ইজরায়েলি হামলায় নিশ্চিহ্ন বাড়ি। আপাতত বন্ধ দোকানে মিলেছে ঠাঁই। গাজায় রয়টার্সের তোলা ছবি।
মারণ হামলা অব্যাহত। গাজায় আজও সকাল থেকে লাগাতার বোমাবর্ষণ হয়। প্যালেস্তাইনের আপৎকালীন পরিষেবা দফতর সূত্রের খবর, ১৩০০ ছাড়িয়েছে নিহতের সংখ্যা।
ইজরায়েল আজ আরও একবার জানিয়ে দিয়েছে, এখনই রণে ভঙ্গ দিতে তারা রাজি নয়। বরং প্যালেস্তাইনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাসের গোপন সুড়ঙ্গ নির্মূল না করা পর্যন্ত পিছু হটবে না সেনা। আজও হামাসের দু’টি গোপন সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে টুইটারে জানিয়েছে ইজরায়েলি সেনা।
গত কাল ঈদের দিন কয়েকশো মানুষের উপর বোমাবর্ষণের ঘটনায় বিশ্ব জুড়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইজরায়েলি প্রশাসনকে। আজ খানিকটা মুখরক্ষার চেষ্টায় টুইটারে আত্মপক্ষ সমর্থনে নেমেছে ‘ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স’ (আইডিএফ)। তারা যে মোটেও মানবতা বিরোধী নয়, তা জাহির করতে ভিডিও এবং ছবি আপলোড করছে। দেখানো হচ্ছে, গাজার হাসপাতাল-ধর্মস্থানের আড়ালে কী ভাবে লুকিয়ে রয়েছে হামাস জঙ্গিরা। দেশের মানবিক মুখ তুলে ধরতে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, কী ভাবে ইজরায়েলি সেনারা রক্তাক্ত প্যালেস্তাইনিদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে মানবজাতির পাশে দাঁড়ানোই নাকি তাদের লক্ষ্য। তাই স্রেফ মানবিকতার খাতিরে দিনে চার ঘণ্টা (দুপুর ৩টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত) যুদ্ধ শিথিল করার কথা আজ জানিয়েছে তারা। সংঘর্ষ শিথিল হওয়ার খবরে খাবার মজুত করতে বাজারে ভিড় জমান স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে আচমকাই ফের যুদ্ধ শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় আইডিএফ। অতর্কিত বিমান হামলা হয় গাজা সংলগ্ন শাজাইয়ার একটি বাজারে। সেখানে অন্ততপক্ষে ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ইজরায়েল মানবিক মুখ দেখালেও গাজার পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি আজ। সকাল থেকে হামলায় ৫০ জন প্যালেস্তাইনির মৃত্যু হয়েছে। গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র ভেঙে পড়ায় এখনও অন্ধকারে গোটা শহর। বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ হওয়ার মুখে হাসপাতালের বিভিন্ন পরিষেবা। বন্ধ হতে বসেছে অস্ত্রোপচার। মধ্য গাজার শিফা হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন কয়েকশো মানুষ। ব্রিটেনের একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবশ্য দাবি করেছে, গত কাল ইচ্ছা করেই গাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালানো হয়। জঙ্গিবাহিনীর কার্যকলাপ রুখতেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে কিছুটা হলেও পিছু হটতে বাধ্য হবে হামাস।
আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ন্ত্রাণাধীন দক্ষিণ গাজার জেবালিয়ার একটি স্কুল তথা ত্রাণশিবিরে হামলা করে আইডিএফ। শিশু-সহ অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। তার পর শুরু হয় ভয়ানক বোমাবর্ষণও। প্যালেস্তাইনের আপৎকালীন দফতরের মুখপাত্র আশরাফ আল কাদরা জানিয়েছেন, এলাকার একটি বাড়িও অক্ষত নেই। নিহতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নিয়ে তিনি আশঙ্কিত। গত সপ্তাহে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ন্ত্রাণাধীন একটি স্কুলে হামলায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়। আজ জেবালিয়ার স্কুলে হামলার নিন্দা করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। জানানো হয়েছে, আজও আন্তর্জাতিক নিয়ম ভেঙে রাষ্ট্রপুঞ্জের দফতরে হামলা চলেছে। ইজরায়েলের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ইউনিসেফ-এর মতো সংগঠন। প্রত্যুত্তরে সুর চড়িয়েছে ইজরায়েলও। আইডিএফ-এর দাবি, গাজার স্কুল এবং ত্রাণ শিবিরগুলি আসলে হামাসের ডেরায় পরিণত হয়েছে।
গাজা-পরিস্থিতির নিন্দা করে ইজরায়েলকে খোলা চিঠি দিয়েছেন স্পেনের কয়েক জন চিত্র তারকা। পেনেলোপে ক্রুজ, পেড্রো আমোদোভার এবং জেভিয়ার বার্ডেমের নামে ওই চিঠিটি প্রকাশ করেছে স্পেনের একটি দৈনিক।