পোপের সফরের আগে সাফ ফুটপাথ

দেশের দারিদ্র নিয়ে ঢাক পেটানো একেবারেই পছন্দ না প্রশাসনের। বিশেষত পোপের সামনে তো ও সব নেহাতই ‘দৃশ্যদূষণ’। তাই রাতারাতি সাফ ফুটপাথ। ফিলিপিন্স সফর সেরে পোপ ফিরে গিয়েছেন সোমবার। এবং তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফুটপাথের লোকেরা সেই ফুটপাথেই।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ম্যানিলা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৬
Share:

দেশের দারিদ্র নিয়ে ঢাক পেটানো একেবারেই পছন্দ না প্রশাসনের। বিশেষত পোপের সামনে তো ও সব নেহাতই ‘দৃশ্যদূষণ’। তাই রাতারাতি সাফ ফুটপাথ। ফিলিপিন্স সফর সেরে পোপ ফিরে গিয়েছেন সোমবার। এবং তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফুটপাথের লোকেরা সেই ফুটপাথেই।

Advertisement

এ বারের সফরেও পোপের বক্তৃতায় উঠে এসেছে গরিবদের প্রতি তাঁর সমবেদনার কথা। কিন্তু ওই ক’দিন শহরের কয়েকশো দরিদ্র কোথায়, কী অবস্থায় ছিলেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেল।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের এক অংশের মত, পোপের সফরের আগেই দেশের শতাধিক গৃহহীনের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছিল। ফিলিপিন্স সরকারের উদ্যোগেই ঠাঁই মিলেছিল বিলাসবহুল এক রিসর্টে। কিন্তু কোন অবস্থায় সেখানে তাঁদের রাখা হয়েছিল, হদিস মেলেনি। গত রবিবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও পোপের সভায় যোগ দিতে আসেন কয়েক লক্ষ মানুষ। আর তার কয়েক দিনের মধ্যেই আজ সরকারের এই স্বীকারোক্তিতে কার্যত তাজ্জব গোটা দুনিয়া। প্রশাসনের দাবি, সেখানে নাকি রাজার হালেই রাখা হয়েছিল এই ৫০০ গৃহহীনকে। ওই রিসর্টের ওয়েবসাইট থেকে জানা গিয়েছে, সেখানে এক রাত থাকার খরচ প্রায় ৫৪৪ ডলার। তবে এখনও পুরোপুরি তা মেটানো হয়নি বলেই সরকারের তরফে জানানো হয়েছে।

Advertisement

সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে তবু প্রশ্ন উঠছে, পোপের চোখ থেকে দারিদ্র আড়াল করতেই কি সরকারের এই ‘দরদী’ ভূমিকা নেওয়া? পার্লামেন্টের সদস্যরা আজ এই ঘটনার জবাব চাইলে মুখ খোলেন দেশের সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব কোরাজন সোলিমান। ফলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

টেরি রিডন নামে প্রতিনিধিসভার এক সদস্য বলেন, “পোপ ফিলিপিন্স সফরে গিয়েছিলেন। আর সেখানে গিয়ে তো তিনি দেশের সমস্ত অবস্থাই জানতে চেয়েছিলেন। ফলে আমরা যে প্রথম বিশ্বের দেশ, সেটা ভান করার কোনও প্রয়োজন ছিল না।”

সরকারের এমন উদ্যোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। কেউ কেউ তো এই উদ্যোগের তীব্র নিন্দাও করেছেন। সে-সবের উত্তর দিতে গিয়ে সোলিমান বলেন, “আমরা কখনওই দারিদ্র্য গোপন করতে পারি না। কারণ এখানে এসে পোপ প্রথমেই সমুদ্রের ধারের ঝুপড়ি এবং কুঁড়েঘরগুলি দেখেছিলেন।”

বিতর্ক তবু থেকেই যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমের অন্য একটি অংশের প্রতিবেদনে। পোপের সফর শুরুর আগেই ব্রিটিশ এক সংবাদপত্রে অভিযোগ উঠে আসে, ফুটপাথ সাফ করতেই শতাধিক দরিদ্র শিশুকে তুলে নিয়ে গিয়ে বন্দি অবস্থায় রাখা হয় চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের সঙ্গে একই খাঁচায় রেখে তাদের উপর অকথ্য অত্যাচার হয় বলেও অভিযোগ। সংবাদপত্রটির সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে সেই নির্যাতনের কথা স্বীকার করে এক সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিও। সেই সব ছবিও পেশ করা হয় প্রতিবেদনে।

গত এপ্রিলেই ফিলিপিন্স সফরে এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। প্রশাসন তখনও এ ভাবেই ফুটপাথ সাফাই করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন