ইরাকে গণহত্যা, ৩০০ জনকে কবর দিল জঙ্গিরা

জঙ্গি সাম্রাজ্য কায়েমের বিরোধিতা করার ‘অপরাধে’ ইরাকে ফের গণহত্যা চালাল আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া)। ইরাকের প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজধানী বাগদাদ সংলগ্ন আনবার প্রদেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩০০ জন মানুষকে হত্যা করে রাতারাতি গণকবর দিয়ে দিয়েছে জঙ্গিরা। আজ সকালে রামাদি এলাকায় একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে ইরাকের সেনাবাহিনী। ইরাকের সুন্নি আলবু নিমার সম্প্রদায়ের ১৫০ জন মানুষের দেহ মিলেছে ওই কবরে। রামাদির পার্শ্ববর্তী হিত প্রদেশের আরও একটি গণকবর থেকে আরও ৪৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বাগদাদ শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৪
Share:

জঙ্গি সাম্রাজ্য কায়েমের বিরোধিতা করার ‘অপরাধে’ ইরাকে ফের গণহত্যা চালাল আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া)।

Advertisement

ইরাকের প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজধানী বাগদাদ সংলগ্ন আনবার প্রদেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩০০ জন মানুষকে হত্যা করে রাতারাতি গণকবর দিয়ে দিয়েছে জঙ্গিরা। আজ সকালে রামাদি এলাকায় একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে ইরাকের সেনাবাহিনী। ইরাকের সুন্নি আলবু নিমার সম্প্রদায়ের ১৫০ জন মানুষের দেহ মিলেছে ওই কবরে। রামাদির পার্শ্ববর্তী হিত প্রদেশের আরও একটি গণকবর থেকে আরও ৪৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতদেহের স্তূপে ঢাকা পড়ে গিয়েছে এলাকার রাস্তাঘাট। সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, ওই দু’টি গণকবর গত কাল রাতেই খোঁড়া হয়েছে। নিহতদের প্রত্যেককে খুব কাছ থেকে গুলি করে মেরেছে জঙ্গিরা। সেনার এক মুখপাত্রের কথায়, “মৃতদের অনেকের গায়ে এখনও তাজা রক্ত লেগে আছে। গত কাল রাতেই এদের সকলকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে।” ৫ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ জঙ্গিরা রেয়াত করেনি কাউকে। তবে হতদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ৫৫-র মধ্যে।

সিরিয়া-তুরস্কের সীমান্তবর্তী কোবানের দখল নিয়ে জঙ্গিদের সম্মানরক্ষার লড়াইয়ে কুর্দ বাহিনীকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে আইএস-কে। স্বভাবতই, জঙ্গিদের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই ইরাক ছেড়ে সিরিয়ার যুদ্ধে নেমেছে। তুলনামূলক ভাবে সপ্তাহখানেক বড় ধরনের হামলা হয়নি ইরাকের কোথাও। জঙ্গিদের মোকাবিলায় মার্কিন যুদ্ধবিমানও মনোনিবেশ করেছে কোবান-কেন্দ্রে। তবে ইতিমধ্যেই আনবার প্রদেশের প্রশাসন একাধিক বার আমেরিকার কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছে। তারা দাবি করেছিল, চুপিসাড়ে বাগদাদ দখলের ছক কষছে আইএস। আর সেই জন্যই আনবার প্রদেশের প্রায় পুরোটাই দখল করে ফেলেছে তারা। এক সময় বাগদাদের বিমানবন্দরের কাছাকাছি জঙ্গিদের পৌঁছে যাওয়ার খবরও মিলেছিল। বিদেশি সাহায্যে আস্থা হারিয়ে সেই সময়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জোট বাঁধেন আনবারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। আইএস জঙ্গিদের নিরস্ত করতে তারা ইরাকের সেনা, কুর্দ বাহিনী ও মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে শুরু করেন। মানুষের বাধায় ইরাকে পিছুও হটেছিল আইএস। সেই প্রতিরোধের প্রত্যুত্তর দিতেই গত কাল রাতে সংখ্যালঘু গ্রামে ঢুকে তাণ্ডব চালায় জঙ্গিরা।

Advertisement

ইরাকের সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, আজ সকালে রাস্তায় চাপ চাপ রক্ত দেখেই অশনি সঙ্কেত মিলেছিল। কিন্তু রাতারাতি শ’তিনেক মানুষকে খুন করে গণকবর দিয়ে দেওয়ার ঘটনায় স্তম্ভিত প্রশাসন। সেনা সূত্রে খবর, গত কাল সকালেই হিত এলাকায় রীতিমতো মাইক নিয়ে প্রচার চালিয়েছিল জঙ্গিরা। ‘ধর্মদ্রোহ’ করলে গ্রামের একটাও মানুষকে রেয়াত করা হবে না বলে শাসিয়েও গিয়েছিল। সেই সময় প্রকাশ্য রাস্তায় ৩০ জন সংখ্যালঘু মুসলিম গোষ্ঠীর নেতাকে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা।

আনবার প্রদেশের আঞ্চলিক কাউন্সিল চেয়ারম্যান সাবা কারাওত আজ বলেন, “আনবারের উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ সরকারকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল। তাই জঙ্গিরা তাদের হত্যা করেছে। কিছু মানুষকে কবর দেওয়া হয়েছে, কিছু মানুষকে মেরে ইউফ্রেটিস নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।” সাবা এই ঘটনাকে মানবতার সঙ্কট বলে ব্যাখ্যা করে আন্তর্জাতিক সমর্থনের আর্জি জানান।

জঙ্গিদের হাত থেকে গ্রামের যে হাতে গোনা কয়েক জন রক্ষা পেয়েছেন, গত কাল রাতের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বললেন, “জঙ্গিরা গ্রাম ছাড়ার আগে শাসিয়ে গিয়েছে। বলেছে, এরা সকলে আইএসআইএস-এর বিরোধিতা করেছিল। তোমরা ভাল করে মৃতদেহগুলো দেখ। মনে রেখো, যে আমাদের বিরোধিতা করবে, তার এই দশাই হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন