অভিজিৎ-হত্যায় ধৃত মূল সন্দেহভাজন

বছর পাঁচেক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সঙ্গে বাদানুবাদ হয়েছিল ব্লগার অভিজিৎ রায়ের। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে কট্টরপন্থী শফিউর রহমান ফারাবিকে ‘ব্লক’ করে দিয়েছিলেন অভিজিৎ। সোমবার সেই ফারাবিকেই অভিজিৎ-হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করল বাংলাদেশের ‘র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন’ বা র‌্যাব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৩
Share:

ধৃত ফারাবি। নিজস্ব চিত্র

বছর পাঁচেক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সঙ্গে বাদানুবাদ হয়েছিল ব্লগার অভিজিৎ রায়ের। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে কট্টরপন্থী শফিউর রহমান ফারাবিকে ‘ব্লক’ করে দিয়েছিলেন অভিজিৎ। সোমবার সেই ফারাবিকেই অভিজিৎ-হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করল বাংলাদেশের ‘র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন’ বা র‌্যাব। তারা জানিয়েছে, এ দিন ঢাকার যাত্রাবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে।

Advertisement

র‌্যাবের আইন ও সংবাদ বিভাগের প্রধান মুফতি মাহমুদ খান সোমবার বলেন, “ফারাবি যে অভিজিৎকে খুন করার হুমকি দিয়েছিল, তা স্বীকার করেছে।” র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার কর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ আরও জানান, ধৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় ছাত্র শিবিরের (জামাতে ইসলামির ছাত্র শাখা) নেতা ছিল। তবে কট্টরপন্থী ভাবধারার একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে এর বহু পরে তার নাম উঠে আসে। এর আগে গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগার আহমেদ রাজীবকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয়েছিল তাকে। কিন্তু পরে ছাড়া পেয়ে যায়।

এ বার কী হবে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। শুধু শোনা গিয়েছে, হুমকি দেওয়ার কথা মানলেও অভিজিৎ খুনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা এখনও স্বীকার করেনি ফারাবি। মুফতির যুক্তি, কোনও অপরাধীই প্রথমে অপরাধের কথা স্বীকার করে না। জিজ্ঞাসাবাদের পর সেই স্বীকারোক্তি মেলে। আপাতত প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে জানান তিনি। কিন্তু কৌশলগত কারণে সে সব সংবাদমাধ্যমকে জানানো সম্ভব নয় বলে দাবি মুফতির।

Advertisement

তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে নানা কিছু শোনা গিয়েছে। যেমন ফারাবি নানা ব্লগে লেখালেখি করত, পরে নিজের নামে ‘ফারাবি ব্লগ’ও চালু করেছিল। র্যাবের দাবি, ব্লগে লেখালেখির সূত্রেই অভিজিতের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তার। এক সময় দু’জনের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়। যার জেরে বছর দুই আগে ফারাবিকে ব্লক করে দেন অভিজিৎ। কিন্তু তার পরেও থেমে থাকেনি সে। নানা মাধ্যমে অভিজিৎকে হুমকি পাঠাত বলে অভিযোগ জানান নিহত লেখকের আত্মীয়রা। আরও জানা গিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ‘ফলোয়ারদের’কে অভিজিৎ ও তাঁর পরিবারের সম্পর্কে নানা তথ্য দিত ফারাবি। এমনকী অভিজিৎকে খুনের উস্কানিও দিত। এক সময় ফেসবুকে সে স্বীকারও করে, আমেরিকায় বসবাসকারী তার সঙ্গীরা অভিজিতের উপর প্রতিনিয়ত নজর রাখছে। পরে প্রকাশ্যে হুমকি পোস্ট, “অভিজিৎ রায় যখন এ দেশে ফিরবে, তখন তাকে খুন করা হবে।”

হলও তাই। একুশে বইমেলা থেকে বেরনোর পথে খুন হলেন মৌলবাদ-বিরোধী লেখক অভিজিৎ। ফারাবির দেওয়া হুমকি মিলে গেল। গোটাটাই যে শুধু সমাপতন নয়, তা প্রায় স্পষ্ট। ধৃতের স্বীকারোক্তি এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন