পেটের দায়ে ‘লাইন’, রোজগারও সেই লাইনেই

ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে আকাশটা। কিন্তু তার আগেই তড়িঘড়ি উঠে পড়েছে লুইস। সূর্য ওঠার আগেই তাঁকে লাইনে দাঁড়াতে হবে যে। বেশি দেরি করলে আবার লাইন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। ভেনেজুয়েলার নতুন পেশা ‘লাইন দেওয়া’। ভোর না হতেই আজকাল সুপার মার্কেটের সামনে লোকের লম্বা সারি। সব বয়সি-ই হাজির সেখানে। তার পর বেলা বাড়তেই নানা দরে বিক্রি হচ্ছে সেই লাইন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কারাকাস শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৩
Share:

ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে আকাশটা। কিন্তু তার আগেই তড়িঘড়ি উঠে পড়েছে লুইস। সূর্য ওঠার আগেই তাঁকে লাইনে দাঁড়াতে হবে যে। বেশি দেরি করলে আবার লাইন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।

Advertisement

ভেনেজুয়েলার নতুন পেশা ‘লাইন দেওয়া’। ভোর না হতেই আজকাল সুপার মার্কেটের সামনে লোকের লম্বা সারি। সব বয়সি-ই হাজির সেখানে। তার পর বেলা বাড়তেই নানা দরে বিক্রি হচ্ছে সেই লাইন।

ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির অবস্থা বহু দিন ধরেই ধুঁকছে। খাবার-দাবার বা অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যাতে কম মূল্যে পাওয়া যায় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। আর সেই সব বস্তুই এখন মিলছে সুপার মার্কেট থেকে। যেমন, মুরগির মাংস পাওয়া যাচ্ছে বেসরকারি দোকানের চেয়ে প্রায় চার গুণ কম দামে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ভিড় জমছে দোকানের সামনে।

Advertisement

গত দু’বছর ধরেই এই অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ভেনেজুয়েলা। কিন্তু পরিস্থিতিটা বড়দিন এবং নতুন বছরের পরে আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পাছে দোকানে মালপত্র কম পড়ে, সেই ভয়ে এখন সকাল সকাল লাইন দিচ্ছেন সবাই। আর এই সুযোগে নতুন একটা পেশার জন্ম হচ্ছে ভেনেজুয়েলায়।

যেমন, ২৩ বছরের কিশোর লুইস। গত বছর পর্যন্ত বেকার ছিলেন তিনি। এখন রীতিমতো রোজগেরে বাবু! ৬০০ বোলিভার বা ৯৫ পাউন্ড রোজগার করেন লাইনে দাঁড়িয়ে। আর দিনে প্রায় দুই থেকে তিন বার তিনি লাইনে দাঁড়ান।

“কাজটা একঘেয়ে। কিন্তু জীবিকা হিসেবে মন্দ নয়।”, স্বীকার করলেন লুইস। ঘুমচোখেই লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তার পর ৮টা নাগাদ আসবেন তাঁর খদ্দের। যিনি অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছেন লুইসকে।

তবে এই পেশা যে দেশকে আদৌ নতুন পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে না তা এক বাক্যে মেনে নিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরোধীরা। তাঁদের মতে, আসলে এই ‘লাইনে দাঁড়ানো’ থেকে স্পষ্ট যে দেশের অর্থনীতির অবস্থা এখন কতটা শোচনীয়। তবে উল্টো সুর কার্লোস অসরিওর গলায়। তিনি বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, “খাবার যদি না থাকত তা হলে লাইনও দেখা যেত না!” তাই নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে অর্থনীতি যে ভেঙে পড়েনি, তা বোঝাতেই মরিয়া সরকার। আসলে প্রশাসনের মতে, অতিরিক্ত আতঙ্কিত হওয়ার ফলেই দোকানের সামনে এমন হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে।

তবে, সরকার আতঙ্ক ছড়াতে বারবার বারণ করলেও মানুষ কিন্তু মোটেই কর্ণপাত করছেন না। তাই সাত থেকে সত্তর লাইনে হাজির সবাই। আবার কেউ কেউ সদ্যোজাতদের নিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন সকাল সকাল। যদি বাচ্চার অজুহাতে কয়েকশো মানুষকে টপকে আগে লাইনে দাঁড়ানো যায়। অন্য দিকে, পিছিয়ে নেই বয়স্করাও। ষাট বছরের আলসিরা গার্সিয়া। ভোর চারটে থেকে তিনি অপেক্ষমান। অবশেষে ১১টায় সুযোগ এল তাঁর। তবে চাহিদা মতো সব কিছু না পেলেও মাংস, চাল নিয়েই আপাতত তিনি খুশি।

টিভি চ্যানেলে যতই প্রচার চালাক প্রশাসন, আতঙ্ক মোটেই কমছে সাধারণ মানুষের। সরকারি সূত্রের খবর, গত ক’দিনে সুপারমার্কেট থেকে বিক্রির হার বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। তাই দেশের অর্থনীতি ‘সর্বনাশের’ পথে গেলেও লুইসদের এখন পৌষ মাস!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন