ক্রাইমিয়া সঙ্কটের ছায়া নাসায়, মহাকাশ কেন্দ্রেও

কূটনীতিক তিক্ততা চরমে। ক্রাইমিয়া নিয়ে দু’দেশের মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ। তবে মহাকাশ গবেষণায় রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারছে না আমেরিকা। বরং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তা হলে কী হবে, সে শঙ্কায় ভুগছে বারাক ওবামার দেশ। ২০১১ সালে আমেরিকার নিজস্ব মহাকাশযান অবসর নিয়ে ফেলেছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৪ ০২:৩৫
Share:

কূটনীতিক তিক্ততা চরমে। ক্রাইমিয়া নিয়ে দু’দেশের মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ। তবে মহাকাশ গবেষণায় রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারছে না আমেরিকা। বরং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তা হলে কী হবে, সে শঙ্কায় ভুগছে বারাক ওবামার দেশ।

Advertisement

২০১১ সালে আমেরিকার নিজস্ব মহাকাশযান অবসর নিয়ে ফেলেছে। এ দিকে, ছ’মাস অন্তর এক দল নভশ্চরকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে (আইএসএস)-এ পাঠায় নাসা। আগের দলটি তখন পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই মুহূর্তে আইএসএস-এ নভশ্চরদের পাঠানোর জন্য আমেরিকার হাতে কোনও যান নেই। পুরোপুরি নির্ভরশীল রাশিয়ার উপর। সে জন্য বেশ মোটা ডলারও খসাতে হয় আমেরিকাকে। আসন প্রতি রাশিয়াকে দিতে হয় প্রায় ৭ কোটি ডলার। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মুখপাত্রই জানালেন সে কথা। তিনি আরও বললেন, “২০১৭ সালের আগে নতুন মহাকাশযান তৈরির কাজ শেষ হবে না।” সুতরাং আগামী তিন বছরে সম্পর্ক ভাঙলে নাসার গবেষণা অথৈ জলে পড়বে।

নাসার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জন লগসডন বললেন, “রাশিয়া চুক্তি ভাঙতেই পারে। তবে এ রকম কিছু হওয়ার আশঙ্কা ২০-২৫ শতাংশ।” তাঁর কথায়, “সে যদি হয় তো গবেষণা ক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটবে। তবে দু’দেশই একে অন্যের মুখাপেক্ষী। তাই কূটনীতিক সমস্যার সঙ্গে গবেষণার ক্ষেত্রটাকে মিশিয়ে না ফেলাই ভাল।”

Advertisement

শুধু মহাকাশযানই নয়, নাসার রকেট ‘অ্যাটলাস ৫’-এর ইঞ্জিনও রাশিয়ার তৈরি। আমেরিকা এই রকেটে চাপিয়েই তাদের কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠায়। সুতরাং এ ক্ষেত্রেও পুতিন-সরকার যদি মুখ ফেরায়, বড়সড় ধাক্কা খাবে আমেরিকা। এ সপ্তাহেই পেন্টাগন মার্কিন সেনাকে ‘অ্যাটলাস ৫’-এর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছিল। তারা জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত আছে। আগামী দু’বছর অসুবিধা হবে না।

ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর কক্ষপথে পাক খাচ্ছে বসবাসযোগ্য কৃত্রিম উপগ্রহ আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র। দু’দেশের নভশ্চররাই রয়েছেন সেখানে। তাঁদের অবস্থা কী?

মহাকাশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-আমেরিকার কূটনীতিক এবং অর্থনৈতিক চাপানউতোর আইএসএস-এর বাসিন্দাদের সম্পর্কে চিড় ধরাবে না। অবসরপ্রাপ্ত নভশ্চর লেরয় শিয়াও ২০০৪-০৫ একটা বছর আইএসএস-এ কাটিয়েছেন। বললেন, “আমরা ওখানে বহু বিষয় নিয়ে চর্চা করতাম। রাজনীতি নিয়েও গল্প হত। ক্রাইমিয়া নিয়ে যা চলছে, তা নিয়েও নিশ্চয় বর্তমান বাসিন্দাদের মধ্যে আলোচনা হয়। তবে অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে।” মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে ছ’মাস কাটিয়ে মার্চের গোড়াতেই পৃথিবীতে ফিরেছেন মাইক হপকিনস। তাঁর কথায়, “রুশ নভশ্চররা আমার খুব কাছের বন্ধু। একে অপরের সঙ্গে বোঝাপড়াও খুব ভাল ছিল।” তবে গবেষকদের বক্তব্য, বন্ধুত্বের বাইরেও রাশিয়া-আমেরিকা দু’দেশের নেতৃত্বে ১৫টি দেশের যৌথ উদ্যোগ চলে ১ লক্ষ কোটি ডলার ব্যয়ে তৈরি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র। ঝগড়া বাঁধা অত সহজ নয়। নাসাও বলছে, “সুদূর ভবিষ্যতেও এমন কোনও আশঙ্কা নেই। বহু উত্থান-পতনে আমরা এক সঙ্গে কাজ করেছি। নিশ্চিত এ বারেও তাই হবে।”

আর এক বিশেষজ্ঞ হাওয়ার্ড ম্যাককার্ডি জানালেন, গবেষণা কেন্দ্রে দু’দেশের থাকার ঘর আলাদা আলাদা। তাতে শৌচাগারও পৃথক। এমনকী শীতাতপ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন। তাঁর কথায়, “এটা অনেকটা বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর এক ছাদের নীচে থাকা। দু’জনেই বাড়ির মালিক। দু’জনেই সংসার চালান। ঝামেলা বাধলে পরিস্থিতিটা খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না।”

একই কথা লেরয় শিয়াওয়েরও। বললেন, “আমার ধারণা এ রকম কিছু হবে না...। তবে যদি আমেরিকা-রাশিয়া সম্মুখ সমরে যায়, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে অবশ্যই তার প্রভাব পড়বে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন