ফের যেন ঠান্ডা যুদ্ধের আবহ।
রাশিয়া যে ভাবে ক্রিমিয়ার দখল নিয়েছে, তাকে ‘অবিশ্বাস্য আগ্রাসন’ বলে বর্ণনা করছে আমেরিকা। মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি রবিবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাশিয়া যদি অবিলম্বে ইউক্রেন থেকে সরে না আসে, তা হলে তাকে জি-৮ সদস্যপদ খোয়াতে হতে পারে। জারি হতে পারে অর্থনৈতিক অবরোধও। রাশিয়া আবার ইউক্রেনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানকে পশ্চিমী শক্তির সম্মিলিত আগ্রাসন বলে প্রচার শুরু করেছে। এ দিন রুশ জাতীয় সংবাদমাধ্যমে সে রকমই দাবি করা হয়েছে।
গত কাল ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর জন্য পার্লামেন্টের অনুমতি পেয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার পর থেকেই আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভারসাম্য টালমাটাল। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী আরসেনি ইয়াতসেনিউক স্পষ্ট বলে দেন, “রাশিয়ার সশস্ত্র পদক্ষেপ যুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত। এর জেরেই ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যাবতীয় সম্পর্ক শেষ হবে।” পার্লামেন্টের অনুমতি পাওয়ার আগেই অবশ্য ইউক্রেনের অভ্যন্তরে স্বশাসিত ক্রিমিয়ার দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। সেখানে তাদের বৃহত্তম নৌঘাঁটি রয়েছে। ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী সরকার এখন আশঙ্কা করছে, যে কোনও মুহূর্তে ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডেও রুশ বাহিনী ঢুকে পড়তে পারে। যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি শুরু করে দিতে রবিবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছে ইউক্রেন।
রাশিয়া-বিরোধী অন্তর্বর্তী সরকারের রক্তচাপ আরও বাড়াচ্ছে পূর্ব ইউক্রেন। শনিবারই রুশ কর্তৃত্বের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান সে অংশের বেশ কিছু বাসিন্দা। কিছু সরকারি ভবনে রুশ পতাকা লাগিয়ে দেন। সব চেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয় খারকিভে। রাশিয়াপন্থীদের বিক্ষোভের জেরে সেখানে আহত হন বহু মানুষ। এ সব দেখার পর একাংশের আশঙ্কা, ইউক্রেনে রুশ সেনা ঢুকে গেলে তা পূর্ব দিকের বাসিন্দাদের সমর্থন পাবে।
ইউক্রেন সরকার অবশ্য সব রকম সতর্কতাই নিচ্ছে। সেনাকে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি এ দিন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ন্যাটোর কাছেও সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী আন্দ্রে দেশিৎসিয়া। তার সঙ্গে আলাদা করে ব্রিটেন, আমেরিকার কাছেও সাহায্যের আবেদন করেছেন তিনি। রবিবারই এ বিষয়ে আলোচনার জন্য ব্রাসেলসে বৈঠক করেন ন্যাটো রাষ্ট্রদূতরা। পরিস্থিতি নজরে রাখতে ইউক্রেনে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াশিংটন। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানার অভিযোগে ইতিমধ্যেই রাশিয়ার সোচি শহরে জি-এইট শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছে ওয়াশিংটন এবং তার সহযোগীরা। তার উপরে কেরির কড়া বার্তা শুনে ফের এক বার শীতল যুদ্ধের অতীতই ফিরে আসতে চলেছে বলে আশঙ্কা অনেকের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় রাশিয়ার হানার পর এ রকম সঙ্কট আর তৈরি হয়নি।”