উত্তাল সাগর, থমকে গেল উদ্ধারকাজ

ডুবুরিরা তৈরি। বাকি প্রস্তুতিও সারা। কিন্তু এয়ার এশিয়ার উড়ান কিউ জেড ৮৫০১-এর উদ্ধারকাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আবহাওয়া। ইন্দোনেশিয়ার প্রশাসন জানিয়েছে, তীব্র ঝোড়ো হাওয়া আর ২ মিটার উঁচু ঢেউয়ের তাণ্ডবে জাভা সাগর এখন সব অর্থেই বিপদসঙ্কুল। ফলে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব নয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

সুরাবায়া শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৬
Share:

ডুবুরিরা তৈরি। বাকি প্রস্তুতিও সারা। কিন্তু এয়ার এশিয়ার উড়ান কিউ জেড ৮৫০১-এর উদ্ধারকাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আবহাওয়া। ইন্দোনেশিয়ার প্রশাসন জানিয়েছে, তীব্র ঝোড়ো হাওয়া আর ২ মিটার উঁচু ঢেউয়ের তাণ্ডবে জাভা সাগর এখন সব অর্থেই বিপদসঙ্কুল। ফলে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব নয়। গত কাল কোনও মতে বিমানের সাত যাত্রীর দেহ উদ্ধার করা গিয়েছিল। কিন্তু বাকিগুলির হদিস কবে মিলবে তা নিয়ে আজও ধন্দে উদ্ধারকারীরা। অন্য দিকে, ব্ল্যাক বক্সের খোঁজ না মেলায় জটিলতা আরও বেড়েছে। এক কর্তার আশঙ্কা, আগামী সপ্তাহের আগে তার সন্ধান মেলার সম্ভাবনা কম।

Advertisement

জাভা সাগরের যে এলাকায় বিমানের ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে বলে উদ্ধারকারীদের অনুমান, তার গভীরতা মাত্র ৫০ মিটার। সেখানে খোঁজ চালাতে আধুনিক যন্ত্রপাতিরও দরকার নেই বলে মনে করেন ইন্দোনেশিয়ার পরিবহণ সংক্রান্ত নিরাপত্তা কমিটির এক উচ্চপদস্থ কর্তা। তবে এ ক্ষেত্রেও দু’টি সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, ওই এলাকাতেই যে বিমানটি পড়েছে, তার কোনও অকাট্য প্রমাণ নেই। উদ্ধারকাজের প্রথম দিকে এক পাইলট ওই অংশে কোনও কিছুর বিরাট ছায়া দেখেছিলেন। যা থেকে ধরে নেওয়া হয়, ওখানেই রয়েছে কিউ জেড-৮৫০১। দ্বিতীয়ত, খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেই জায়গায় তল্লাশি চালাতে পারছেন না ডুবুরিরা। হাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আগামী সপ্তাহে সমুদ্র শান্ত হতে পারে। তত দিন পর্যন্ত উদ্ধারকাজ বন্ধ থাকবে বলেই আশঙ্কা নিখোঁজ যাত্রীদের পরিজনদের। এতেই শেষ নয়। আরও জানা গিয়েছে, ভেঙে পড়া বিমানের ব্ল্যাক বক্স থেকে সাধারণত যেমন শব্দসঙ্কেত বেরিয়ে থাকে, তেমন কোনও কিছুর খোঁজই ওই এলাকা থেকে মেলেনি। এখন ব্ল্যাক বক্স হাতে না এলে বিমানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ মেলা থেকে শুরু করে দুর্ঘটনার কারণ বুঝে ওঠা, সবই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সুতরাং আগে সেটির খোঁজ মেলা দরকার। সে জন্য অন্তত পাঁচটি যন্ত্র ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে সব কিছুর জন্যই সমুদ্র শান্ত হওয়ার অপেক্ষা করতে হবে।

কিন্তু মন মানছে না নিখোঁজ যাত্রীদের পরিজনদের। আশা-আশঙ্কার দোলাচলে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। সকলেই এ দ্বন্দ্বের দ্রুত শেষ দেখতে চান। কিন্তু সে শেষ যে কোনও অংশে কম যন্ত্রণার নয়, তা বিলক্ষণ অনুভব করছেন হায়াতি লুতফিয়া হামিদের আত্মীয়রা। গত কাল যে সাত জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে, তার প্রথমটি ছিল এই তরুণীরই। বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার মফঃস্বল শহর ডেসা সাওত্রাত্রাপের কাছেই এক গ্রামে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। হামিদের দেহ যখন কফিনবন্দি হয়ে মাটির গভীরে আশ্রয় নেওয়ার অপেক্ষায়, তখন হঠাৎই সেটি জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন এক আত্মীয়। তরুণীর কফিনে ফুলের ঢল, প্রার্থনার শব্দও ভারী ঠেকে কানে। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। তবু কেন? সন্ধের আঁধারে উত্তর হাতড়ান পরিজনেরা। জবাব মেলে না। শুধু প্রশ্ন বাড়তে থাকে। হামিদের তো খোঁজ মিলল। কিন্তু তাঁর পরিবারের বাকি তিন জনের কী হয়েছে এখনও জানা নেই। শুধু জানা, তাঁরাও হামিদের সঙ্গেই অভিশপ্ত বিমানে চড়েছিলেন।

Advertisement

বিমানের নাম শুনলেই কেঁপে উঠছেন খয়রুন্নিসা হায়দার ফৌজির মা-বাবা। গত কাল মেয়ের দেহ পেয়েছেন। কিউ জেড ৮৫০১-এর দ্বিতীয় উদ্ধার এই বিমানসেবিকা। মাত্র সপ্তাহদু’য়েক আগে একটা ছবি দিয়েছিলেন ইনস্টাগ্রামে। ন্যাপকিনে লেখা ‘৩৮০০০ ফুট উচ্চতা থেকেও তোমাকে ভালবাসি।’ পিছনে বিমানের জানলা থেকে নীল আকাশ দেখা যাচ্ছে। প্রেমিক ডিভোর জন্য কোনও বিমানেই ছবিটি তুলেছিলেন তিনি। সে সব দেখেন বাবা-মা, মুষরে পড়েন। চোখে মোছেন উদ্ধারকর্মীদের কেউ কেউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন