জলবায়ু খসড়া পেশ, সবুজ সঙ্কেত দিল্লির

কোপেনহাগেন পারেনি। পারল প্যারিস। ছ’বছর আগে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ভেস্তে গিয়েছিল কোপেনহাগেনে। প্যারিসে ১৯৬টি দেশ ১৩ দিন ধরে আলোচনা করে সামনে নিয়ে এল এক চূড়ান্ত খসড়া।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

প্যারিস শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:০৭
Share:

আর কোনও বিকল্প পথ নেই, প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনের এই বার্তা জ্বলজ্বল করছে আইফেল টাওয়ারেও। ছবি: এএফপি।

কোপেনহাগেন পারেনি। পারল প্যারিস। ছ’বছর আগে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ভেস্তে গিয়েছিল কোপেনহাগেনে। প্যারিসে ১৯৬টি দেশ ১৩ দিন ধরে আলোচনা করে সামনে নিয়ে এল এক চূড়ান্ত খসড়া। যাতে বলা হল, পৃথিবীর তাপমাত্রা যেন বর্তমানের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে, সেটা নিশ্চিত করাই হোক বিশ্বের লক্ষ্য। তবে পাখির চোখ হবে উষ্ণায়নকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমায় বেঁধে রাখা। উন্নয়নশীল দেশগুলিকে এর জন্য যথেষ্ট অনুদান দেওয়া ও ৫ বছর অন্তর উষ্ণায়নের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার কথাও বলা রয়েছে খসড়ায়।

Advertisement

উষ্ণায়ন থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে এটাই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক খসড়া, যাতে সায় দিয়েছে ভারত, চিন এবং জি-৭৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিও। ২০০৯-এ ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে যা সম্ভব হয়নি। উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর দায় কোন দেশ কতটা নেবে, সেই প্রশ্নেই ভেস্তে গিয়েছিল আলোচনা। ফলে এ বারও প্রশ্ন ছিল, ঐকমত্য হবে কি? কার্বন নির্গমনের প্রশ্নে উন্নত বনাম উন্নয়নশীল দেশগুলোর তরজায় এই প্রথম মধ্যপন্থা দেখাল প্যারিসের সম্মেলন। ১৩ দিনের মাথায় এখানে রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ও বিদেশমন্ত্রী লরেন ফঁব পেশ করলেন খসড়া প্রস্তাব। আর্জি জানালেন, খনিজ তেল, কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্রিন হাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা এবং বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে এই ‘ঐতিহাসিক’ খসড়া গ্রহণ করুক প্রতিটি দেশ।

ভারত এতে খুশি। কারণ ভারতের বক্তব্যগুলি এতে গুরুত্ব পেয়েছে বলেই দাবি করেছেন ভারতের পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। তাঁর কথায়, ‘‘প্রাথমিক ভাবে খসড়াটি পড়ে আমরা খুশি। এই রিপোর্টে ভারতের সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ ১৯০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে ওলাঁদরা এ দিন খসড়াটি পেশ করেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুনও। ওলাঁদের কথায়, ‘‘এই খসড়া সাহসী এবং বাস্তবসম্মত। বিশ্বের প্রতিটি দেশের কাছে ফ্রান্সের আর্জি, এই রিপোর্ট কার্যকর করা হোক। এটা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।’’ খসড়াটি পড়ার জন্য ঘণ্টা তিনেকের বিরতিও ঘোষণা হয়।

Advertisement


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন...

কী রয়েছে ৩১ পাতার এই খসড়ায়? এক, যত দ্রুত সম্ভব বাতাসে গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ বৃদ্ধির হার শূন্যে নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি, এই শতকের মধ্যে বাতাসে গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হওয়া এবং তার শোষণের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করতে হবে।

দুই, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বাঁধতে হবে। তবে পাখির চোখ করতে হবে দেড় ডিগ্রির সীমাকে।

তিন, এই লক্ষ্যে কাজ কতটা হয়েছে, তার মূল্যায়ন করতে হবে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর।

চার, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ২০২০ সালের মধ্যে জলবায়ু-সুরক্ষা খাতে বছরে ন্যূনতম ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার (ভারতীয় মূল্যে ৬ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা) অনুদান দিতে হবে। কাজ এগোলে ভবিষ্যতেও আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি। প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণে কাজ এগোলে ২০২৫ সালে আর্থিক অনুদান বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা।

সূত্রের খবর, এই খসড়া পেশ করার পরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ওলাঁদ। আর্জি জানান, এই খসড়ায় অনুমোদন দেওয়ার। ওলাঁদের সঙ্গে কথা বলেই রিপোর্টটি নিয়ে সহমত পোষণ করেন মোদী। পরে এ নিয়ে ভারতের অবস্থান জানান জাভড়েকর। প্রসঙ্গত, ওই বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে বাতাসে কার্বন নির্গমনের প্রশ্নে উন্নত দেশগুলোর নীতিকে এক হাত নিয়েছিলেন মোদী। বলেছিলেন, উন্নত দেশগুলো প্রভূত পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে পরিবেশের ক্ষতি করছে। আর তার দায় চাপাচ্ছে ভারতের মতো দেশগুলির উপরে। এর পরে সম্মেলনে গৃহীত এই খসড়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অনুদান এবং বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ায় একে ‘ভারতের সাফল্য’ বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি। জাভড়েকরের মতে, ভারসাম্য বজায় রেখেই তৈরি হয়েছে এই খস়ড়া। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর তফাতের কথা উল্লেখ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ায় খুশি ভারত। একই সুর শোনা গিয়েছে চিন এবং সৌদি আরবের মুখপাত্রদের গলাতেও। এলএমডিসি (লাইক মাইন্ডেড ডেভলপিং কান্ট্রিজ)-এর তরফে গুরদয়াল সিংহ নিজার বলেন, ‘‘আমরা এই চুক্তিতে খুশি। আমাদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভারত রাজি, চিন রাজি, সৌদিও রাজি!’’

তবে শুধু ভারত, চিন বা সৌদি নয়, পৃথিবীকে বাঁচাতে পৃথিবীর প্রতিটি দেশকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ওলাঁদ। তিনি জানান, এই রিপোর্টের পরিকল্পনা দেশগুলো গ্রহণ করলে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণে অনেকটাই লাগাম পরানো যাবে। আর তা না হলে ফের ব্যর্থ হবে পৃথিবীকে বাঁচানোর এই উদ্যোগ। ২০০৯ সালে কোপেনহাগেনের জলবায়ু সম্মেলন ভেস্তে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ওলাঁদ বলেন, ‘‘ইতিহাসের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে। কোপেনহাগেনের পুনরাবৃত্তি আমরা কেউই চাই না।’’

জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে এই খসড়াই যে এই মুহূর্তে একমাত্র আশার আলো তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বান কি মুনও। তাঁর কথায়, ‘‘কোটি কোটি মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে। জাতীয় স্বার্থের খাতিরেই এ বার আমাদের বিশ্ব জুড়ে এক হওয়ার সময় এসেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন