বই বা কাগজ এনেছেন পড়ার জন্য। অল্পবয়সীদের খুব বেশি নজরে পড়েনি। এরা বোধহয় আগেই ভোট দিয়েছেন। শুধু একজনকে দেখলাম। ভোটকেন্দ্রের বাইরে সেলফি তুলছেন।

Advertisement

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ল, এ বার ১৯টা রাজ্য ‘ব্যালট সেলফি’র অনুমোদন দিয়েছে। হয়তো আগামী দিনে সমস্ত রাজ্যেই হয়তো এটা অনুমোদন করবে। তখন ভোটের সঙ্গেই চলবে গণনা। ভোট শেষ, ফলাফলও চূড়ান্ত। বিশ্বের প্রাচীনতম গণতন্ত্র আরও অনেক কিছুতেই হয়তো বিশ্বকে পথ দেখাবে।

হিলারি তাঁর স্বামী ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নিউ ইয়র্কের চ্যাপেকোয়ায় ভোট দিয়ে হাসি হাসি মুখে মিডিয়াকে বাইট দিয়েছেন, ট্রাম্পও তাই। তবে কার হাসি শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়, মিডিয়ার ভাষায় ‘সেটাই এখন দেখার’।

শেষবেলায় সকলেই তাকিয়ে রয়েছে ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটগুলোর দিকে। শেষ ন’টা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে এই রাজ্যগুলোই যুযুধান প্রার্থীদের মধ্যে ফারাক গড়ে দেয়। তাই বলে এমন নয়, যে এই রাজ্যগুলো নির্দিষ্ট। প্রতিবারই রাজ্যগুলো বদলে যায়। এ বারে কেউ বলছেন আটটা কেউ বলছেন ১১টা। আবার যে সমস্ত সমীক্ষা জয়-পরাজয় নিয়ে সন্দিহান, তারা বলছে ১৩টা রাজ্য রয়েছে এই তালিকায়। বর্ণানুক্রমে বলা যায়, অ্যারিজোনা, কলরাডো, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, আইওয়া, জর্জিয়া, মিচিগান, নেভাদা, নিউহ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওয়াহো, পেনসিলভ্যানিয়া, ভর্জিনিয়া, উইস্কনসিন। এই রাজ্যগুলোর মতিগতি বুঝতে পারছেন না ভোট বিশেষজ্ঞেরা।

প্রতি বছর এই ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোর নাম বদলে যাওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকে। ওই রাজ্যগুলোর নিজস্ব ইস্যু তো থাকেই তা ছাড়া অনেক সময় বিশেষ কোনও প্রার্থীর প্রতি আনুগত্য তৈরি হয়। যেমন এবার উটাহ নামে অঙ্গরাজ্যটিতে ইভান মাককালান নাকি জিতে যাবেন। অথচ অনেক জায়গায় ব্যালটে নাকি তাঁর নামই নেই।

প্রতি চার বছরে ভোট হয়। এরই মধ্যে হয়ে যায় জনসংখ্যার প্রকৃতিগত পরিবর্তন।

পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূলের রাজ্যগুলোতে এই ধরনের পরিবর্তন বেশি ঘটে থাকে। আমেরিকার মানচিত্র খেয়াল করলে দেখা যাবে, মাঝখানের রাজ্যগুলোতে যেখানে মূলত আমেরিকান শ্বেতাঙ্গদের বাস, সেখানে রিপাবলিকানদের আধিপত্য বেশি। কিন্তু ওই রাজ্যগুলোর জনসংখ্যা তো তেমন বেশি নয়। ফলে ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যাও বেশ কম। ডেমোক্র্যাটদেরও কিছু রাজ্যে শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। মুশকিল হচ্ছে, ‘ঘরেও নহে পারেও নহে’ রাজ্যগুলোকে নিয়ে।

প্রতিবার নির্বাচনে এই রাজ্যগুলো বেশি প্রাধান্য পেয়ে যায়। যেমন এ বার বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে ফ্লোরিডা। তারপরেই রয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনা। এদের ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যাও বেশি। ফলে নির্বাচনী প্রচারেও এই রাজ্যগুলো বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে গিয়েছিল প্রতিপক্ষ দুই প্রার্থীর কাছেই।

ফ্লোরিডায় তো সমানে সমানে টক্কর। হিলারি-ট্রাম্প দু’জনেই ৪৫ শতাংশ ভোট পাবেন বলে সমীক্ষাগুলো বলছে। এখানে নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি ডলার খরচ করেছেন প্রচারে। নর্থ ক্যারোলাইনায় এবার হিসপ্যানিক ভোটারদের বলা হচ্ছে, ‘ঘুমন্ত দৈত্য’ শেষপর্যন্ত তাঁরা কোনদিকে ঝুঁকবেন সেটাই প্রশ্ন। হিসপ্যানিক, ল্যটিনো এশিয়রাই বা কাকে জেতাবেন শেষ পর্যন্ত? আর কয়েকঘণ্টার মধ্যেই তার ফয়সালা হয়ে যাবে।

অফিস থেকে কফিশপ কিংবা পাবে এখন আলোচনা ফলাফলকে ঘিরেই। জয়পরাজয়ের উপর ভিত্তি করে সেলিব্রেশন’ও শুরু হল বলে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন