জিন্না আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলার পর কাটেনি ৪৮ ঘণ্টাও। তার মধ্যেই ফের আক্রান্ত হল করাচির বিমানবন্দর চত্বর। এ বার হানার নিশানায় ছিল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষীদের (এএসএফ) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সংলগ্ন হস্টেল। মঙ্গলবারের এই হামলার দায়ও স্বীকার করে নিয়েছে তেহরিক-ই-তালিবান। টুইটারে এ দিন তালিবানের মুখপাত্র ওমর খোরাসানি দাবি করেছেন, মঙ্গলবারের হামলাও সফল হয়েছে। পাশাপাশি হামলার তীব্রতা এর পর বাড়বে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে তালিবানের তরফে।
মঙ্গলবার বেলা একটা নাগাদ পহেলওয়ান গোঠ এলাকায় এএসএফের দু’নম্বর শিবিরে বাইকে চেপে হামলা চালায় সশস্ত্র জঙ্গিরা। সেই সময় সেখানে ডিউটিতে ছিলেন দুই মহিলা নিরাপত্তা রক্ষী। মোট কত জন জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল তা-ও ঠিক জানা যায়নি এখনও। কোনও কোনও সূত্রের দাবি, আক্রমণ চালিয়েছিল চার থেকে সাত জন। আবার অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, মাত্র দু’জন হামলা চালিয়েছিল এ দিন। পাক পুলিশ সূত্রের দাবি, এএসএফ শিবিরের ভিতর ঢোকার চেষ্টা করছিল তারা। তখনই শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ। পাশেই ঘন জনবসতিপূর্ণ গুলিস্তান-ই-জওহর এলাকা। ক্রমাগত গোলাগুলির শব্দ ছাড়াও পর পর বিস্ফোরণের আওয়াজে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সেখানকার বাসিন্দারা। সাময়িক ভাবে তাঁদের ঘর ছেড়ে বেরোতে নিষেধও করা হয়। উপস্থিত নিরাপত্তা রক্ষী এবং পুলিশের সঙ্গে গুলিযুদ্ধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় জঙ্গিরা। যে বাইকে চেপে এসেছিল, তাতে করেই পালিয়ে যায় তারা। ওই জঙ্গিদের পিছু ধাওয়া করে পাকিস্তানি রেঞ্জার্স। কিছু পরেই ইন্টার-সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)-এর মুখপাত্র আসিম বাজওয়া টুইট করেন, “এএসএফ শিবিরের কাছে তিন-চার জন জঙ্গি গুলি চালিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে কোথাও ঢুকতে পারেনি। তাদের খোঁজ চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই।”
এই ঘটনার পর একটি সূত্র দাবি করে, পাঁচ জন নিহত হয়েছে এ দিনের হামলায়। যদিও পাক প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে, মঙ্গলবারের সংঘর্ষে কেউ হতাহত হননি।
এ দিন দুপুরে এএসএফের যে ক্যাম্পে হামলা হয়েছিল সেটি বিমানবন্দর লাগোয়া। তাই গোলাগুলি শুরু হতেই বন্ধ করে দেওয়া হয় বিমান চলাচল। আটকে দেওয়া হয় বিমানবন্দরগামী রাস্তাগুলিও। কিছু পরেই অবশ্য স্বাভাবিক হয়ে যায় পরিস্থিতি। শুরু হয় বিমান চলাচলও।
এ দিনও বিমানবন্দরে চলছিল আগের দিনের জঙ্গি হানার সব ধরনের চিহ্ন মুছে ফেলার কাজ। রবিবার রাতে সংঘর্ষের জেরে আগুন লেগে গিয়েছিল কার্গো বিল্ডিংটিতে। গোলাগুলির আওয়াজ শুনে তার ভিতরেই আশ্রয় নিয়েছিলেন ওই বিভাগের কর্মীরা। আগুন লাগার পর আর বেরিয়ে আসতে পারেননি তাঁরা। মঙ্গলবার সকালে ওই কার্গো বিল্ডিং থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও সাতটি দেহ। এমন ভাবে পুড়ে গিয়েছে দেহগুলি যে পরিচয় জানা যায়নি এক জনেরও। এই সাতটি দেহ উদ্ধারের পর রবিবারের জঙ্গি হানায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৬। এখনও বিমানবন্দরের বহু কর্মী নিখোঁজ। বহু কর্মীর পরিবারের অভিযোগ, সোমবার সংঘর্ষ শেষ হওয়ার অনেক পরে শুরু করা হয় উদ্ধারের কাজ। নিখোঁজদের পরিবারের তরফে এ দিন পথ অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখানো হয়। সিন্ধু প্রদেশের গভর্নর ইশরাত উল ইবাদ খান তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন, উদ্ধারকার্যে গাফিলতির অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।