কর্মব্যস্ত সকাল। ঘড়ির কাঁটা তখনও আটটা ছোঁয়নি। গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানাটিতে হাজির প্রায় শ’তিনেক কর্মী। উঁচু গলায় কথাবার্তা চালাচ্ছেন নিজেদের মধ্যে। যেমনটা রোজ হয়। হঠাৎই সমস্ত আওয়াজ ছাপিয়ে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝনঝনিয়ে ভেঙে পড়ল জানলার কাচ। গুঁড়িয়ে গেল কারখানার বড় বড় যন্ত্রপাতি। কারখানার একটি ঘর থেকে আগুনের শিখা বেরিয়ে এসে মুহূর্তের মধ্যে গ্রাস করল সাদা বাড়িটিকে। মৃত্যু হল মোট ৬৯ জনের।
শনিবার সকালে চিনের জিয়াংসু প্রদেশের কুনশান শহরের মোটরগাড়ির চাকা তৈরির একটি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলেই পুড়ে মারা যান ৪০ জন। বাকি ২৯ জনের মৃত্যু হয় হাসপাতালে। আহতের সংখ্যা প্রায় দু’শো। গাড়ির চাকা তৈরির পর ‘ফিনিশিং টাচ’ দেওয়া হয় এই কারখানাটিতে। এদের ক্রেতা তালিকায় রয়েছে জেনারেল মোটরসের মতো মার্কিন গাড়ি নির্মাণ সংস্থা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারখানাটির পাঁচ অধিকর্তাকে আটক করা হয়েছে। এই দুর্ঘটনা ফের প্রকাশ্যে আনল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির বেহাল কর্মী সুরক্ষা ব্যবস্থা।
অনুমান, কারখানার ধুলো ভরা একটি ঘরে কোনও ভাবে আগুনের ফুলকি জ্বলে ওঠাতেই বিপত্তি। বিস্ফোরণের তীব্রতায় কারখানার দেওয়ালে দুটি বিরাট গর্ত তৈরি হয়েছে। লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে গোটা কারখানাটিই। এমনকী ৫০০ মিটার দুরে অবস্থিত একটি বাড়ির জানলাও ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলের কাছেই কাজ করেন ঝোউ সু। ২৬ বছরের যুবকের বর্ণনায়, ‘সকাল সাতটা নাগাদ হঠাৎ বিস্ফোরণের আওয়াজ। ছুটে গিয়ে দেখি এই কাণ্ড। প্রথমে অ্যাম্বুল্যান্স আসে। এরপর খবর পেয়ে জড়ো হয় কর্মীদের পরিবারের লোক।’
আহতদের অনেকেরই শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গিয়েছে। কাউকে অ্যাম্বুল্যান্সে, কাউকে বা ট্রাক এমনকী বাসে করেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালে। হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমার ২০ বছরের কর্মজীবনে এত জন পুড়ে যাওয়া মানুষের চিকিৎসা করিনি। অনেকের দেহের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে।’’ ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই বিস্ফোরণ স্থলে গিয়েছেন চিনা কমিউনিস্ট পার্টির স্থানীয় কর্মকর্তা ওয়াং ইয়ং। বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন চিনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি খ্যচিয়াং।
নিগ্রহের কথা মানলেন ওবামা
সংবাদ সংস্থা • ওয়াশিংটন
টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর আটক সন্দেহভাজনদের উপর অত্যাচার কখনও কখনও সীমা ছাড়িয়েছিল বলে মানলেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা (সিআইএ)-এর জেরা করার নানা পদ্ধতি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করবে সেনেট। তার আগে শনিবার বারাক ওবামা বলেন, “৯/১১-এর পর আমরা এমন অনেক কিছু করেছি যা ঠিক ছিল। কিন্তু কিছু ভুলও হয়েছে। কয়েক জনের উপর অত্যাচার করা হয়ে গিয়েছে।” জিজ্ঞাসাবাদের নামে মার্কিন গোয়েন্দাদের নির্যাতন সীমা ছাড়াচ্ছে, এমন অভিযোগ আগেও একাধিক বার উঠেছে। আজ ওবামার কথায় সিলমোহর পড়ল তাতেই। তবে কেন এমনটা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, “তখন টুইন টাওয়ার, পেন্টাগন থেকে একের পর এক হামলার খবর আসছে। জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। সে সময় কী ভীষণ চাপের মুখে কাজ করতে হয়েছে গোয়েন্দাদের! তাঁদের দেশপ্রেম নিয়ে কোনও সংশয় নেই।”