Wildfire at Canada

কানাডার দাবানলের ধোঁয়া পৌঁছে গিয়েছে নরওয়েতে

নিউ ইয়র্ক শহরের ম্যানহাটনে থাকে আমার ছেলে। সে জানাল,  গত দু’এক দিন ধরে এক অদ্ভুত সিপিয়া টোনে ঢেকে গিয়েছে শহর। বেলা বাড়ার সাথে সেই রং হয়েছে হলুদ থেকে কমলা।

Advertisement

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

বস্টন শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ ০৮:১৪
Share:

কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় এক নদী অববাহিকায় দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। রয়টার্স

একটা হলুদ-কমলা রঙের ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে গিয়েছে নিউ ইয়র্ক শহর। বিপর্যস্ত সমগ্র নিউ ইয়র্ক প্রদেশের মানুষও। বৃহত্তর বস্টন এলাকার যেখানে আমি থাকি, সেখানে মেঘলা দিনে ধোঁয়াশা বোঝা না গেলেও প্রশাসন ও আবহবিদদের দাবি, ১৯৬০ সালের পরে বাতাসের মান এত খারাপ হয়নি কখনওই। আমার সাতাশ বছরের আমেরিকা প্রবাসে বহু প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু কয়েকশো মাইল দূরে কানাডায় জ্বলতে থাকা দাবানলের প্রভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তনের এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম। খবরে জানলাম, কানাডা থেকে গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড হয়ে ধোঁয়া পৌঁছেছে নরওয়েতেও।

Advertisement

নিউ ইয়র্ক শহরের ম্যানহাটনে থাকে আমার ছেলে। সে জানাল, গত দু’এক দিন ধরে এক অদ্ভুত সিপিয়া টোনে ঢেকে গিয়েছে শহর। বেলা বাড়ার সাথে সেই রং হয়েছে হলুদ থেকে কমলা। তার পরিচিতদের যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা অনেকেই অস্বস্তি বোধ করছেন। হাওয়াতে ক্যাম্পফায়ারের গন্ধের কথা বলছেন অনেকেই, আর মুখে একটা ধাতব স্বাদ। শহরের মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রয়োজন না থাকলে বাইরের বেরোতে বারণ করেছেন। নিতান্ত বেরোতে হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। গত মঙ্গলবার তো মেরিল্যান্ড থেকে নিউ হ্যাম্পশায়ার পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চলের মানুষ দেখেছেন ধোঁয়ার চাদরে মোড়া টকটকে লাল সূর্য। গোটা উত্তর-পূর্ব আমেরিকার এক বিস্তৃত অঞ্চলকে প্রভাবিত করেছে দাবানলের থেকে বয়ে আসাএই ধোঁয়া।

কয়েক দিন ধরে আবহাওয়া সংক্রান্ত নতুন এক সতর্কতা আসছে ফোনে। প্রথমে খেয়াল করিনি, কিন্তু চার পাশের পরিবেশ ও সমাজমাধ্যমে ধোঁয়াশার ছবি দেখে খেয়াল করতেই হল। প্রশাসন থেকে জানানো হচ্ছে, বাতাসে ক্ষতিকর সূক্ষ্ম কণার পরিমাণ (সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার) বেড়ে গিয়েছে চরম ভাবে। নিউ ইয়র্ক শহরের বাতাসে সূক্ষ্মকণার উপস্থিতি যেখানে ৩৫-৪০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটারে থাকে, সেটা কয়েক দিন ধরেই ৪০০ মাইক্রোগ্রাম–এর আশপাশে থাকছে। ফলে, ব্যাপক ভাবে ব্যাহত হয়েছে বিমান পরিষেবা।

Advertisement

গভীর জঙ্গলে ঢাকা কানাডার দক্ষিণাঞ্চলে দাবানলের ঘটনা কিন্তু নতুন নয়। প্রতি বছরই আগুন জ্বলে। তবে এই বছর তীব্রতা ও দাবানলের বিস্তৃতি এত বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘদিনের বৃষ্টিহীনতা। প্রশাসন জানিয়েছে, এ বারের দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দশ লক্ষ একরেরও বেশি জমি। এর আগে কানাডার অ্যালবার্টা প্রদেশের বহু দিন ধরে জ্বলতে থাকা দাবানলের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল আমেরিকার মন্টানা থেকে দক্ষিনে কলোরাডো এবং পূর্বে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত। আর এখন উত্তর পূর্বের কেবেক আর নোভা স্কোশিয়াতে জ্বলছে দাবানল। যার জের ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণ ক্যারোলাইনা প্রদেশ পর্যন্ত।

আবহবিদদের কথায়, বড় দাবানলের ধোঁয়া বায়ুস্তরের অনেকটা ওপরে উঠে যায় ও বদলাতে থাকা হাওয়ার গতিপথের সাথে ছড়িয়ে পড়ে অনেক অনেক দূর পর্যন্ত। যে কারণে এ ভাবে সমগ্র আমেরিকা জুড়েই কার্যত ছড়িয়ে পড়ছে ধোঁয়া। আশা করা যায়, কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে এই ধোঁয়া বায়ু স্তরের নীচে নেমে আসে।

প্রশ্ন একটাই, গত কয়েক দশকে আমেরিকায় দাবানল ও সেই সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে ব্যাপক আকারে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পরিবেশের অবক্ষয়। ক্রমশ সচেতনতার বদলে বিপর্যয়ই কি ‘স্বাভাবিক’ হয়ে উঠবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন